‘‘এক প্লেট চিকেন কাবাব।’’ মধ্য কলকাতার এক পানশালায় ঢুকে অর্ডার করেছিলেন ক্রেতা।
‘‘৪৫ মিনিটের মতো বসতে হবে। অন্য কিছু বলতে পারেন।’’ জানিয়ে দিলেন ওয়েটার। ক্রেতার চোখে খানিক বিস্ময়। এত সময় লাগবে! ওয়েটার এ বার বুঝিয়ে বললেন, মুরগির কোনও পদই আগে থেকে তৈরি থাকছে না। কারণ চাহিদা কম। অর্ডার এলে তবেই রান্না হচ্ছে মুরগি।
ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে শহরের পানশালা ও রেস্তরাঁগুলিতে মুরগির পদের চাহিদা আগেই কমতে শুরু করেছিল। এ বার শহরের প্রতিটি রেস্তরাঁ ও পানশালায় বোনলেস মুরগির প্রবেশে সরাসরি নিষেধা়জ্ঞা জারি করল রেস্তরাঁ ও পানশালার মালিকদের সংগঠন ‘হোটেল অ্যান্ড রেস্টুর্যান্ট অ্যাসোসিয়েশন অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ (এইচআরএইআই)। শহরের প্রায় চারশো পানশালা-রেস্তরাঁকে ইতিমধ্যেই বিষয়টি জানানো হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, কোনও পানশালা বা রেস্তরাঁয় যে ঠিকাদার সংস্থা মাংস সরবরাহ করে, তারা ঠিকঠাক মাংস দিচ্ছে কি না, তার উপরেও নজরদারির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরবরাহ করা মাংস নিয়ে কোনও সন্দেহ তৈরি হলে তা পরীক্ষাগারে পাঠানো হবে। ইতিমধ্যেই এক বেসরকারি পরীক্ষাগারের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, পানশালা-রেস্তরাঁ মিলিয়ে সংগঠনের সদস্য-সংখ্যা প্রায় হাজার। এ শহরে চারশোর মতো। তাদের প্রত্যেককেই বিষয়টি জানানো হয়েছে বলে সংগঠন
সূত্রের খবর। ওই সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার বলেন, ‘‘বোনলেস চিকেন বাইরে থেকে কিনবেন না। এমনটাই বলা হয়েছে সদস্যদের। কারণ, বোনলেস চিকেন রান্নার পরে বোঝা যায় না, সেটা ঠিক কীসের মাংস। হাড় রয়েছে, এমন মাংসের ক্ষেত্রে বোঝা যায় মুরগি না অন্য কিছু। তাই বোনলেস চিকেনের ক্ষেত্রেই কড়াকড়ি জারি করা হয়েছে। গোটা মুরগি কিনতে বলা হয়েছে।’’
শুধু বোনলেস চিকেনে নিষেধাজ্ঞা জারিই নয়, যে সব সংস্থা মাংস সরবরাহ করে, তাদের সম্পর্কেও ভাল করে খোঁজখবর নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সংগঠনের তরফে। সেই সমস্ত সংস্থার ট্রেড লাইসেন্স এবং ‘ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (এফএসএসআই) লাইসেন্স রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
সংগঠন সূত্রের খবর, ভাগাড়-কাণ্ডের জেরে শহরের পানশালাগুলিতে মাংসের বিক্রি প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গিয়েছে। এক-একটি বড় পানশালায় মুরগির নানা পদ প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ কেজি বিক্রি হত। কিন্তু এখন তা মাত্র ৩০-৪০ কেজি বিক্রি হচ্ছে।
শহরের অন্যতম বড় একটি পানশালার মুখপাত্রের কথায়, ‘‘এটা নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছি। পচা মাংস নিয়ে যা চলছে, তাতে মাংসের সার্বিক বিক্রিই কমে গিয়েছে। তাই আমরা নিজেদের মতো করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’
আর এক পানশালার মালিকের কথায়, ‘‘আগে তো বোনলেস চিকেনই নেওয়া হত। কিন্তু এখন আর সেটা আমরা করছি না। গোটা মুরগি কেনা হচ্ছে। তার পরে নিজেদের মতো করে সেটা তৈরি করে নিচ্ছি।’’ শহরের এক তিনতারা হোটেলের মালিক টিএস ওয়ালিয়া বলেন, ‘‘সরবরাহকারী সংস্থার মাংস নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকলে তা পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করিয়ে দেখা হবে। প্রাথমিক ভাবে এমন সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে।’’