হাওড়ার লিলুয়া হোম নিয়ে উদ্বিগ্ন কলকাতা হাইকোর্ট। সেখানকার আবাসিকদের নিরাপত্তা, তাঁদের চিকিৎসা ও অন্য সুযোগ-সুবিধার কী ব্যবস্থা রয়েছে, তিন সপ্তাহের মধ্যে তার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দিতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
গত সপ্তাহে মহিলাদের ওই হোমে মানসিক প্রতিবন্ধী এক নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় সেখানকার কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে জনস্বার্থে একটি মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। সেই মামলার শুনানিতেই হাইকোর্ট সরকারের কাছ থেকে ওই রিপোর্ট চেয়ে পাঠাল।
জনস্বার্থে ওই মামলাটি দায়ের করেছেন হাইকোর্টের আইনজীবী তাপস ভঞ্জ। বৃহস্পতিবার তিনি জানিয়েছেন, গত দু’দশক ধরে লিলুয়া হোমের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানাবিধ অভিযোগ উঠছে। হোমের আবাসিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
তাপসবাবুর দাবি, সম্প্রতি ওই হোমের এক কর্মীর বিরুদ্ধে সেখানকার এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। তার পরে নড়েচড়ে বসে জেলা প্রশাসন। অভিযুক্ত কর্মীকে গ্রেফতারও করা হয়। ওই অভিযুক্তের বিচারও শুরু হয়েছে। কিন্তু বারবার কেন ওই হোমের বিরুদ্ধে আবাসিকদের অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠবে, মূলত সেই প্রশ্ন তুলে আদালতে জনস্বার্থে মামলা দায়ের করেছেন ওই আইনজীবী।
গত ১৭ মার্চ এই মামলার শুনানি ছিল হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রে ও বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তীর ডিভিশন বেঞ্চে। ২০০৫ সালে কলকাতা হাইকোর্টের একটি নির্দেশের উল্লেখ করে তাপসবাবু জানিয়েছিলেন, ওই সময়েও লিলুয়া হোমের আবাসিকদের উপরে নজর রাখার জন্য রাজ্যকে নির্দেশ দিয়েছিল এই আদালত। আবাসিকদের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
তাপসবাবুর দাবি, কোনও অবস্থাতেই যাতে মহিলাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ বা যৌন হেনস্থা করা না হয়, তার নির্দেশ ১২ বছর আগেই দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। বলা হয়েছিল, মহিলাদের সঙ্গে হোমের পুরুষ কর্মীরা কী ধরনের ব্যবহার করছেন, তার নিয়মিত নজরদারির প্রয়োজন। মানবাধিকার কমিশন যাতে নিয়মিত পরিদর্শন করে, সেখানকার আবাসিকদের সঙ্গে যাতে মানবাধিকার কমিশনের লোকজন ঘনঘন যোগাযোগ রাখেন, তা-ও নির্দিষ্ট করে বলা হয় ২০০৫ সালের ওই নির্দেশে।
এ বার আদালতে আইনজীবী তাপসবাবু অভিযোগ করেন, এত কিছুর পরেও বারবার অভিযোগ উঠেছে লিলুয়া হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ চান ওই আইনজীবী। তিনি বলেন, আদালত হোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। ডিভিশন বেঞ্চে সরকারি কৌঁসুলি অমিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নাবালিকাকে ধর্ষণের ঘটনায় হোমের এক কর্মীর বিরুদ্ধে তদন্ত শেষ করে তাঁকে গ্রেফতার করে বিচার শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারি কৌঁসুলি জানিয়েছেন, তিনি ওই হোম নিয়ে আদালতকে বিস্তারিত রিপোর্ট দেবেন।