মেট্রো স্টেশনের কাজ চলছে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী
মাটির প্রায় ১৫ মিটার নীচে অর্থাৎ ৫০ ফুটের বেশী গভীরে হচ্ছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ। শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনও ওই গভীরতাতেই হচ্ছে। তবে তা তৈরি হয়েছে টপ-ডাউন পদ্ধতিতে।
কী এই টপ-ডাউন পদ্ধতি?
মেট্রো সূত্রের খবর, মাটির নীচে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশনটি ২০৫ মিটার লম্বা, ৪৩ মিটার পরিসরের। পুরনো মেট্রোর মতো ধাপ কেটে বিপুল জায়গার মাটি বার করার নির্মাণ পদ্ধতি এখন অচল। নতুন পদ্ধতি অনুযায়ী, মাটি বার করার আগে তার চারপাশে এক মিটার পুরু কংক্রিটের শক্ত দেওয়াল (ডায়াফ্রাম ওয়াল) তৈরি করা হয়েছে। এর পরে উপর থেকে যন্ত্রের সাহায্যে ধীরে ধীরে সেটি নির্দিষ্ট গভীরতায় পৌঁছিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ভাবে চারদিক ঘিরে ফেলে মাটি সরানো হয়েছে। একই সঙ্গে ছাদ তৈরি করতে করতে নীচে নামা হয়েছে। মেট্রো কর্তাদের ব্যাখ্যা, মাটির ধস নামা ঠেকাতে এই ব্যবস্থা। কারণ উপর থেকে ছাদ ঢালাই করতে করতে নীচে নামলে, চারপাশের মাটির চাপ দেওয়ালে সমান ভাবে পড়ে। পাশাপাশি এর ফলে নির্দিষ্ট পরিসরের বেশি মাটি কাটতে হয় না বলে জায়গা, পরিশ্রম এবং অর্থ বাঁচে।
কোথায় হচ্ছে এই ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো স্টেশন?
প্রস্তুতি: শিল্পীর ভাবনায় প্রস্তাবিত মেট্রো স্টেশন।
শিয়ালদহ রেলস্টেশনের সঙ্গে প্রায় সমকোণে তৈরি হচ্ছে এটি। নির্মীয়মাণ মেট্রো স্টেশনের পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে থাকবে প্রবেশপথ। দূরপাল্লার ট্রেন ছাড়াও শিয়ালদহ মেন এবং দক্ষিণ শাখার যাত্রীরা সাবওয়ে দিয়ে সরাসরি মেট্রো চত্বরে পৌঁছতে পারবেন। শিয়ালদহ কোর্টের গা ঘেঁষে হচ্ছে মেট্রো স্টেশনের পশ্চিম প্রান্ত। সে দিকেই থাকছে খোলা এবং সুসজ্জিত প্রবেশপথ।
কী কী সুবিধা থাকবে এই স্টেশনে?
মোট তিনটি প্ল্যাটফর্ম থাকবে। আপ ও ডাউন লাইনের জন্য দু’টি প্ল্যাটফর্ম ছাড়াও মাঝে থাকছে বিশেষ ‘আইল্যান্ড’ প্ল্যাটফর্ম। এই স্টেশনে মেট্রোর দরজা খুলবে দু’দিকেই। ফলে আসা-যাওয়ার পথে যাত্রীরা ট্রেনে দ্রুত ওঠা-নামা করতে পারবেন। কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার অজয়কুমার নন্দী বলেন, ‘‘ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পুরোদমে চালু হলে শিয়ালদহ মেট্রো স্টেশন দিয়ে ব্যস্ত সময়ে ঘণ্টায় প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করবেন। পরিকল্পনা রয়েছে, প্রতি দেড় মিনিট অন্তর মেট্রো চালানোর। যাত্রীদের ট্রেন থেকে ওঠা-নামা দ্রুত করতে পারা নিশ্চিত করতেই এই ব্যবস্থা।’’ দৃষ্টিহীনদের জন্য স্টেশনের প্রবশপথ থেকেই থাকবে বিশেষ ট্যাক-টাইলস (হলুদ রঙের অসমান টাইলস)। প্রতিটি প্ল্যাটফর্মের দু’প্রান্তে দু’টি করে মোট ছ’টি চলমান সিঁড়ি থাকবে। তিনটি প্রশস্ত লিফট থাকবে। পুরো স্টেশনে মোট ১৮ টি চলমান সিঁড়ি থাকবে।
স্টেশন এবং সুড়ঙ্গের মধ্যে বায়ু চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে দু’প্রান্তে দু’টি করে মোট চারটি বিশেষ ব্যবস্থা থাকছে। মেট্রোর পুরো ব্যবস্থা সুষ্ঠু ভাবে পরিচালনা করতে মেকানিক্যাল এবং ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের জন্য ১০৬টি কক্ষ থাকছে। স্টেশন নির্মাণ সংস্থার এক আধিকারিক বলেন, “মাটির উপরে শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে যান চলাচল স্বাভাবিক রেখেই নীচে কাজ হচ্ছে।’’ ৭০ শতাংশ কাজ সম্পূর্ণ বলে দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
আপৎকালীন পরিস্থিতিতে স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসার জন্য দু’প্রান্তে তিনটি করে মোট ছ’টি রাস্তা থাকছে। এ ছাড়াও দু’দিক থেকে দমকলকর্মীদের জন্য আলাদা পথ তৈরি হচ্ছে।