ধ্বংসস্তূপ: আগুনে পুড়ে ছাই সপ্তপর্ণী আবাসনের কামরা। চলছে আগুন নেভানোর কাজ। নিজস্ব চিত্র
ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে বলে হন্তদন্ত হয়ে নীচে নেমে নিরাপত্তা রক্ষীকে খবরটা দিয়েছিলেন তিনিই। তখন সন্ধ্যা ৭টা।
ঘণ্টাখানেক বাদে সেই ফ্ল্যাটের রান্নাঘর থেকে তাঁরই দগ্ধ দেহ উদ্ধার করল দমকল। মঙ্গলবার বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের অভিজাত আবাসনের পাঁচতলার ফ্ল্যাটে এই মৃত্যু নিয়ে রহস্য দানা বেঁধেছে।
পুলিশ জানায়, মৃত ব্যক্তির নাম স্বপন ভট্টাচার্য। বয়স আনুমানিক ৫০ বছর। আবাসনের ডি ব্লকে তিন কামরার ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন তিনি। আগুনে পুড়েই তিনি মারা গিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। কিন্তু প্রথমে অক্ষত অবস্থায় ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে আগুন লাগার খবর দিয়ে পরে কী ভাবে সেই আগুনে মারা গেলেন স্বপনবাবু? কারও কাছে স্পষ্ট জবাব নেই। তবে পুলিশের ধারণা, ফ্ল্যাটের কোনও দরকারি জিনিস সরাতে আবার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিলেন তিনি। ওই আবাসনের নিরাপত্তা রক্ষী মনোজ গুপ্তও ধন্দে। তিনি বলছিলেন, ‘‘দাদা (স্বপনবাবু) তো নিজেই নেমে এসে খবরটা দিলেন। তারপর আমরা দমকলকে খবর দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কখন তিনি আবার উঠে গিয়েছেন, তা কেউ টের পাইনি।’’
দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, সওয়া ৭টা নাগাদ আগুনের খবর পেয়েছিল তারা। রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ চারটি ইঞ্জিন গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সপ্তপর্ণী নামের আবাসনটিতে সাতটি বহুতল। তারই একটির পাঁচতলায় থাকতেন স্বপনবাবু। তবে তাঁর বিষয়ে বেশি কিছু বলতে পারেননি অন্য বাসিন্দারা। দমকলের এক কর্তা বলেন, ‘‘ওই ব্যক্তির দেহ পুড়ে যাওয়া অবস্থায় রান্নাঘরেই পড়েছিল। টোস্টারে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে না গ্যাস সিলিন্ডারে কোনও গোলযোগে আগুন ধরল, তা স্পষ্ট নয়।’’ স্বপনবাবু রাতের রান্না চড়ানোর পরই আগুন লেগেছিল, এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না দমকল।
পুড়ে যাওয়া ফ্ল্যাটে ঢুকে দেখা গেল, তিন কামরার পরিসর কিছুটা অগোছালো। বসার জায়গা পেরিয়ে ডান দিকে রান্নাঘর। সেখানে ছড়িয়ে রয়েছে পেঁয়াজ, ঢেঁড়শ। বিদ্যুৎচালিত টোস্টারের সংযোগ-বোর্ড পুড়ে গিয়েছে। এ দিন সন্ধ্যায় জোরালো হাওয়ার জেরে ফ্ল্যাটে দ্রুত আগুন ছড়ায় বলেও দমকলের ধারণা। বসার জায়গাটুকু বাদ দিলে ফ্ল্যাটটা প্রায় পুড়ে খাক।
পাঁচতলার ফ্ল্যাটটি দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখে আতঙ্ক ছড়িয়েছিল আবাসনে। সব ক’টি বহুতলের বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে লিফ্টও অচল হয়ে পড়েছিল। ওই অবস্থায় পড়ি-কী-মরি করে সিঁড়ি ভেঙে নেমে আসেন বেশ কয়েক জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও।
তবে ঘুরে-ফিরে সকলের মুখে স্বপনবাবুর কথা। মঞ্জুশ্রী মুখোপাধ্যায়, জ্যোতি বর্মণরা বার বার বলছিলেন, ‘‘কেন যে ভদ্রলোক ঝুঁকি নিয়ে ফ্ল্যাটে ঢুকলেন, মাথায় ঢুকছে না।’’