গর্ভপাতের অনুমতি দিল না হাইকোর্ট

ভ্রূণের জটিলতা থাকায় বেলেঘাটার বাসিন্দা এক তরুণী গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর আদালতে শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী ও শিশু-রোগ বিভাগের প্রধানেরা জানালেন, ২৫ সপ্তাহের ওই অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাত করানো উচিত নয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:৩৩
Share:

ভ্রূণের জটিলতা থাকায় বেলেঘাটার বাসিন্দা এক তরুণী গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। বিচারপতি তপোব্রত চক্রবর্তীর আদালতে শুক্রবার সেই মামলার শুনানিতে এসএসকেএম হাসপাতালের স্ত্রী ও শিশু-রোগ বিভাগের প্রধানেরা জানালেন, ২৫ সপ্তাহের ওই অন্তঃসত্ত্বার গর্ভপাত করানো উচিত নয়। তা শুনে বিচারপতি মহিলার আইনজীবী অপলক বসুকে নির্দেশ দেন, গর্ভপাত না করানোর পক্ষে এসএসকেএমের মেডিক্যাল বোর্ড যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, তা অন্তঃসত্ত্বাকে ভাল করে বোঝাতে। আগামী সোমবার মামলার পরবর্তী শুনানি ধার্য করেছেন বিচারপতি।

Advertisement

এ দিন মামলার শুনানিতে মেডিক্যাল বোর্ডের রিপোর্ট আদালতে পেশ করেন রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার। একই সঙ্গে তিনি জানান, এসএসকেএমের স্ত্রী ও শিশু-রোগ বিভাগের প্রধানেরা আদালতে উপস্থিত আছেন। রিপোর্ট পড়ে বিচারপতি অভ্রতোষকে জানান, তিনি দুই প্রধানের সঙ্গে একান্তে কথা

বলতে চান।

Advertisement

সূত্রের খবর, এজলাসে বিচারপতির সামনে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধানেরা জানান, মহিলার গর্ভস্থ ভ্রূণ বেঁচে রয়েছে। ভ্রূণের যা বয়স, তাতে এখন গর্ভপাত করানো হলে শিশুটি অপরিণত অবস্থায় পৃথিবীর আলো দেখবে এবং তার জীবনে একাধিক প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। তা ছাড়া, মহিলা চোদ্দো বছর আগে ‘সিজারিয়ান’ পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তখন ওই পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব না হলে এখন ‘সাকশান’ পদ্ধতিতে সন্তান প্রসব করানো যেত। কিন্তু আর তা করা সম্ভব নয়। দুই চিকিৎসক আরও জানান, মহিলার গর্ভস্থ ভ্রূণের ক্রোমোজোমে যে জটিলতা আছে, তাতে ‘ডাউন সিন্ড্রোম’ নিয়ে সন্তান জন্মাবে ঠিকই, কিন্তু সে বেঁচে থাকবে। তবে যা যা জটিলতা থাকলে কোনও ভ্রূণকে গর্ভপাত করিয়ে বার করা আইনসম্মত, ‘ডাউন সিন্ড্রোম’ ভ্রূণ সেই তালিকায় পড়ে না। চিকিৎসকেরা আরও জানান, ডাউন সিন্ড্রোম থাকা শিশু ভাল পরিচর্যা পেলে, সাধারণের সঙ্গে মিশলে সুস্থ জীবন কাটাতে পারে। এর পরেই অভ্রতোষ আদালতে জানান, ভ্রূণের জীবন থাকলে তারও বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে।

মহিলার আইনজীবী আদালতের কাছে জানতে চান, তাঁর মক্কেল দ্বিতীয় কোনও মেডিক্যাল বোর্ডের মত নিতে পারেন কি না। অভ্রতোষ জানান, তা সম্ভব নয়। কারণ, এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানদের সুচিন্তিত মতামতের উপরে ভরসা না করে থাকা যায় না।

মহিলার আইনজীবী আরও জানান, তাঁর মক্কেলের স্বামীর আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই। তিনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। জন্মের পরে শিশুটি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হলে স্বামীর পক্ষে তার চিকিৎসা করানো সম্ভব না-ও হতে পারে। ওই আইনজীবী গর্ভপাত সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের কয়েকটি রায় এ দিন পেশ করে জানান, মহিলার সঙ্গে কথা বলে তিনি পরবর্তী শুনানির দিন

সওয়াল করবেন।

১৯৯৯ সালে ওই মহিলার বিয়ে হয়। তাঁর চোদ্দো বছরের একটি মেয়ে আছে। গত সেপ্টেম্বরে তিনি পুনরায় অন্তঃসত্ত্বা হন। নভেম্বর মাসে চিকিৎসক তাঁর রক্ত পরীক্ষা করিয়ে জানতে পারেন, গর্ভস্থ ভ্রূণে জটিলতা তৈরি হয়েছে। পরে সেই জটিলতা বাড়ে। মহিলা জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁরা ২৫ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বাকে গর্ভপাত করাতে রাজি হননি। এর পরেই হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ওই মহিলা।

এর আগে যোধপুর পার্ক সংলগ্ন রহিম ওস্তাগর রোডের বাসিন্দা, ২৪ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা এক মহিলাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। এসএসকেএম-এর মেডিক্যাল বোর্ড আদালতে জানিয়েছিল, ওই মহিলার গর্ভের ভ্রূণ স্বাভাবিক নয়। ভ্রূণের মস্তিষ্কে জল জমেছে। জন্মের পরে তাঁর সন্তানের মৃত্যু হতে পারে। নয়ত তার প্রতিবন্ধকতা থাকবে। ওই মহিলার গর্ভপাত করানো জরুরি এবং তাতে মহিলার জীবনের সংশয় নেই বলেও জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন