বড়দিনের মেট্রো সফরে সঙ্গী মশাও

প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানাচ্ছেন, মেট্রোর এসি ডাক্টের মধ্যে লুকিয়ে ছিল মশারা। বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজারের মধ্যে জোরে হাওয়া বইতেই হু-হু করে বেরিয়ে এসেছে তারা। যাত্রীদের মনের সুখে হুল ফুটিয়ে রক্ত চুষেছে। দু’-চারটে মশা যে চড়চাপ়ড় খেয়ে মরেনি এমন নয়।

Advertisement

অমিতাভ বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭ ০২:২০
Share:

বড়দিনের ভিড় ঠাসাঠাসি মেট্রো সবে বেলগাছিয়া স্টেশন ছেড়ে শ্যামবাজারের দিকে রওনা দিয়েছে। আচমকাই হানা দিল ওরা! ভিড়ে নাকাল যাত্রীরা চটাপট চড় কষানো তো দূর, নড়েও বসতে পারছেন না। কেউ কেউ হামলা থেকে বাঁচতে কোনও মতে হাত, মুখ নাড়াচ্ছিলেন। আর এমন অসহায় যাত্রীদের পেয়ে মনের সুখে উপদ্রব চালিয়ে যাচ্ছিল ‘হানাদারেরা’। শ্যামবাজারে দরজা খুললে জনা কয়েক হানাদার নেমে গেল বটে। কিন্তু বেশির ভাগই রয়ে গেল কামরার ভিতরে।

Advertisement

ওরা চোর-ডাকাত নয়, কিন্তু ওদের ভয়েই এখন থরহরি বাংলার আমজনতা। ওরা মশা!

সোমবার দুপুরে দমদম থেকে কবি সুভাষগামী এসি মেট্রোয় এমন মশার হামলাতেই জেরবার হলেন যাত্রীরা। কাকতালীয় ভাবে ওই কামরারই প্রতি দেওয়ালে ছিল মশা মারার স্প্রে-র বিজ্ঞাপন। যা দেখে এক রসিক যাত্রীর মন্তব্য, ‘‘বিজ্ঞাপনকে সার্থক করতে মেট্রো বোধ হয় এসি কামরায় মশার চাষ করেছে!’’

Advertisement

কোথায় ছিল এই মশককুল?

প্রত্যক্ষদর্শী যাত্রীরা জানাচ্ছেন, মেট্রোর এসি ডাক্টের মধ্যে লুকিয়ে ছিল মশারা। বেলগাছিয়া ও শ্যামবাজারের মধ্যে জোরে হাওয়া বইতেই হু-হু করে বেরিয়ে এসেছে তারা। যাত্রীদের মনের সুখে হুল ফুটিয়ে রক্ত চুষেছে। দু’-চারটে মশা যে চড়চাপ়ড় খেয়ে মরেনি এমন নয়। কিন্তু ওই হামলার সামনে তা গুনতিতেই আসে না। একের পর এক স্টেশন পার হয়েছে, পাল্লা দিয়ে চলেছে মশার কামড়। শুধু তাই নয়, নাকে-মুখে মশা ঢুকেও বেজায় অস্বস্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের।

অনেকেই বলছেন, ডেঙ্গি আতঙ্কের সময়ে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ঘটা করে টানেলে মশা মারার কথা জানিয়েছিলেন। এক কর্মী পিঠে মশা মারার তেলের ট্যাঙ্ক চাপিয়ে লাইনে ছিটোচ্ছেন, এমন সচিত্র বিজ্ঞাপনও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ দিনের অভিজ্ঞতার পরে যাত্রীদের বক্তব্য, লাইনে মশার বংশ হয়তো ধ্বংস করা হয়েছে। কিন্তু এসি ডাক্টের ভিতরেও যে মশা বেড়েছে, তা জানতে পারেননি মেট্রোর কর্তারা। ওই মশা ডেঙ্গির কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তা-ও যাত্রীদের প্রশ্ন, এগুলি যদি সত্যিই ডেঙ্গির মশা হয় তা হলে যাত্রীরা অসুস্থ হলে তার দায় কি মেট্রো নেবে? উত্তরে অবশ্য মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘‘এটা কোনও খবরই নয়। লেখার কী আছে?’’

রেলকর্তাদের একাংশ বলছেন, দূরপাল্লা ট্রেনের এসি কামরাগুলিতে ইয়ার্ডে পেস্ট কন্ট্রোলের কাজ করা হয়। তার সঙ্গে ট্রেনের প্রতি যাত্রায় কোচ অ্যাটেন্ডেন্ট থাকেন। তিনি নিয়মিত ৩-৪ ঘণ্টা অন্তর মশা মারার তেল স্প্রে করেন। মেট্রোর ক্ষেত্রে কোচ অ্যাটেন্ডেন্টের প্রয়োজন নেই। কিন্তু কারশেডে রক্ষণাবেক্ষণের সময়ে মশা মারা প্রয়োজন। এ ব্যাপারে মেট্রোর মুখপাত্রকে প্রশ্ন করা হলে তিনি দাবি করেছেন, ‘‘নোয়াপাড়া কারশেডে এক দিন অন্তর বাতানুকূল কামরায় ধোঁয়া দিয়ে মশা মারা হয়। এ জন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’’ তা সত্ত্বেও এমন কেন হল, সেটা খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে এক রেলকর্তার মন্তব্য, ‘‘নিয়মিত মশা মারার পরেও যদি এমন ঘটনা ঘটে, তা হলে রক্ষণাবেক্ষণ কেমন হচ্ছে সহজেই অনুমেয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement