রত্নার জয়ে দলেরই কৃতিত্ব, দাবি শোভনের। —ফাইল চিত্র।
রত্না চট্টোপাধ্যায়ের কাছে ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড হাতছাড়া হলেও তাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে নারাজ কলকাতার প্রাক্তন মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তাঁর দাবি, ১৩১ নম্বরও ওয়ার্ডে ব্যক্তি রত্না নন, জিতেছে তৃণমূল! ফলে তা রত্নার নয়, বরং তৃণমূলের জয়। পাশাপাশি, পুরভোটে জেতার জন্য রত্নার বিরুদ্ধে তাঁর পদবি ব্যবহার করার অভিযোগ তুলেছেন শোভন।
মঙ্গলবার কলকাতা পুরভোটের গণনার মাঝেই স্পষ্ট হয়ে যায়, বেহালা পূর্ব বিধানসভার এলাকায় গত ভোটে শোভনের জেতা ১৩১ নম্বর ওয়ার্ড ছিনিয়ে নিয়েছেন রত্না চট্টোপাধ্যায়। সেই রত্না, শোভনের কথায়, ‘‘যাঁর সঙ্গে গত তিন বছর ধরেই বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা চলছে।’’ ২০১৫ সালের পুরভোটে এ ওয়ার্ড ছিল শোভনের দখলে। তবে সেটি দখলে নেওয়ার পরও রত্নার দাবি, রেকর্ড ভোটে জিতেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে যা খবর, তাতে ১০ হাজার ২০৬ ভোটে জিতে গিয়েছি। রেকর্ড ভোটে জিতেছি। এই ওয়ার্ড থেকে এত ব্যবধানে এর আগে কেউ জেতেননি।’’ প্রসঙ্গত, গত ’১৫-তে এ ওয়ার্ডে ছ’হাজার ২৯৫ ভোটে জিতেছিলেন শোভন। তবে রত্নার এই দাবিকে গুরুত্ব দেননি তিনি। উল্টে ব্যক্তি রত্নার বদলে তাতে দলেরই কৃতিত্ব বেশি বলে মনে করেন। আনন্দবাজার অনলাইনের কাছে শোভন বলেন, ‘‘ব্যক্তি রত্না দেবী এবং তৃণমূলকে গুলিয়ে ফেলবেন না। যাঁরা জিতেছেন, তাঁরা তৃণমূলের প্রতিনিধি হিসাবেই জিতেছেন।’’
প্রসঙ্গত, পুরভোটে ১৩২ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের হয়ে তিন বার (১৯৮৫, ’৯০ ও ’৯৫ সাল) এবং তৃণমূলের প্রতীকে দু’বার (২০০০ ও ২০০৫ সাল) জিতেছেন শোভন। ওই ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ার পর ১৩১ নম্বর ওয়ার্ডে ( ২০১০ ও ’১৫) তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েও জেতেন তিনি। এ নিয়ে পুরভোটে নিজের জয়ের উদাহরণও টেনে এনেছেন শোভন। তাঁর কথায়, ‘‘একটা রাজনৈতিক দলের হয়ে বরাবর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। সে জয়ে সব সময় রাজনৈতিক দলেরই জয় হয়েছে বলে আমি মনে করি। ব্যক্তি শোভন শুধু প্রার্থী ছিল, প্রতীক ছিল। ১৩১ এবং বেহালা পূর্বেও তৃণমূলেরই জয় হয়েছে। রত্না দেবী নির্বাচনে জিতেছেন। তবে ১৩১ ওয়ার্ড এবং তার আগে বেহালা পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রেও তৃণমূলই জয়ী হয়েছে।’’
এই পুরভোটে জেতার জন্য রত্না যে তাঁর পদবিকে কাজে লাগিয়েছেন, তা-ও দাবি করেছেন শোভন। তিনি বলেন, ‘‘ওঁর তো চট্টোপাধ্যায় পদবি ব্যবহার করে যা যা করার, তা হয়ে গিয়েছে। হ্যাঁ, (ভোটে) আমার পদবিই তো ব্যবহার করেছেন। যেখানে এখন বসবাস করছেন, সেখানে তাঁর আগের পদবি (দাস) নিয়ে ঘুরে বেড়াক না!’’
আপাতত রাজনীতি থেকে দূরে শোভন। তা নিয়ে আগ্রহও হারিয়েছেন বলে দাবি। শোভনের কথায়, ‘‘আমি রাজনীতির থেকে দূরে। একটা বিতৃষ্ণা তৈরি হয় না! সেই বিতৃষ্ণাই আমার মধ্যে রয়েছে।’’ তা সত্ত্বেও তৃণমূলের এ জয়কে ‘প্রত্যাশিত’ বলেছেন। শোভনের মন্তব্য, ‘‘রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূলের এই জয় অভিপ্রেত ছিল। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে পুরভোটে বিভিন্ন অভিযোগ এড়িয়ে যাওয়া যেত। ২০১৫ সালে নির্বাচন পরিচালনা করেছিলাম আমি। এ সমস্ত ছোট-বড় সমালোচনা এড়ানো যেত। একমাত্র গিরিশ পার্কের ঘটনা ছাড়া ২০১৫ সালে এ রকম অভিযোগ ওঠার জায়গা ছিল না।’’