রাস্তায় বৃদ্ধা, উদ্ধার করল পুলিশ

ঘটনা শুক্রবার দুপুরের। ২টো নাগাদ ইএম বাইপাসের ধারে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধাকে দেখে সন্দেহ হয় কসবা থানার টহলরত দুই পুলিশকর্মীর। তাঁরা এগিয়ে যান বৃদ্ধার দিকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০১৮ ০২:০৭
Share:

লক্ষ্মী মণ্ডল

চৈত্রের রোদে পুড়ে কাতরাচ্ছেন এক বৃদ্ধা। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। উস্কোখুস্কো চেহারার শীর্ণকায় বৃদ্ধাকে সাহায্য করা তো দূরের কথা, কেউ তাঁর দিকে ফিরেও তাকাচ্ছেন না।

Advertisement

ঘটনা শুক্রবার দুপুরের। ২টো নাগাদ ইএম বাইপাসের ধারে পড়ে থাকা ওই বৃদ্ধাকে দেখে সন্দেহ হয় কসবা থানার টহলরত দুই পুলিশকর্মীর। তাঁরা এগিয়ে যান বৃদ্ধার দিকে। কাছে যেতেই করুণ চোখে পুলিশকর্মীদের দিকে তাকান তিনি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বৃদ্ধা জানান, তাঁর নাম লক্ষ্মী মণ্ডল। বয়স ৮০ বছর। বাড়ি দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুর থানার উচ্ছেপোঁতায়।

কিন্তু তিনি রাস্তায় পড়ে কেন? লক্ষ্মীদেবী প্রথমে জানান, পারিবারিক অশান্তির কারণে তিনি বাড়ি থেকে চলে এসেছেন। কিন্তু তাঁর কথা শুনে দুই পুলিশকর্মীর মনে হয়, তিনি সব কিছু ভেঙে বলছেন না। শেষমেশ তাঁদের জোরাজুরিতে লক্ষ্মীদেবী জানান, নাতির অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে তিনি নিজেই শুক্রবার সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছেন।

Advertisement

বৃদ্ধার কাছে ঘটনা শুনে দুই পুলিশকর্মী কসবা থানায় ফোন করে বিস্তারিত জানান। সে সময় ওই থানায় ডিউটি অফিসার ছিলেন সাব-ইনস্পেক্টর রাজীব মাঝি। তিনি সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে আসেন। টহলরত পুলিশকর্মীরা লক্ষ্মীদেবীকে ওই গাড়িতে তুলে দিলে রাজীববাবু তাঁকে নিয়ে সোজা পৌঁছে যান এম আর বাঙুর হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে ওই বৃদ্ধাকে ভর্তি করান তিনি। কসবা থানার পুলিশ লক্ষ্মীদেবীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তবে পুলিশ জানিয়েছে, ওই বৃদ্ধা তাঁর পরিবারের কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে চাননি।

কেন এমন পরিস্থিতির শিকার হলেন বৃদ্ধা? কেনই বা পথচলতি কেউ তাঁর দিকে ফিরে তাকালেন না?

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের মতে, এই ঘটনা সামাজিক অবক্ষয়ের চিহ্ন। উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, পাঁচশো-হাজার টাকার নোট বাতিলের সময়ে এক বৃদ্ধ ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে যাননি। পরে মারা যান ওই বৃদ্ধ। এ দিন কসবা থানার পুলিশ না থাকলে ওই বৃদ্ধারও হয়তো বড় কোনও বিপদ হতে পারত। নীলাঞ্জনাদেবীর মতে, এখন মানুষ কেবল নিজেরটুকু বোঝে। সংকীর্ণ গণ্ডির বাইরে বেরোতে চায় না। ফলে মানবিকতা বোধ থাকলেও অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়ান না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন