পুরনো রেক কি যাত্রীদের পক্ষে আদৌ নিরাপদ? প্রশ্নের মুখে মেট্রো কর্তৃপক্ষ

বৈশাখের প্রথম দিনেই কুঁদঘাট সংলগ্ন নেতাজি মেট্রো স্টেশনে যে ঘটনা ঘটে, তাতে রীতিমতো আতঙ্কে যাত্রীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:০৩
Share:

বৃদ্ধ: বিপদের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই এখনও চলছে মেট্রো রেলের বহু পুরনো রেক। পিছনে আসছে নতুন রেকও। সোমবার, কবি সুভাষ স্টেশনে। ছবি: শশাঙ্ক মণ্ডল

লজঝড়ে, নন-এসি মেট্রো রেক যাত্রীদের পক্ষে কি আদৌ নিরাপদ? কত দিন আর চালানো হবে এই সব রেক? রবিবারের ঘটনায় ফের উঠেছে সেই প্রশ্ন।

Advertisement

বৈশাখের প্রথম দিনেই কুঁদঘাট সংলগ্ন নেতাজি মেট্রো স্টেশনে যে ঘটনা ঘটে, তাতে রীতিমতো আতঙ্কে যাত্রীরা।

রবিবার রাত সাড়ে ন’টা। নিউ গড়িয়ামুখী নন-এসি রেকটির তৃতীয় কামরা সবেমাত্র প্ল্যাটফর্মে ঢুকেছে। তখনই ঘটে বিপত্তি। হঠাৎ তীব্র শব্দ, আলোর ঝলকানি আর ফুলকি। দাঁড়িয়ে পড়ে ট্রেন। সাত-আট মিনিটের জন্য নিভে যায় আলো, বন্ধ হয়ে যায় পাখা। ওই অবস্থায় কামরার ভিতরে আটকে পড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, ওই সময়ে মেট্রোকর্মীদের এক জনও সাহায্য করতে ছুটে আসেননি। এমনকী, প্ল্যাটফর্মে কোনও ঘোষণাও করা হয়নি।

Advertisement

যাত্রীদের দাবি, ওই অবস্থায় কী করণীয়, তা ঠিক করতেই আট-ন’মিনিট লেগে যায় মেট্রো কর্তৃপক্ষের। চালক, স্টেশন মাস্টার বা কর্তব্যরত রেলরক্ষী বাহিনী কেউই সময়মতো তৎপর হননি। যাত্রীরা জানিয়েছেন, কামরায় আটকে পড়ায় আতঙ্কিত হয়ে তাঁরা দরজায় ধাক্কাধাক্কি শুরু করেন। পরে চালকের কেবিন সংলগ্ন দরজা দিয়ে যাত্রীদের বার করে আনা শুরু হয়। ইতিমধ্যেই অবশ্য কামরার কয়েকটি দরজা যাত্রীরা জোর করে খুলে ফেলেন। ক্ষুব্ধ যাত্রীরা দু’টি কোচের বেশ কয়েকটি জানলাও ভেঙে দেন।

পরিস্থিতি সামলাতে কিছু ক্ষণের মধ্যে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান মেট্রোর ডেপুটি চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগের কর্মীরা। তাঁরা রেকটিকে পুরোপুরি প্ল্যাটফর্মের ভিতরে নিয়ে আসেন। বার করে আনা হয় যাত্রীদেরও। ওই যাত্রীদের অভিযোগ, ট্রেনটি রবীন্দ্র সদন পেরোনোর পরেই সমস্যা শুরু হয়। মাঝে এক বার সুড়ঙ্গে কিছু সময়ের জন্য থমকেও যায়। চাকা থেকে হাল্কা পোড়া গন্ধও পেয়েছেন কেউ কেউ।

কিন্তু ওই বিপত্তির কারণ কী? মেট্রো সূত্রের খবর, চাকার ব্রেকের সঙ্গে লাগানো একটি পাত খুলে থার্ড রেলে পড়াতেই ওই বিপত্তি ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে তীব্র শব্দ এবং শর্ট
সার্কিট। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বিদ্যুতের সাবস্টেশনও। ওই পাতটি আগে থেকেই আলগা হয়ে ছিল বলে জানা গিয়েছে। কুঁদঘাটে ঢোকার মুখে ওই সমস্যা তীব্র আকার নেয়।

মেট্রোকর্তাদের উপস্থিতিতে থার্ড রেলের বৈদ্যুতিক সংযোগ ছিন্ন করে ত্রুটি মেরামত করেন কর্মীরা। তার পরে রাতের দিকে রেকটিকে কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়। মেট্রো সূত্রের খবর, গত ২৬ মার্চ মাস্টারদা সূর্য সেন স্টেশনে এই রেকটিই সমস্যায় পড়েছিল। সোমবারও ওই রেকটিকে চালানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর।

এ দিনও নেতাজি ভবন স্টেশনে দুপুর ১টা ৪০ নাগাদ অন্য একটি নন-এসি রেকের সার্কিট ব্রেকারে সমস্যা দেখা দেওয়ায় যাত্রীদের নামিয়ে দেওয়া হয়।

মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনার উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত হবে। খুব তাড়াতাড়ি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রেলের সম্পত্তি ভাঙচুরের ঘটনায় চারু মার্কেট থানায় অভিযোগ জানানো হয়েছে।”

সামগ্রিক ভাবে দীর্ঘদিনের পুরনো রেক এবং তার রক্ষণাবেক্ষণে খামতিকেই দায়ী করছেন মেট্রোকর্তাদের একাংশ। তাঁদের মতে, রেকগুলি বয়সের ভারে এতটাই জীর্ণ, রক্ষণাবেক্ষণেও কাজ হয় না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন