শান্ত থাকুক শব্দদানব

গত কয়েক বছরে এ শহরেও বেড়েছে গণেশ পুজোর সংখ্যা। তবু তো তার আকার দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো নয় এখনও। অথচ রবিবার সেই পুজোর বিসর্জনেই শব্দদানবের তাণ্ডব রোখা গেল না।

Advertisement

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ অগস্ট ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

দৌরাত্ম্য: চোখ ধাঁধানো আলোর সঙ্গে তারস্বরে ডিজে। রবিবার রাতে, উত্তর কলকাতায় গণেশ পুজোর বিসর্জনে। ছবি: শৌভিক দে

সেমিফাইনালেই যদি এই হাল হয়, ফাইনালে তবে কী হবে! গণেশ পুজোর বিসর্জনের ডিজে-তাণ্ডবে অতিষ্ট শহর সে চিন্তাতেই রীতিমতো আতঙ্কে।

Advertisement

গত কয়েক বছরে এ শহরেও বেড়েছে গণেশ পুজোর সংখ্যা। তবু তো তার আকার দুর্গাপুজো, কালীপুজোর মতো নয় এখনও। অথচ রবিবার সেই পুজোর বিসর্জনেই শব্দদানবের তাণ্ডব রোখা গেল না। তা হলে দুর্গাপুজো, কালীপুজোয় আরও কত গুণ বেশি হবে শব্দের দাপট? আশঙ্কায় শহরবাসী।

এ দিন সন্ধ্যা থেকে শুরু করে রাতভর নিষিদ্ধ ‘ডিজে বক্স’ (আদতে বিশাল সাউন্ড বক্স) বাজিয়েই শহর জুড়ে চলেছে বিসর্জনের শোভাযাত্রা। আইন বলছে, এ রাজ্যে ডিজে বাজানো নিষিদ্ধ। দেখামাত্রই তা বাজেয়াপ্ত করার কথা পুলিশ-প্রশাসনের। কিন্তু আমজনতার অভিজ্ঞতা, নিয়ম শুধু কাগজে-কলমেই। আদতে দুর্গাপুজো, কালীপুজো, ছটপুজো এমনকী সরস্বতী পুজোতেও ডিজের রমরমা চলছে। পুলিশ-প্রশাসনের সামনেই বিকট শব্দে গান বাজিয়ে নাচানাচি চললেও কিছুই বলা হয় না। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ডিজে বাজালে কড়া পদক্ষেপ করতে বলেছেন। কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।

Advertisement

শহরে রবিবার রাতের অভিজ্ঞতা কেমন?

গড়িয়াহাটের এক বাসিন্দা জানান, মাঝরাতে কান ফাটানো শব্দে কেঁপে যাচ্ছিল বুক। কান ভোঁ-ভোঁ করছিল। জানলা-দরজা বন্ধ করেও শব্দের হাত থেকে নিস্তার মেলেনি। কসবায় এক গৃহবধূ অসুস্থ
শাশুড়িকে নিয়ে সারারাত আতঙ্কে ছিলেন। কার্যত ইষ্টনাম জপতে জপতে রাত কাটিয়েছেন তিনি। নিমতলার কাছে এক গণেশপুজো কমিটির কর্তাদের ডিজে নিয়ে প্রশ্ন করতেই জবাব এল, ‘‘কৌন বোলা ইয়ে ইললিগ্যাল হ্যায়? গণপতি পূজা মে সব লিগ্যাল হ্যায়।’’

শহরের নামী দুর্গাপুজো কমিটিগুলি কিন্তু ‘ডিজে’-র বিরুদ্ধে। সকলেরই এক সুর, বিসর্জনে শুধু ঢাক-ঢোলই বাজানো হয়। কিন্তু এমন অনেক ছোট মাপের পাড়ার পুজো আছে যারা ঢাক-ঢোলে বেশি
টাকা খরচ করতে পারে না। তুলনামূলক কম খরচে ‘শব্দদানব’ ভাড়া করেন উদ্যোক্তারা। কলকাতায় পুজো কমি়টিগুলির যৌথ সংগঠন ‘ফোরাম ফর দুর্গোৎসব’–এর সভাপতি পার্থ ঘোষ বলছেন, ‘‘আমরা এ ব্যাপারে সব সময়েই সচেতন করি। তবে এই উপদ্রব রুখতে পুলিশ-প্রশাসনকে কড়া হতে হবে।’’ তাঁর বক্তব্য, শুধু দুর্গাপুজো কেন, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো— সব উৎসবেই ‘ডিজে’-র উৎপাত বন্ধ করা উচিত।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক কর্তা বলছেন, ‘ডিজে’ দেখলে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে চিঠি দেওয়াই আছে। পর্ষদের নিজের লোকবল না থাকায় তাঁরা রাস্তায় নেমে ধরপাকড় করতে পারেন না। পুলিশের অবশ্য বক্তব্য, বিসর্জনে ‘ডিজে’ দেখলেই বাজেয়াপ্ত করা হয়। গণেশপুজোর ক্ষেত্রে তবে ছাড় দেওয়া হল কেন?

পুলিশের একাংশের বক্তব্য, গণেশপুজো নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থাপনাই নেই। তা ছাড়া শাসকদলের বহু নেতা পুজোগুলিতে জড়িত। ফলে থানাগুলিও এতে নজর দেয়নি।

মুখ্যমন্ত্রী নিজে শব্দদূষণ রোখার কথা বললেও তাঁর দল সে কথায় কান দেয় কি না, প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। তাঁরা বলছেন, সোমবার তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবসের মিছিলেও সাউন্ড বক্স বেজেছে। এনআরএস হাসপাতাল, মেডিক্যাল কলেজের মতো ‘সাইলেন্স জোন’-ও ছাড় পায়নি।

তাই প্রশ্ন উঠছে, মুখ্যমন্ত্রী যতই বলুন, শারদোৎসবে শব্দদানবের দাপট কি সত্যিই রোখা যাবে? পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘আইন দিয়ে সব হয় না। তাই আমরা সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন