Save Trees

কোটি গাছের জায়গা কই? পুরনো সবুজকে বাঁচানোই পরীক্ষা পুরসভার

মঙ্গলবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে গাছেদের একাধিক করুণ দশা চোখে পড়ল। রাসবিহারী মোড়ের কাছে ফুটপাতে দেখা গেল, বছর চারেকের একটি জাম গাছের গোড়া চাপা পড়েছে দু’দিকের দু’টি দোকানের মাঝে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২৩ ০৭:৩৬
Share:

বিদ্ধ: বালিগঞ্জ এলাকায় গাছের কাণ্ড ভেদ করে ঢুকে গিয়েছে ফুটপাতের লোহার রেলিং। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

কোথাও জাম গাছের গোড়া দু’টি দোকানের দেওয়ালের মাঝে চাপা পড়ে ছড়াতে পারছে না। কোথাও কৃষ্ণচূড়ার কাণ্ড ভেদ করে চলে গিয়েছে ফুটপাতের রেলিং। কোথাও আবার গোড়ার চারপাশে ইঁদুরের গর্তের জেরে আস্ত গাছটিই ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তিলোত্তমা কলকাতার আনাচকানাচে বর্তমানে সবুজের এমনই দুর্গতি।

Advertisement

পরিবেশ বাঁচাতে কলকাতার মেয়র সম্প্রতি মানুষের কাছে আরও বেশি করে গাছ লাগানোর আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘‘দূষণের নিরিখে কলকাতার স্থান এখন দিল্লির পরেই। কলকাতায় প্রচুর গাছ লাগাতে হবে। না-হলে অদূর ভবিষ্যতে এ শহর গ্যাস চেম্বারে পরিণত হবে। আগামী প্রজন্ম শ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হবে।’’ মেয়রের নির্দেশ মতো আগামী তিন বছরে শহরে এক কোটি গাছ লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি শুরু করেছে পুরসভার উদ্যান বিভাগ। এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘ফাঁকা জায়গা পেলেই আমরা গাছ
লাগাচ্ছি। ইএম বাইপাস, গঙ্গার ধার থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন উদ্যানে গাছ লাগানোয় জোর দেওয়া হচ্ছে।’’ কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, এক কোটি গাছ লাগানোর জায়গা মিলবে কোথায়? শুধু তা-ই নয়, শহরের বিভিন্ন প্রান্তের গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ২০২০ সালের আমপানে শহরের বুকে প্রায় ২০ হাজার গাছ ভেঙে পড়েছিল। তাই তাঁরা মনে করছেন, পুরসভার উচিত বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে, পরিকল্পনামাফিক গাছ লাগানো। না-হলে গাছ বাড়তে না বাড়তে অচিরেই ভেঙে পড়বে।

মঙ্গলবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে গাছেদের একাধিক করুণ দশা চোখে পড়ল। রাসবিহারী মোড়ের কাছে ফুটপাতে দেখা গেল, বছর চারেকের একটি
জাম গাছের গোড়া চাপা পড়েছে দু’দিকের দু’টি দোকানের মাঝে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাছটির ডালপালা একটু বড় হলেই কেটে ফেলা হয়। কাছেই দেখা গেল, বড় অশ্বথ গাছের গোড়ার চারপাশে বড় বড় ইঁদুরের গর্ত। ফলে মাটি আলগা হয়ে যে কোনও সময়েই গাছটি ভেঙে পড়তে পারে। বালিগঞ্জের ফুটপাতের রেলিং পাশের একটি কৃষ্ণচূড়ার কাণ্ড এমন ভাবে ভেদ করে গিয়েছে যে, গাছটি অচিরেই মরে যেতে পারে! পার্ক সার্কাস থেকে মৌলালি মোড় পর্যন্ত সিআইটি রোডের ফুটপাতে গাছ লাগানো হলেও সেগুলির মধ্যে কয়েকটি ইতিমধ্যে শুকিয়ে হেলে পড়েছে। উত্তর কলকাতার সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে যোগাযোগ ভবন পর্যন্ত চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাতে সদ্য কিছু চারা লাগানো হলেও তাদের চারপাশে কোনও বেড়া দেওয়া নেই। এখনই বেশ কয়েকটি চারা শুকিয়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের প্রশ্ন, ‘‘যে ভাবে বেড়াহীন অবস্থায় গাছগুলি সার দিয়ে লাগানো হয়েছে, তাতে এগুলি আদৌ বাঁচবে তো?’’ পরিবেশকর্মীদের অভিযোগ, ‘‘শহরের বিভিন্ন এলাকায় বড় গাছগুলির যা করুণ দশা, তাতে আগে তাদের রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করুক পুরসভা।’’

Advertisement

মূল কলকাতায় ফুটপাতে সাধারণত গাছ লাগানো হয়। কিন্তু অভিযোগ, ফুটপাতের বেশির ভাগ অংশ ব্যবসায়ীদের দখলে চলে যাওয়ায় গাছ লাগানো এবং সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণই এখন বড় চ্যালেঞ্জ পুরসভার কাছে। পুর উদ্যান বিভাগ সূত্রের খবর, কলকাতার ৫, ৬ ও ৭ নম্বর বরো, অর্থাৎ বড়বাজার, ডালহৌসি, ধর্মতলা চত্বরে গাছ লাগানোর বিশেষ জায়গা নেই। পুর উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘চারাগাছ লাগানোর পরে তা সরিয়ে ফেলার পিছনে অনেকের ধারণা রয়েছে যে, ওই চারা বড় হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়ির সামনের অংশ দখল হয়ে যাবে। অনেক সময়ে ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা গাছের বৃদ্ধিতে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ান। পুরসভা অভিযোগ পেলে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে। বন দফতরও নোটিস দেয়।’’ পুর উদ্যান বিভাগ জুন ও জুলাই মাসে গাছ কাটার অভিযোগে শহরের বিভিন্ন থানায় ১৪টি মামলা দায়ের করেছে। বন দফতরও গাছ কাটার অভিযোগ পেয়ে ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে নোটিস পাঠিয়েছে। ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে জুলাই পর্যন্ত সাত জনের বিরুদ্ধে নোটিস পাঠিয়েছে তারা। গাছ কাটার শাস্তি হিসাবে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা ধার্য করা যায়। কিন্তু জরিমানা ছাড়া এই অপরাধের অন্য কোনও বড় শাস্তি না থাকায় সাধারণ মানুষ আজও গাছ বাঁচাতে উদাসীন বলে মনে করছেন পরিবেশকর্মীরা। পুর উদ্যান বিভাগের এক কর্তার কথায়, ‘‘পুরসভা গাছ লাগায় ঠিকই, কিন্তু সেই গাছকে বাঁচাতে সাধারণ মানুষ এগিয়ে না এলে আমরা আরও বিপদের মুখে পড়ব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন