বিমান নামলে শুরু শেয়ালের পেটপুজো

কলকাতায় কোনও বিমান অবতরণের আগে যাত্রীদের উচ্ছিষ্ট খাবার প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নেন বিমানসেবিকারা। তার পরে সেই খাবার জমা হয় কলকাতা বিমানবন্দরের জঞ্জালের স্তূপে।

Advertisement

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০১৮ ০২:২২
Share:

প্রতীকী ছবি

শেয়ালে খাচ্ছে স্যান্ডউইচ! আর খাচ্ছে কুকি! রাতের অন্ধকারে সাবড়ে দিচ্ছে পরোটা, সব্জি, চিকেন কষাও!

Advertisement

কলকাতায় কোনও বিমান অবতরণের আগে যাত্রীদের উচ্ছিষ্ট খাবার প্লাস্টিকের ব্যাগে ভরে নেন বিমানসেবিকারা। তার পরে সেই খাবার জমা হয় কলকাতা বিমানবন্দরের জঞ্জালের স্তূপে। আর সেই খাবারের লোভেই ইঁদুর-বেড়াল থেকে শেয়াল— পেটপুজো সেরে ফেলতে রোজই দলে দলে হাজির হচ্ছে ওরা! বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দিনে তিন বার সেই জঞ্জাল নিয়ে বাইরে ফেলে আসা হয়। অভিযোগ, তাতেও কিছুটা জঞ্জাল জমা হলেই হানা দেয় শেয়ালের দল। বিশেষত রাতে। প্লাস্টিক ছিঁড়ে সেখান থেকে আধখাওয়া স্যান্ডউইচ-চিকেন-পরোটা সাঁটায় তারা। বিশেষজ্ঞদের মতে, বিমানবন্দরের ভিতরে এই উচ্ছিষ্ট জমানো বন্ধ না হলে শেয়ালের সমস্যা মিটবে না। শুধু তো শেয়াল নয়, সঙ্গে রয়েছে কুকুরও। বিমানবন্দরের চৌহদ্দির ভিতরে তাদেরও যত্রতত্র অবাধ যাতায়াত। গত সপ্তাহেই একটি কুকুর রানওয়েতে চলে এসেছিল। যার কারণে ঘুরে যেতে হয় একটি বিমানকে।

তবে সেটি কুকুর ছিল, না কি শেয়াল, তা নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিমানবন্দরের অধিকর্তা অতুল দীক্ষিত মনে করেন, ভিতরের ঘাসজঙ্গল সাফ করার পরে আরও বেশি করে নজরে আসছে শেয়াল। তাঁর মতে, উপর থেকে শেয়াল দেখে পাইলটেরা কুকুর বলে ভুল করেন। তাঁর আরও দাবি, সম্প্রতি শেয়ালের গর্ত বুজিয়ে দেওয়ায় তাদের সংখ্যা কমে গিয়েছে। যারা বিমানবন্দরের ভিতরে রয়ে গিয়েছে, তারাই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাই খাবারের উচ্ছিষ্টের জন্যই যে শেয়াল আসছে, এ কথা মানতে চাননি তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘বিমানবন্দরের যে জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ রয়েছে, তা উঁচু পাঁচিল দিয়ে ঘেরা একটি ঘর। তার দরজা বন্ধ থাকে। দূর থেকে বিমান সংস্থার কর্মীরা এসে তার ভিতরে জঞ্জাল ভরা প্যাকেট ফেলে দেন। যখন পরিষ্কার করা হয়, তখনই দরজা খোলা হয়। ফলে সেখান থেকে শেয়াল খাবার পাচ্ছে, এটা ঠিক নয়।’’

Advertisement

বিমানবন্দরের এক কর্তা অবশ্য এয়ার ইন্ডিয়ার পুরনো হ্যাঙ্গারের পিছনে থাকা ক্যান্টিনের দিকে ইঙ্গিত করেছেন। অভিযোগ, সেখান থেকেই উচ্ছিষ্ট খাবার পাচ্ছে শেয়াল-কুকুর। সেটা বন্ধ করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এখনও তা হয়নি। এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, নতুন বিকল্প জায়গা না পেলে সেখানকার ক্যান্টিন বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, পার্কিং বে ২৫ ও ২৬-এর মধ্যে, দমকলকেন্দ্রের কাছে এবং ৪৮ নম্বর বে-র কাছেও নিয়মিত যাত্রীদের খাবারের উচ্ছিষ্ট ফেলা হয়। সেখানে ডাস্টবিন রয়েছে। অভিযোগ, সেখানেই রাতের অন্ধকারে হানা দিচ্ছে ধূর্ত শেয়ালের দল। যাঁরা বিমানবন্দরের জঞ্জাল তুলে নিয়ে বাইরে ফেলে দেন, তাঁরা সারা দিনে তিন বার সেখান থেকে জঞ্জাল তুলে নিয়ে যান। রাতেও এক বার আসেন। কিন্তু, তার পরে সারা রাত ধরে জমা হতে থাকে উচ্ছিষ্ট খাবার। বিমানবন্দরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, রাতে যে বিমানগুলি কলকাতায় আসে, সেই সব বিমানে ডিনার দেওয়া হয় যাত্রীদের। বেশি উচ্ছিষ্ট খাবার থাকে রাতের বিমানগুলিতেই। সেই খাবার খেতেই গভীর রাতে হানা দেয় শেয়ালের দল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন