আগ্রহী: শহরের একটি সামার ক্যাম্পে কচিকাঁচারা। ফাইল চিত্র
পছন্দের কাজ নিয়েই গরমের ছুটির সময়টা কাটানোর ইচ্ছে ছিল ছেলের। তাই মা যোগাযোগ করেছিলেন কয়েকটি সংস্থায়, যারা এই ছুটিতে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য আয়োজন করে সামার ক্যাম্পের। কিন্তু ফোন করে জানতে পারলেন, ক্যাম্পে নাম লেখানো শুরু হওয়া মাত্রই ভরে গিয়েছে প্রায় সবক’টি আসন! শেষমেশ একটি মাত্র ফাঁকা জায়গা মেলে ভূগোল ও জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ের ক্যাম্পে।
শহরের বেশির ভাগ স্কুলেই মে মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে গরমের ছুটি চলে জুনের মাঝামাঝি পর্যন্ত। সেই সময়ে বেশ কিছু সরকারি-বেসরকারি সংস্থা পড়ুয়াদের জন্য আঁকা, বিজ্ঞান কর্মশালা, বিভিন্ন জিনিস তৈরি, বই পড়া, গল্প লেখার বা গল্প পাঠের মতো নানা আসরের আয়োজন করে, যার পোশাকি নাম সামার ক্যাম্প। আয়োজক সংস্থাগুলি জানাচ্ছে, গত চার-পাঁচ বছরে এই ধরনের ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে বেশ কয়েক গুণ। গরমের ছুটি পড়ার অনেক আগে থেকেই খোঁজখবর শুরু করে দিচ্ছেন অভিভাবকেরা। অন্যদের মুখে ক্যাম্পের কথা শুনেও আসছেন অনেকে। বিড়লা ইন্ড্রাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়াম কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, চলতি বছরে ক্যাম্পের জন্য নাম নথিভুক্তি শুরু হওয়ার দিনেই ভরে গিয়েছিল ৫০ শতাংশ আসন! ইতিমধ্যে বাকি সবক’টি আসনও ভরে গিয়েছে। তবে তার পরেও আগ্রহীদের থেকে নিয়মিত ফোন পাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়েই নিরাশ করতে হচ্ছে তাঁদের।
মূলত পশ্চিমী দেশগুলি থেকে ধার করা হয়েছে এই সামার ক্যাম্পের বিষয়টি। শীতপ্রধান দেশে গরমের আরামদায়ক আবহাওয়ায় শিশুদের নানা উপভোগ্য কাজে ব্যস্ত রাখাই উদ্দেশ্য থাকে এমন সামার ক্যাম্পগুলির। কিন্তু এ দেশের তীব্র গরমে এই ক্যাম্প আয়োজনের কারণ? বালিগঞ্জের মেকার্স লফ্ট সংস্থার তরফে জানানো হচ্ছে, সারা বছরই তাঁরা নানা ধরনের ক্যাম্প করে থাকেন। কিন্তু পুজো বা শীতের ছুটির তুলনায় গরমের ছুটি বেশি দিনের হওয়ায় এই সময়েই চাহিদা থাকে সবচেয়ে বেশি। কসবার ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর এক পড়ুয়ার মা দিঠি চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘পুজোর ছুটিটা তো নানা উৎসবের মধ্যেই কেটে যায়। মেয়ে স্কুলে খেলাধুলো ও হস্তশিল্পের মতো কাজে ব্যস্ত থাকার সুযোগ পায়। কিন্তু টানা ছুটিতে ঘরে থাকলে ও অনেক সময়েই অস্থির হয়ে পড়ে। তাই ওর পছন্দমতো আঁকা বা গল্প বলার আসরে নিয়ে যাই। অন্য শিশুদের সঙ্গে খুব ভাল সময় কাটে।’’
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
তবে শুধু সন্তানকে আকর্ষক কাজে যোগদানের সুযোগ করে দিতেই নয়, অনেক সময়ে নিরুপায় হয়েও সামার ক্যাম্পকে বেছে নিচ্ছেন অভিভাবকেরা। বাবা-মা কর্মরত, বাড়িতে শিশুকে দেখার মতো কেউ নেই, গরমের ছুটিতে খোলা থাকে না ক্রেশও। এই পরিস্থিতিতে সন্তানকে স্কুলের মতোই পরিবেশ দিতে সামার ক্যাম্পের দরজায় কড়া নাড়ছেন অনেক অভিভাবক। গোটা গরমের ছুটি জুড়ে একের পর এক ক্যাম্পে সময় কাটাচ্ছে শিশুরা। পঞ্চম শ্রেণির এক পড়ুয়ার মা বলেন, ‘‘গরমের ছুটির এক মাস কোথায় ছেলেকে রাখব বুঝতে পারি না। এই সময়ে দু’-এক দিনের বেশি অফিস থেকে ছুটি নেওয়াও সম্ভব হয় না আমাদের পক্ষে। ক্যাম্পে অন্তত ছেলে ওর বয়সী আর পাঁচ জনের সঙ্গে সময় কাটাতে পারে। নিঃসঙ্গতা কাটার পাশাপাশি বিভিন্ন জিনিস শেখারও সুযোগ পায়।’’
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট পরমিত সোনি জানাচ্ছেন, সামার ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার বেশ কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। শিশুরা স্কুলের প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের বাইরে, পড়াশোনা ছাড়া অন্য কাজে মেতে থাকার সুযোগ পায়। অন্য স্কুলের শিশুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব তৈরি, সামাজিক মেলামেশা, খেলাধুলো করার সুযোগও মেলে। যে অভিভাবকেরা কাজের চাপের জেরে সন্তানকে সময় দিতে পারছেন না, তাঁদের জন্য পরমিতের পরামর্শ, ক্যাম্পে পাঠানোর আগে কোন ধরনের কাজে সন্তান যোগ দিতে চাইছে, তা জেনে নিন। এ সব ক্ষেত্রে বাড়িতে একা থাকার চেয়ে শিশুরা ক্যাম্পে যোগ দিলে আখেরে তারা লাভবান হবে বলেই মত পরমিতের।