মশা মারতে ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার

ইজরায়েলেই প্রথম এই ব্যাক্টেরিয়ার সন্ধান মেলে। যদিও নিউ টাউনে এটি এসেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক গৌতম চন্দ্রের হাত ধরে।

Advertisement

কাজল গুপ্ত ও কুন্তক চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৪
Share:

তেল, ধোঁয়া, গাপ্পি মাছের দাওয়াই আগেই ছিল। এ বার মশা মারতে ব্যাক্টেরিয়ার শরণাপন্ন হিডকো, নিউ টাউন-কলকাতা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ! জলে গুলে সেই ব্যাক্টেরিয়া স্প্রে করলেই মশার লার্ভা ধ্বংস হবে, বলছেন নিউ টাউন কর্তৃপক্ষ। অথচ সেই ব্যাক্টেরিয়া পরিবেশে কুপ্রভাব ফেলবে না।

Advertisement

হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘পতঙ্গবিদদের পরামর্শ অনুসারে মশাবাহিত রোগ প্রতিরোধে এক ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করা হচ্ছে।’’ সূত্রের খবর,এই ব্যাক্টেরিয়ার নাম ‘ব্যাসিলাস থুরিনজিয়েনসিস ইজরায়েলেনসিস’। ইজরায়েলেই প্রথম এই ব্যাক্টেরিয়ার সন্ধান মেলে। যদিও নিউ টাউনে এটি এসেছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার শিক্ষক গৌতম চন্দ্রের হাত ধরে। সরেজমিনে অবস্থা খতিয়ে দেখে একটি রিপোর্টও তৈরি করেন ওই শিক্ষক এবং তাঁর দুই ছাত্র। রিপোর্টে কম সময়ে এবং দীর্ঘ মেয়াদে পরিকল্পনার প্রতিরোধক ব্যবস্থার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, ‘‘এই ব্যাক্টেরিয়া মশার লার্ভার শরীরে প্রোটিনের গঠন ভেঙে নষ্ট করে। ফলে ডেঙ্গির বাহকমূলই নষ্ট হয়।’’ পতঙ্গবিদ কিংবা পরিবেশ বিজ্ঞানীদের অনেকে বলছেন, বিভিন্ন পুরসভা এখনও পুরনো পদ্ধতিতে মশার লার্ভা ধ্বংস করছে। ফলে মশার বংশবৃদ্ধি আটকানো যাচ্ছে না। সেখানে এই পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর হতে পারে। বাকি পুরসভাগুলির ধোঁয়া কিংবা কীটনাশক তেল ছেড়ে এই পদ্ধতিই ব্যবহার করা উচিত বলে মত তাঁদের। কারণ কীটনাশক পরিবেশে কিছুটা হলেও কুপ্রভাব ফেলে।

Advertisement

স্বাতীদেবী জানান, মশা-সহ বিভিন্ন রোগসৃষ্টিকারী প্রাণীরা কীটনাশকের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ায় তার কার্যকারিতা কমেছে। তাই এই নতুন ব্যবস্থা অনেক বেশি কার্যকরী। বস্তুত ইদানীং সমুদ্রে বা চাষের জমিতে খনিজ তেল পড়ে গেলে তা নির্মূল করতেও ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করা হয়। তবে তা অন্য গোত্রের।

যদিও এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহার নতুন বলে মানতে নারাজ কলকাতা পুরসভার পতঙ্গবিদ দেবাশিস বিশ্বাস। তাঁর মতে, ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহারে সমস্যা মিটবে, এমন ভাবা ভুল। এডিস ইজিপ্টাই মশা ছোট্ট পরিসরেই জন্মায়। ফলে সাধারণ মানুষ স্রেফ জমা জল সরিয়েই লার্ভা ধ্বংস করতে পারেন। যেখানে তা সম্ভব নয়, সেখানে এমন ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করা হয়। তাঁর দাবি, ‘‘১৯৯৬ সাল থেকে এই ব্যাক্টেরিয়া ব্যবহার করছে কলকাতা পুরসভা।’’

যদিও কলকাতার বাসিন্দাদের কথায়, ব্যাক্টেরিয়ার কথা বললেও পুরসভাকে তেল এবং ধোঁয়া ছড়াতেই দেখা যায়। গত বছর ডেঙ্গির মরসুমে পুর প্রতিনিধিদের অনেককে ব্লিচিং ছড়াতে দেখা গিয়েছে! বিধাননগর-সহ কলকাতা সংলগ্ন একাধিক পুরকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গি রোধে কলকাতা পুরসভার পরামর্শ নিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু এমন ব্যাক্টেরিয়ার ব্যবহারের কথা আগে কখনও শোনেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন