বিশ্বের সর্বোচ্চ স্কাইস্ক্রেপার আবাসন দুবাইয়ের ‘প্রিন্সেস টাওয়ার’-এর সঙ্গে এ বার শহর কলকাতার সূক্ষ্ম যোগসূত্র তৈরি হচ্ছে।
৪১৪ মিটারের বেশি উঁচু ১০১ তলা প্রিন্সেস টাওয়ার নির্মাণে যুক্ত অ্যারাবিয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানির হাতেই তৈরি হচ্ছে কলকাতার সবচেয়ে উঁচু স্কাইস্ক্রেপার‘দ্য ফর্টি টু’, যে-সংস্থা তৈরি করছে মুম্বইয়ের ১১৭ তলা বাড়ি ‘ওয়ার্ল্ড ওয়ান’।
দুবাই ও মুম্বই। দুই শহরের সঙ্গেই জড়িয়ে বিলাস-বৈভবের উঁচু উঁচু স্তম্ভ। যে দু’টি শহরে প্রিন্সেস টাওয়ার ও ওয়ার্ল্ড ওয়ান প্রত্যাশিত। কলকাতায় তা ভাবা যেত না বলেই সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
আর এই চ্যালেঞ্জকেই বাজি করে কলকাতায় ৬০ তলা বাড়ি তৈরি করতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ঢালছে ‘দ্য ফর্টি টু’-র প্রধান নির্মাতা মণি গোষ্ঠী, যারা বরাত দিয়েছে অ্যারাবিয়ান কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে। সঙ্গে রয়েছে এ রাজ্যের ও ভিন্ রাজ্যের আরও তিনটি নির্মাণ সংস্থা। মণি গোষ্ঠীর দাবি, এখনও পর্যন্ত এই চূড়ান্ত বিলাসবহুল বাড়ি কেনার জন্য যে-সাড়া পাওয়া গিয়েছে, তাতে বাজি জেতার ক্ষেত্রে সংশয় নেই।
বাজিমাত করার জন্য এই বাড়ির ঠিকানাই যথেষ্ট বলে মনে করছেন বিজ্ঞাপন গুরু রাম রায়। যে-ঠিকানা এই বাড়ির নাম। তৈরি হচ্ছে ৪২বি চৌরঙ্গি রোডে সাড়ে তিন একর জুড়ে। যার জানলা ও বারান্দা থেকে দেখা যাবে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, ফোর্ট উইলিয়াম ও হুগলি নদী। সঙ্গে যত দূর চোখ যায় গালিচা বিছিয়ে রয়েছে ময়দানের সবুজ। রাম রায় বলেন, ‘‘শহরের প্রাণকেন্দ্রে ৮ হাজার বর্গ ফুটের বাংলো বাড়ির মালিক হওয়া এক অর্থে শহরের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে ওঠা।’’ তাঁর দাবি, এই বাড়ির ‘সেলসম্যান’ বাড়িটা নিজেই। বিপণন এখানে নেহাতই বাহুল্য বলে তিনি মনে করেন। বরং এই বাড়িটাই হয়ে উঠবে শহরের নতুন প্রতীক।
শুধুই সৌন্দর্য ও বৈভবের প্রতীক নয়। ২৪৫ মিটার উঁচু দ্য ফর্টি টু প্রযুক্তির নিরিখেও এ শহরে তুলনাহীন বলে দাবি মণি গোষ্ঠীর প্রধান সঞ্জয় ঝুনঝুনওয়ালার। তিনি বলেন, ‘‘এত উঁচু বাড়ি তৈরির ক্ষেত্রে হাওয়ার গতিবেগ ও তীব্রতার মোকাবিলা করাটা জরুরি। তার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে বাড়িটির কাঠামো।’’ কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার দু’টি সংস্থা এই রিপোর্ট তৈরি করেছে। তা অনুমোদন করেছে মুম্বই আইআইটি ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। প্রযুক্তির পাশাপাশি বাড়ির নকশাতেও আছে নতুনের ছোঁয়া। এ দেশের বিশিষ্ট স্থপতি হাফিজ কনট্রাক্টরের নকশায় তৈরি হচ্ছে এটি, যেখানে রয়েছে ‘স্কাই ব্যালকনি’। প্রতিটি বাংলো অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দার উচ্চতা তিন তলা। অর্থাৎ প্রতিটি বারান্দার তিন তলা উপরে থাকবে আর একটি বারান্দা।
৬০ তলা এই বাড়ির প্রথম বাংলো ১৫ মিটার উচ্চতা থেকে শুরু হবে। ঢুকেই থাকবে চার তলা সমান উঁচু লবি। এই রাজকীয় নকশার সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি হচ্ছে ‘মাল্টি লেভেল পার্কিং’। যাতে থাকছে ৪২৫টি গাড়ি রাখার জায়গা, যা শুধু বাসিন্দাদের জন্য। অতিথিদের গাড়ি রাখার জায়গা ভিন্ন। ছাদে শুধু বাসিন্দাদের ব্যবহারের জন্য থাকবে ক্লাব।
বাড়ি শেষ হতে বাকি আরও বছর আড়াই। ৮টি বাংলো ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়ে গিয়েছে। মণি গোষ্ঠীর দাবি, ১৬-২৫ কোটি টাকা দামের এক একটি বাংলোর জন্য এই ঠিকানায় আসার চাহিদা এ শহরেই আছে। পুরনো সাহেব পাড়ায় দ্বারভাঙার মহারাজার এই সাবেক বাড়ি তাই এখন নতুন করে রাজকীয় ঠিকানা হয়ে ওঠার অপেক্ষায়।