বন্ধু: সেই কচ্ছপটির সঙ্গে অস্মিত। বুধবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
কতই বা বয়স হবে তার! মেরেকেটে বারো।
ছুটির দিনে বাবার সঙ্গে গাড়িতে শহর ছেড়ে পিচ রাস্তা ধরে ছুটে যাওয়ার সময়ে চোখে পড়েছিল দৃশ্যটা। তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে নেমে পড়ে সে। দেখে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় শহরতলির বাজারে দোকানের সামনে উপুড় হয়ে পড়ে প্রাণীটি।
শিউরে উঠেছিল ছোট্ট অস্মিত। ওটা কী? দোকানি উত্তর দেন, কচ্ছপ। ছোট্ট অস্মিত ছটফটিয়ে ওঠে। বলে, ছেড়ে দাও ওকে। ঝাঁঝিয়ে ওঠেন দোকানি, তোমার কী? ওটা কেটে মাংস বিক্রি করব।
অস্মিত ছাড়ে না। কত টাকা লাগবে?
দোকানির উত্তর, ৭০০ টাকা। এ বার বাবার দিকে তাকায় অস্মিত।
বাবা পেশায় চিকিৎসক। হাওড়ার নলপুর এলাকায় মাঝেমধ্যেই যান চিকিৎসার কাজে। এই প্রথম অস্মিত বায়না ধরেছিল সঙ্গে যাবে বলে। ছেলের মন বুঝে বাবা সুকল্প বিশ্বাস পকেট থেকে ৭০০ টাকা বার করে দেন।
কলকাতার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অস্মিতের বাড়ি কলকাতার ঠনঠনিয়ায়। ফোনে অস্মিত বলে, ‘‘আমার জন্মদিন ৩১ জুলাই। তখন অনেকে টাকা উপহার দেন। সেই সব টাকা আমার কাছে জমানো ছিল। কচ্ছপটা নিয়ে বাড়ি ফিরে সেই পকেটমানি থেকে বাবাকে ৭০০ টাকা দিয়ে দিই। বাবা প্রথমে নিতে চাইছিল না। কিন্তু আমি বললাম, আমি জোর করলাম বলেই তো ওকে নিয়ে আসা হল।’’
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন জয়দীপ ও সুচন্দ্রা কুন্ডু। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল অস্মিতের বাবার। জয়দীপের কানে পৌঁছয় খবরটা। বুধবার ছিল বিশ্ব কচ্ছপ দিবস। এ দিনই অস্মিত নলপুরের জল্লাদের হাত থেকে উদ্ধার করে আনা সেই কচ্ছপ তুলে দেয় কলকাতার অনারারি ওয়াইল্ড লাইফ ওয়ার্ডেন সুচন্দ্রার হাতে। জয়দীপ জানিয়েছেন, এটি তিল কাছিম প্রজাতির কচ্ছপ। বন দফতর এটিকে কোনও জঙ্গলের গায়ে মিষ্টি জলের নদীতে ছেড়ে দেবে।
রবিবার থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত সেই কচ্ছপটি ছিল পুরোপুরি অস্মিতের জিম্মায়। সেই কচ্ছপকে বাড়ি নিয়ে এসে কী করল সে? অস্মিত জানায়, বাড়ি ফিরে প্রথমেই ওর বাঁধন কেটে দেওয়া হয়। ছোট্ট অস্মিতের কথায়, ‘‘জানেন, এই সময়ে কচ্ছপেরা ভয়ে খোলসের ভিতরে গুটিয়ে যায়। কিন্তু ও হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে, আমি ওর কোনও ক্ষতি করব না। তাই ও মুখ বার করে দেখছিল, আমি কী করি।’’ একটি গামলায় জল ভরে সেখানে কাছুকে (দু’দিনের মধ্যে পাওয়া ডাকনাম) ছেড়ে দেয় সে। গেঁড়ি-গুগলি কিনে এনেছিল সঙ্গে। প্রথম দিন গপগপ করে তাই খেয়েছে কাছু। তার পরে অবশ্য চুটিয়ে ভাত খেয়েছে দু’দিন।
জয়দীপ জানিয়েছেন, গত ২০ বছর ধরে কলকাতার প্রায় ৬৫টি স্কুলে তাঁরা বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের জন্য সচেতনতা বাড়ানোর কাজ করে যাচ্ছেন। সেই তালিকায় ছিল অস্মিতের স্কুলও। ছোট থেকেই অস্মিত যে এই বিষয়ে সক্রিয়, তারই পরিণতিতে বেঁচেছে কচ্ছপের প্রাণ। এ ভাবে একটি কচ্ছপের প্রাণ বাঁচাতে পেরে নিজেও খুশি অস্মিত।
শুধু কাছুকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে মনটা একটু খারাপ এখন তার।