সমস্যায় পাশে দাঁড়ালেই হতে পারে আরও বড় সমস্যা। যাঁর জন্য এগিয়ে যাওয়া, তিনিও না থাকতে পারেন পাশে। ফলে সমস্যা দেখলে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল!
দেশ-বিদেশের বহু শহরের মনোভাবই এমন, অভিযোগ করে থাকেন কলকাতাবাসীরা। এ শহরের একটা বড় অংশের বরাবরের দাবি, কলকাতা আর যে কোনও ক্ষেত্রেই পিছিয়ে থাক না কেন, সহমর্মিতার নিরিখে এতটা পিছনের আসনে কখনও নয় তার স্থান।
কিন্তু পরপর কিছু ঘটনা এ শহরের সেই ভাবমূর্তিতেও যোগ করেছে প্রশ্নচিহ্ন। প্রতিবাদীরা বারবার প্রহৃত হন কেন তবে? বদল আসছে কি সামগ্রিক শহুরে মনোভাবেই? এমন নানা প্রশ্নে বিতর্ক তৈরি হয় মাঝেমধ্যেই। বুধবার রাতে অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় এক যুবক প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় ফের এমন প্রশ্ন উঠতেই কবি শ্রীজাত জানালেন, আগামী দিন কেমন হতে চলেছে, তা নিয়ে আশঙ্কা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘‘অন্য অনেক শহর বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে শুনে ভয় পেতাম। আমার কলকাতার এমন রূপ কখনওই কাম্য নয়।’’ তাঁর চিন্তা, এমন চলতে থাকলে তো এর পরে এই শহরেও কেউ অন্যের বিপদের সময়ে সঙ্গে থাকবেন না। কবির কথায়, ‘‘এ এক আজব জায়গা হয়ে যাচ্ছে। যে বিষয়ে মানুষে মাথা না ঘামালেও পারেন, তাতে গিয়ে মতামত দিচ্ছেন, মেরেও আসছেন। আর যখন সত্যি মানুষের সাহায্য দরকার, তখন নাকি কেউ ফিরেও তাকাচ্ছেন না!’’
তবে কি সহমর্মিতা লোপ পাচ্ছে শহর থেকে?
মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যাল অবশ্য তেমনটা মনে করেন না। তিনি বরং মনে করান, বুধবার রাতে উল্টোডাঙার ঘটনায় যে যুবক মার খেয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তিনি কিন্তু অন্যের কথাই ভেবেছিলেন। ফলে সে রকম মানুষও আছেন এ শহরে। তবে তার সঙ্গেই মনোবিদের মন্তব্য, ‘‘সহমর্মিতার পরিণতি যদি এমন হয়, তবে আর কত দিন এমন সাহায্য পাওয়া যাবে, সেটাই চিন্তার বিষয়।’’ কাউকে সমস্যায় দেখে কী করে এগিয়ে না গিয়ে থাকেন মানুষ, তাঁরা কি ভুলে যান যে এমন ঘটতে পারে তাঁরই বাড়ির কারও সঙ্গেও— প্রশ্ন তোলেন মনোবিদ।
সমাজতত্ত্বের শিক্ষক প্রশান্ত রায় অবশ্য এখনও আশা হারাননি সমাজের প্রতি। তিনি মানেন, প্রতিবাদীরা যত মার খাবেন, ততই তা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে চলার চেষ্টা করবেন মানুষ। অধিকাংশেই
নিজের সুরক্ষার কথা আগে ভাববেন। তবে তিনি এও বলেন, ‘‘প্রতি প্রজন্মেই কিছু মানুষ থাকেন যাঁরা ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ান। তাঁরা হারিয়ে যাবেন না। তাঁরা থাকবেনই।’’