কাজে বন্ধ পথ, নাকাল যাত্রীরা

গোলাঘাটা-শ্রীভূমি ভূগর্ভস্থ পথের সিঁড়ি তৈরির কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। এর পরে বাক্সের মতো কাঠামো নির্মাণ করতে প্রধান রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু করতে চাইছে পূর্ত দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

অনড়: ভিআইপি রোড বন্ধ করে চলছে ভূগর্ভস্থ পথ তৈরির কাজ। যার ফলে যানজটে এ ভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে রইলেন অসংখ্য যাত্রী। সোমবার।

সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং আগাম ঘোষণা ছাড়াই একটি ব্যস্ত রাজপথ আটকে দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গেলে ভোগান্তির মাত্রা কী হতে পারে, তার সাক্ষী থাকল সোমবারের ভিআইপি রোড। সকাল থেকে ঘণ্টা পাঁচেক যানজটে নাস্তানাবুদ হন ওই পথে আসা যাত্রীরা।

Advertisement

গোলাঘাটা-শ্রীভূমি ভূগর্ভস্থ পথের সিঁড়ি তৈরির কাজ আংশিক সম্পন্ন হয়েছে। এর পরে বাক্সের মতো কাঠামো নির্মাণ করতে প্রধান রাস্তা খোঁড়ার কাজ শুরু করতে চাইছে পূর্ত দফতর। তার জন্য কলকাতা এবং বিমানবন্দরের দিকে যাওয়ার মূল রাস্তা বন্ধ রেখেই যে কাজ করতে হবে, তা পূর্ত দফতর বিধাননগর কমিশনারেটকে জানিয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে তিন লেনের রাস্তা একসঙ্গে বন্ধ করে দিয়ে বিকল্প হিসেবে সার্ভিস রোড দিয়ে গাড়ি চালানোর পরিকল্পনা করেন কমিশনারেটের কর্তারা। এক বার কাজ শুরু হলে অন্তত তিন মাস তা বন্ধ থাকবে। এই পরিস্থিতিতে পরীক্ষামূলক ভাবে বিকল্প পথে গাড়ি চলাচলের প্রস্তুতি নিয়েছিল কমিশনারেট। কিন্তু কবে থেকে সেই পরীক্ষা শুরু হবে, তা নির্দিষ্ট করে জানাতে পারেননি কমিশনারেটের কর্তারা। সোমবার সকালে যার মাসুল গুনলেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ।

সোমবার সকালে, সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনে অনেকেই গাড়ি নিয়ে বেরিয়েছিলেন। তার সঙ্গে নিত্যযাত্রীর চাপ তো ছিলই। কলকাতামুখী ভিআইপি রোড ধরে তেঘরিয়া পার হতে না হতেই যানজটের কবলে পড়ে অসংখ্য যানবাহন। তার পরে রাস্তা যত গড়িয়েছে, গাড়ির চাকা ততই শ্লথ হয়েছে। উল্টোডাঙা থেকে জোড়া মন্দিরের দূরত্ব প্রায় ছ’কিলোমিটার। ভোগান্তির শিকার নিত্যযাত্রীরা জানান, এক সময়ে গাড়ির লাইন উল্টোডাঙা থেকে জোড়া মন্দির পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল। পরিস্থিতি এমনই হয় যে, মোটরবাইক যাওয়ারও জায়গা ছিল না। রঘুনাথপুর থেকে বাগুইআটি উড়ালপুল ধরেও সুরাহা হয়নি। বাগুইআটির উড়ালপুল পার হতেই এক ঘণ্টার বেশি সময় লেগে যায় তথ্যপ্রযুক্তি কর্মী সম্বিৎ ভট্টাচার্যের।

Advertisement

দমদমের মতিলাল কলোনির বাসিন্দা সুদীপ রায়ের অফিস চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে। সপ্তাহের প্রথম দিন যানজটের আশঙ্কায় সকাল সাড়ে ন’টাতেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। কিন্তু দুপুর ১২টা বেজে যায় তাঁর অফিস পৌঁছতে। বসিরহাটের বাসিন্দা আব্দুস সালামের পরিবারের এ দিন মুম্বইয়ের ট্রেন ধরার কথা ছিল। যানজটের ঠেলায় তা আর সম্ভব হয়নি। বাসের মধ্যে গলদঘর্ম অবস্থায় বাগুইআটির বাসিন্দা শিবানী গোস্বামী বলেন, ‘‘ছেলেকে স্কুল থেকে আনতে যাচ্ছি। আগে জানলে অটো ধরে যশোর রোডে চলে যেতাম।’’

ভিআইপি রোড ধরে প্রতিদিনই প্রচুর অ্যাম্বুল্যান্স যাতায়াত করে। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইপাসের বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে রোগীদের নিয়ে আসে ওই অ্যাম্বুল্যান্স। এ দিন সে ভাবেই রোগীকে নিয়ে আসতে গিয়ে প্রবল দুর্ভোগে পড়েন মাইকেলনগরের বাসিন্দা আয়ুষ্মান শাণ্ডিল্য। ভিআইপি রোডের যে ওই পরিস্থিতি হবে, আগে থেকে তা জানা থাকলে যশোর রোড ধরার উপায় খোলা ছিল ওই পরিবারের কাছেও। তবে সেখানেও বিপত্তি অপেক্ষা করে ছিল। কারণ, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন সেতুর উপরে ট্রামলাইনের মেরামতির কাজ চলায় সেখানেও যান চলাচল ছিল নিয়ন্ত্রিত।

এই অবস্থায় বিকেলেই ভিআইপি রোডের পরিস্থিতি নিয়ে বিধাননগর ট্র্যাফিক পুলিশ এবং পূর্ত দফতরের আধিকারিকেরা বৈঠকে বসেন। পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, এ দিনের অভিজ্ঞতা থেকে একসঙ্গে দু’দিকের রাস্তা বন্ধ রাখার আর পক্ষপাতী নয় প্রশাসন। পরিবর্তে আপাতত বিমানবন্দরমুখী রাস্তা বন্ধ রেখে কাজ করার কথা ভাবা হয়েছে। বিমানবন্দরমুখী রাস্তায় গাড়ির চাপ দেখা দিলে কলকাতামুখী রাস্তা দিয়ে যাতে কিছু গাড়ি বার করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। তবে কোনও কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। দুর্ভোগে পড়া যাত্রীদের বক্তব্য, রাস্তা যে বন্ধ থাকবে, তা বলা হলেও দিনটা জানানো হয়নি। তা হলে এত দুর্ভোগ পোহাতে হত না।

আগাম ঘোষণা নিয়ে সাধারণ মানুষের বক্তব্য প্রসঙ্গে ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘এফএম এবং কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে রাস্তা বন্ধের কথা ঘোষণা করা হয়েছিল। পরীক্ষামূলক প্রক্রিয়া বিকেলেই শেষ হয়েছে। এখন ভিআইপি রোডে যান চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। সাধারণ মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয়, তা সর্বতো ভাবে নিশ্চিত করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন