দত্তক মেয়ের পরিচয়-বিভ্রাট, পুলিশে বাবা

পুরসভার নথি অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ২৬ এপ্রিল গীতশ্রী পাল ওই শিশুর জন্ম দিয়েছেন লোহিয়া মাতৃসেবা সদন হাসপাতালে।

Advertisement

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক শিশু। অথচ জন্মের শংসাপত্র দু’টি। দু’টিতে হাসপাতালের নাম আলাদা। আলাদা বাবার নামও। এই নিয়েই শ্যামপুকুর থানায় প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেছেন সঞ্জয় সরকার নামের এক ব্যক্তি। তাঁর দাবি, তাঁর স্ত্রী তাঁকে জোর করে বাধ্য করেছেন, স্ত্রীয়ের প্রথম পক্ষের সন্তান তথা ওই শিশুকে দত্তক নিতে। স্কুলের নথিতেও বাবা হিসেবে তাঁর নামই রয়েছে। অথচ শিশুর জন্মের তথ্য নিয়েই অসংখ্য অসঙ্গতি রয়েছে বলে তার দায়িত্ব নিতে রাজি নন সঞ্জয়বাবু।

Advertisement

পুরসভার নথি অনুযায়ী, ২০০৮ সালের ২৬ এপ্রিল গীতশ্রী পাল ওই শিশুর জন্ম দিয়েছেন লোহিয়া মাতৃসেবা সদন হাসপাতালে। সেখানে তার বাবার নাম হিসেবে যাঁর নাম লেখা রয়েছে, তিনি আদতে ওই শিশুর দাদু। অর্থাৎ গীতশ্রীর বাবা। আবার ওই একই তারিখে ওই শিশুর নামেই আরও একটি নথি রয়েছে, যেখানে হাসপাতালের নাম হিসেবে রয়েছে এলিট নার্সিংহোম। আর বাবার নাম শশাঙ্ক পাল। অথচ পুরসভা সূত্রের খবর, গীতশ্রীর বিয়ের শংসাপত্র বলছে, তাঁর স্বামীর নাম শশাঙ্ক পাত্র।

পুলিশ সূত্রের খবর, বাগবাজারের বাসিন্দা সঞ্জয় জানিয়েছেন, ২০১৬ সালের ২৮ এপ্রিল গীতশ্রীর সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। গীতশ্রীর প্রথম পক্ষের একটি কন্যাসন্তান ছিল। সঞ্জয়ের দাবি, বিয়ের আগেই গীতশ্রীর চাপে ২০১৫-র ৮ মে ওই নাবালিকাকে দত্তক নিতে বাধ্য হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, বিয়ের দু’মাস পর থেকেই গীতশ্রী বাপের বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। বারবার অনুরোধ সত্ত্বেও শ্বশুরবাড়ি ফেরেননি। এই সময়েই মেয়ের দু’টি নথি হাতে পেয়ে তিনি চমকে যান বলে দাবি সঞ্জয়ের। সঞ্জয় জানিয়েছেন, গীতশ্রীর প্রথম বিয়ের ‘ম্যারেজ সার্টিফিকেট’ হাতে পান তিনি। তাতে লেখা ছিল, ২০০২ সালের ২ ফেব্রুয়ারি শশাঙ্ক পাত্র নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে গীতশ্রীর বিয়ে হয়। অথচ, তিনি জানতেন গীতশ্রীর আগের স্বামীর নাম শশাঙ্ক পাল। এমনকী, নাবালিকাকে দত্তক নেওয়ার একটি শংসাপত্রেও তার পিতৃপরিচয় হিসেবে লেখা ছিল, শশাঙ্ক পালের নাম। এর পরেই শিশুর জন্মের নথি চেয়ে পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরে আরটিআই করেন তিনি। তার পরে ওই সব নথির পাশাপাশি নাবালিকার আধার কার্ডের প্রতিলিপিও থানায় দিয়েছেন সঞ্জয়। তাতেও নাবালিকার বাবার নাম লেখা শশাঙ্ক পাল। সঞ্জয় বলেন, ‘‘সত্যিটা জানতে চাই। আমি প্রতারিত হয়েছি। আমার নাম নিয়ে ওই নাবালিকা স্কুলে পড়ছে। আগামী দিনেও ওই মেয়ের সঙ্গে আমার নাম যুক্ত থাকলে বিপদে পড়তে পারি।’’

Advertisement

গীতশ্রী বলেন, ‘‘মেয়ের সার্টিফিকেটে যে ভুল রয়েছে তা সঞ্জয় জানত। ও নিজেই জোর করে দত্তক নিয়েছিল। এখন আমাদের বিপদে ফেলতে ওই সব নথি বার করে অভিযোগ করছে।’’ সেই সঙ্গে গীতশ্রীর দাবি, ‘‘আমি ওকে বিয়েই করতে চাইনি। আমায় মারধর করত। মেয়ের সামনেও মেরেছে। তাই মেয়েকে নিয়ে এখন বাবার কাছে থাকি।’’ স্বামী মারধর করত পুলিশে অভিযোগ করেননি কেন? গীতশ্রীর উত্তর, ‘‘ওইটাই ভুল হয়ে গিয়েছে।’’

পুর স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের একাংশের মত, ওই শিশুর জন্মের একটি শংসাপত্র নকল। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘শিশুর নাম এক হলেও এ ক্ষেত্রে হাসপাতালের নাম পৃথক। বাবার নামও আলাদা। ফলে ওই শিশু যে আদতে এক জনই তা বোঝার উপায় নেই।’’ পুরসভার উপ-স্বাস্থ্য আধিকারিক সুব্রত রায়চৌধুরী বললেন, ‘‘আমাদের যা উত্তর তা আরটিআই-তেই জানিয়েছি। নতুন করে কিছু বলার নেই।’’

লোহিয়া মাতৃসেবা সদন ও এলিট নার্সিংহোম— দু’টোই বর্তমানে বন্ধ। এলিট নার্সিংহোমের তরফে উমা ঘোষ বললেন, ‘‘হাসপাতাল বহু দিন বন্ধ। অত পুরনো নথি নেই। কিছু বলতে পারব না।’’ লোহিয়া মাতৃসেবা সদনের পক্ষে প্রভুদয়াল অগ্রবাল বললেন, ‘‘হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অত পুরনো ঘটনা বলা সম্ভব নয়। বাবা-মা চাইলে আমরা তথ্য দিই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন