হাজার অভিযোগ সত্ত্বেও রুপোলি সম্মান হাওড়ার

স্টেশন চত্বর, রেললাইন এবং কারশেডের দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতেও সমালোচনার মুখে প়়ড়েছে রেল। সেই মামলা এখনও চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০১৮ ০৪:১৭
Share:

শুরু: বছরের প্রথম দিনে পূর্ব রেলের হাওড়া-ব্যান্ডেল শাখায় চালু নয়া ট্রেন। আছে এলইডি আলো, সিসি ক্যামেরা। রবিবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

হাওড়া স্টেশন কতটা পরিচ্ছন্ন, তা নিত্যযাত্রীরা হাড়ে হাড়ে টের পান। স্টেশন চত্বর, রেললাইন এবং কারশেডের দূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতেও সমালোচনার মুখে প়়ড়েছে রেল। সেই মামলা এখনও চলছে। এ সবের মাঝেই ‘ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল’-এর কাছ থেকে রৌপ্যশংসা (সিলভার রেটিং) পেল হাওড়া স্টেশন। রবিবার হাওড়া পুরসভার মেয়র রথীন চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে ইন্ডিয়ান গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের পক্ষ থেকে রেলের হাতে ওই সম্মান তুলে দেওয়া হয়।

Advertisement

পূর্ব রেল জানিয়েছে, গত বছর অগস্ট মাসে ২৩টি প্ল্যাটফর্মের ছাদ এবং মূল স্টেশন ভবনের ছাদে মোট তিন মেগাওয়াটের সৌরপ্যানেল বসানো হয়েছে। স্টেশনের সমস্ত আলো আগেই এলইডি-তে পরিবর্তিত করা হয়েছে। দিনের বেলা স্টেশনে মোট বিদ্যুতের চাহিদা ছ’হাজার ওয়াটের মতো। ওই চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ গ্রিডে দেয়। এ ছাড়াও, স্টেশনের জল সংরক্ষণ এবং কঠিন বর্জ্য অপসারণের ব্যবস্থা রয়েছে। স্টেশনে বৃষ্টির জল ধরে রাখার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। হাওড়ার ডিআরএম মনু গয়াল বলছেন, ‘‘ভবিষ্যতে প্ল্যাটিনাম রেটিং পাওয়ার চেষ্টা করব।’’

রেলেরই একাংশ বলছে, কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পরেই বায়োটয়লেট, সৌরশক্তি নিয়ে নানা পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু মূল সমস্যাগুলি সমাধানে কতটা জোর দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়ে মন্ত্রকের অন্দরেই প্রশ্ন রয়েছে।

Advertisement

এমন তকমা জোটালেও হাওড়া স্টেশন কতটা পরিবেশবান্ধব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিত্যযাত্রীরা। অনেকেই বলছেন, কাগজ-কলমে প্রশংসা যতই জুটুক, আদতে স্টেশনের চারপাশে দূষণেরই ছড়াছড়ি। জাতীয় পরিবেশ আদালতে হাও়ড়া স্টেশনের দূষণ নিয়ে মামলা করেছেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। রেলের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তিনিও। বলছেন, ‘‘আদালতে বৃষ্টির জল সংরক্ষণের কথা কোনও দিন জানাতে পারেনি রেল। হলফনামা অনুযায়ী, ১৯০০টি রেকের মধ্যে মাত্র ৬০৪টি রেকে বায়োটয়লেট রয়েছে। খোদ রেলের সমীক্ষাতেই তো হাওড়া পিছিয়ে রয়েছে।’’

পরিবেশকর্মীদের অনেকেই বলছেন, স্টেশনের চার পাশে এত প্লাস্টিক ছড়িয়ে থাকে। ‘গ্রিন বিল্ডিং’-এর তকমা পাওয়ার পাশাপাশি রেলের উচিত প্লাস্টিক এবং জঞ্জাল সাফাইয়ের চেষ্টা করা। সুভাষবাবুর মন্তব্য, ‘‘লাইনের পাশে ডাঁই করা জঞ্জাল পড়ে থাকে। শুক্রবারও সেই ছবি আদালতে জমা দিয়েছি।’’ শুধু সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করে তকমা পাওয়ার থেকে যাত্রীদের সুবিধার্থে সামগ্রিক পরিবেশের উন্নয়ন জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশবিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, ‘‘তকমা পাওয়া ভাল ব্যাপার।
কিন্তু পরিবেশ নিয়ে সচেতন হওয়া আরও জরুরি।’’ তাঁর মতে, নিয়মিত জঞ্জাল সাফাই, বর্জ্য পৃথকীকরণ, প্লাস্টিক বন্ধ করা, পর্যাপ্ত ও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার রয়েছে কি না, সেগুলিও জানানো উচিত।

এ সব প্রসঙ্গে এক নিত্যযাত্রীর বক্তব্য, ‘‘হাওড়া স্টেশনের পরিচ্ছন্নতা, শৌচাগার? যত কম বলা যায় ততই ভাল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন