পুলিশে চাকরির টোপ, গ্রেফতার ছয়

লালবাজার সূত্রের খবর, সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই বুধবার হেস্টিংস থানার পুলিশ প্রতারণা চক্রের ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৮ ০১:০১
Share:

পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণার অভিযোগ আগেও উঠেছে। এ বার সেই অভিযোগে জড়িয়ে গেল কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের নাম!

Advertisement

লালবাজার সূত্রের খবর, সেই অভিযোগের সূত্র ধরেই বুধবার হেস্টিংস থানার পুলিশ প্রতারণা চক্রের ছ’জনকে গ্রেফতার করেছে। ধৃতদের নাম রণজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর কুণ্ডু, কেদারনাথ রায়, আজিজ মল্লিক, দেবাশিস বাউরি এবং বিশ্বজিৎ চৌধুরী। বৃহস্পতিবার তাঁদের ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে পাঁচ জনকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়। কেদারনাথ অসুস্থ থাকায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অভিযোগ, প্রতারিতদের পুলিশ ট্রেনিং স্কুলের ভিতরে নিয়ে গিয়ে ভুয়ো নথিতে স্বাক্ষর করিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা। কিন্তু নিরাপত্তা বেষ্টনীতে মো়ড়া পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে (পিটিএস) কী ভাবে প্রতারকদের যাতায়াত সম্ভব হল তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। তবে এই ঘটনায় এখনও কোনও পুলিশের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি।

ধৃতদের কাছ থেকে কলকাতা পুলিশের লোগো ছাপানো ভুয়ো নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। মিলেছে সেনাবাহিনী, রাজ্য স্কুল সার্ভিস কমিশন, বন দফতর-সহ বিভিন্ন সরকারি দফতরের জাল নিয়োগপত্র। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতদের কয়েক জন প্রতারণার অভিযোগে আগেও বর্ধমান পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, চক্রের জাল ভিন রাজ্যেও ছড়ানো রয়েছে।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার দুপুরে পিটিএসের সামনে চাকরি দেওয়া নিয়ে কয়েক জনের বাগবিতণ্ডার খবর পেয়ে হেস্টিংস থানায় পৌঁছে দেন কনস্টেবল মিতা দলুই, যা শুনে অফিসারেরা সেখানে যান। প্রতারণার অভিযোগ শুনে অভিযুক্ত ও অভিযোগকারীদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। বনগাঁর বাসিন্দা সুমন ঘোষ নামে এক যুবক জানান, তিনি বছর খানেক আগে কলকাতা পুলিশের কনস্টেবল পদে আবেদন করেছিলেন। শারীরিক পরীক্ষায় পাশ করলেও লিখিত পরীক্ষায় ফেল করেন তিনি। মাস ছয়েক আগে ট্রেনে এক জনের সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। অভিযোগ, ঘুরপথে লিখিত পরীক্ষায় পাশ করানোর ব্যবস্থার কথা তিনিই বলেন। এর পরে ওই চক্রের এক সদস্য বিশ্বজিৎ, সুমন এবং তাঁর বন্ধু বিভাস সরকারকে ভবানী ভবনে নিয়ে যান। বুধবার ফের তাঁদের আসতে বলা হয়। সে দিন ভবানী ভবন ঘুরিয়ে পিটিএসে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে মাঠের পাশে দাঁড়ানো কেদারনাথ নিজেকে ‘বড়বাবু’ পরিচয় দিয়ে চাকরি পাকা করতে নথিতে সইও করে দেন।

পুলিশ সূত্রের দাবি, সই হয়ে যাওয়ার পরে রাস্তায় এনে অভিযুক্তেরা সুমন ও তাঁর বন্ধুর থেকে মোট ছ’লক্ষ টাকা দাবি করেন এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার আসল নথি জমা দিতে বলেন। শুরু হয় তর্কাতর্কি। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, প্রতারণা চক্রে অভিযুক্ত দেবাশিস প্রাক্তন সেনাকর্মী। সুঠাম চেহারা এবং জংলা পোশাক পরে সে পরিচয় ভাঁড়িয়ে পিটিএসের ভিতরে ঢুকতেন। তাই সান্ত্রীদের সন্দেহ হয়নি। তাঁর সঙ্গেই বাকিদের পিটিএসে ঢোকার পথ সুগম হয়। এক পুলিশকর্তার মন্তব্য, ‘‘পিটিএসে র‌্যাফ, কম্যান্ডো-সহ একাধিক বাহিনীর জওয়ান-অফিসারেরা থাকেন। সবার মুখ চেনা সম্ভব নয়। ফলে পোশাক পরে পরিচয় ভাঁড়িয়ে ঢুকে পড়তে পেরেছিলেন প্রতারকেরা।’’ তিনি জানান, পরিচয় ভাঁড়ানোর প্রমাণ সংগ্রহে পিটিএসের গেটে লাগানো সিসি ক্যামেরার ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার অবশ্য সুমন জানান, প্রতারকদের কোনও টাকা দেননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন