বিপত্তি: গোলপার্কে এই ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী বোর্ডের জন্য অসুবিধায় পড়ছেন গড়িয়াহাট উড়ালপুল থেকে নামা গাড়ির চালকেরা। নিজস্ব চিত্র
হঠাৎ আলোর ঝলকানিতে ধাঁধিয়ে যাচ্ছে চোখ! যার জেরে কলকাতার পথে অনেক গাড়িচালকই যখন-তখন বিপদে পড়ছেন বলে অভিযোগ। যদি সেই গাড়ির গতি বেশি থাকে, তা হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে বড়সড় দুর্ঘটনাও ঘটে যেতে পারে বলে আশঙ্কা চালকদের অনেকেরই। সব জেনেও পুলিশ অবশ্য বলছে, প্রথামাফিক অভিযোগ জমা পড়ছে না। তাই জেনেও বন্ধ করা যাচ্ছে না ওই ‘আলোর তাণ্ডব’! শুধু ওই আলো নয়, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো ডিজিটাল বোর্ডও চালকদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে বলে অভিযোগ। ওই স্ক্রিনের জন্যও দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা অনেকের।
গত জানুয়ারিতে বিয়ের মরসুমের এক সন্ধ্যায় মা উড়ালপুল ধরে বাইপাসের দিক থেকে পার্ক সার্কাসের দিকে যাচ্ছিলেন হাওড়ার গোলাবাড়ির বাসিন্দা সুখেন্দু চৌধুরী। পাশে বসে স্ত্রী নন্দিতা। পিছনে বছর পনেরোর মেয়ে। কিছু দূর এগোতেই হঠাৎ জোরে ব্রেক কষতে হয় সুখেন্দুবাবুকে। দ্রুত গতিতে থাকা তাঁদের গাড়ি উড়ালপুলের বাঁ দিকের রেলিংয়ে ধাক্কা মেরে কোনও মতে দাঁড়িয়ে যায়। সামনের গাড়ি হঠাৎ ব্রেক কষায় গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে পিছনের গাড়িটি সুখেন্দুবাবুর গাড়িতে সজোরে ধাক্কা মারে। আরও কিছুটা এগিয়ে গিয়ে থামে সুখেন্দুবাবুর গাড়ি। তত ক্ষণে সেই গাড়ির এয়ারব্যাগ খুলে গিয়েছে। আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে বছর পনেরোর মেয়ে।
অল্পের জন্য বড় বিপদ এড়ানো সুখেন্দুবাবু বলেন, ‘‘দেখতেই পাইনি। হঠাৎ একটা আলো এসে চোখে পড়ল। সব ধাঁধিয়ে গিয়েছিল।’’ দেখা যায়, উড়ালপুলের নীচেই সায়েন্স সিটি সংলগ্ন ময়দানে অনুষ্ঠান চলছে। প্রবল শব্দে বক্স বাজানোর সঙ্গেই জ্বালানো হচ্ছে লেজ়ার আলো। সেই আলোই উড়ালপুল ও তার আশপাশের বাড়ির দেওয়ালে আঁকিবুকি কেটে যাচ্ছে!
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
এমনিতেই মাঞ্জা সুতোর জেরে মা উড়ালপুল ধরে মোটরবাইক চালানো বিপজ্জনক। তার মধ্যে এমন আলো বিপদের আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। হাওড়ার বাসিন্দা শান্তনু গঙ্গোপাধ্যায় নামে এক ব্যক্তি জানান, গত ফেব্রুয়ারিতে অফিস থেকে ফেরার পথে মা উড়ালপুলে তাঁর গালের বেশ কিছুটা অংশ কেটে যায় মাঞ্জা সুতোয়। মুখে বাঁধা তাঁর রুমালও দু’টুকরো হয়ে যায়। তিনি বলেন, ‘‘সে দিন মাঞ্জা সুতোয় আমার বড় বিপদ হয়ে যেতে পারত। লেজ়ার আলোতেও ওই ধরনের বিপদে পড়েছিলাম। কোনও মতে দাঁড়িয়ে না পড়লে কী হত জানি না।’’ কারও কারও আবার অভিযোগ, বৃষ্টির সময়ে মাঝেমধ্যেই মা উড়ালপুলের উপরে বাতিস্তম্ভের আলো বন্ধ হয়ে যায়। তখন উড়ালপুলের গায়ে পেঁচানো নীল আলোর তারগুলি স্রেফ জ্বলতে থাকে। বৃষ্টির মধ্যে মোটরবাইক আরোহীদের জন্য সে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়।
মা উড়ালপুলের পাশাপাশি কলকাতার রাস্তায় অন্য এক ধরনের আলোতেও অসুবিধা হওয়ার কথা জানাচ্ছেন গাড়ির চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, গোলপার্কের কাছে একটি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনী বোর্ড লাগানো রয়েছে। সন্ধ্যার পরে সেই বোর্ডের উজ্জ্বল আলোয় বেকায়দায় পড়ছেন গড়িয়াহাট সেতু থেকে গোলপার্কের দিকে নামা গাড়ির চালকেরা। ওই রকম বোর্ড রয়েছে ই এম বাইপাসের রুবি মোড়ের কাছেও। সেখানে মেট্রো প্রকল্পের কাজ চলায় হঠাৎ রাস্তা বাঁক নিয়েছে। কোনও ভাবে বাঁকের সামনে চোখে ওই রকম আলো পড়লে স্টিয়ারিং নিয়ন্ত্রণ করাই শক্ত হয়ে দাঁড়ায় বলে অভিযোগ অনেকের। একই রকম ডিজিটাল বোর্ড রয়েছে চাঁদনি চকেও। তবে সেই আলো সরাসরি গাড়িচালকদের চোখে পড়ছে না। সেন্ট্রাল ডিভিশনের এক ট্র্যাফিক গার্ডের আধিকারিক বলছেন,
‘‘এখানে তো কোনও সেতু বা বাঁক নেই। ফলে সরাসরি আলো পড়ে না। কিন্তু অন্য জায়গাগুলিতে সমস্যা হওয়া অসম্ভব নয়।’’
ওই ট্র্যাফিক আধিকারিকের সুরেই কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি সন্তোষ পাণ্ডে বলছেন, ‘‘সায়েন্স সিটির কাছে ও রকম কিছু লেজ়ার আলো ব্যবহার করা হয়। হঠাৎ আলো পড়লে গাড়িচালকদের সমস্যা হতে পারে ঠিকই। তবে এ রকম কোনও অভিযোগ জমা পড়েছে বলে তো মনে পড়ে না।’’ সমস্যা হতে পারে জেনেও কি তবে অভিযোগ দায়ের হওয়ার অপেক্ষা করবে পুলিশ? এ প্রশ্নের অবশ্য উত্তর মেলেনি ট্র্যাফিককর্তাদের কাছে।