রেলের অধীন সংস্থা হয়েও যাত্রী পরিবহণে রেলেরই সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ কলকাতা মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের। অভিযোগ, রেলের সঙ্গে পারস্পরিক টানাপড়েনের জেরে মেট্রো দিনে প্রায় ১৭ হাজার বা মাসে প্রায় পাঁচ লক্ষ যাত্রী কম পাচ্ছে। সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে যাত্রী পরিবহণের স্বার্থে দমদম ও কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন লাগোয়া রেল স্টেশন থেকে সন্ধ্যের ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহ উত্তর এবং শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার সঙ্গে সংযোগকারী লোকাল ট্রেন চালানোর দাবি জানান মেট্রো কর্তৃপক্ষ। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে গত দেড় বছরে পূর্ব রেল কর্তৃপক্ষকে তিনটি চিঠি দিলেও কোনও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
মেট্রো সূত্রের খবর, প্রতিদিন গড়ে ৭২ হাজার যাত্রী দমদম মেট্রো স্টেশনে টোকেন বা স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করে প্রবেশ করেন। কিন্তু সারাদিনে যাত্রীদের বেরিয়ে যাওয়ার সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার কম । সারা মাসের বিচারে ওই সংখ্যা চার লক্ষেরও বেশি। একই ভাবে নিউ গড়িয়া সংলগ্ন কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন দিয়ে রোজ যত যাত্রী প্রবেশ করেন, বেরিয়ে যাওয়া যাত্রীর সংখ্যা তার তুলনায় প্রায় ৩ হাজার কম। মাসে সেই সংখ্যাটা দাঁড়ায় ৯০ হাজারের কাছাকাছি।
মেট্রো কর্তাদের অভিযোগ, উত্তরে বারাসত, ব্যারাকপুর, সোদপুর বা নৈহাটির মতো শহরতলির যাত্রীরা কলকাতার মূল বাণিজ্যিক এলাকাগুলিতে পৌঁছনোর জন্য মেট্রো ব্যবহার করলেও ফেরার সময়ে তাঁরা শিয়ালদহ দিয়ে ট্রেনে ফিরছেন। একই ভাবে দক্ষিণ শহরতলি থেকে আসা যাত্রীরা কর্মস্থলে পৌঁছনোর জন্য মেট্রো ব্যবহার করলেও বিকেলে ফেরার সময়ে মেট্রো এড়িয়ে চলছেন। দমদম বা নিউ গড়িয়া থেকে শহরতলির ট্রেনে উঠতে গিয়ে ঠাসাঠাসি ভিড়ের মুখে পড়তে হওয়ার আশঙ্কাই এর জন্য দায়ী বলে মনে করছেন মেট্রো কর্তারা। মেট্রো রেলের এক আধিকারিক বলেন, “দমদম এবং নিউ গড়িয়া থেকে সন্ধ্যায় উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলির দিকে কয়েকটি ট্রেন চালালেই ওই সমস্যার সমাধান হতে পারে। তাতে মেট্রো রেলের পাশাপাশি লাভবান হবে রেলও।” মেট্রো কর্তাদের দাবি, এতে যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে পরিষেবার উন্নতি হওয়ার পাশাপাশি চাপ কমতে পারে শিয়ালদহ স্টেশনের উপর থেকেও।
যাত্রীদেরও একাংশের মতে, নিউ গড়িয়া বা দমদমে যা ঠাসাঠাসি ভিড় থাকে, তাতে ওই দু’টি স্টেশন থেকে ট্রেনে ওঠা দুঃসাধ্য। বাড়তি লোকাল ট্রেন চালু হলে যাতায়াতের সুরাহা হয়। কষ্ট করে শিয়ালদহ যাওয়ার ঝক্কি কমে।
রেল সূত্রে খবর, কবি সুভাষ মেট্রো স্টেশন সংলগ্ন নিউ গড়িয়া রেল স্টেশনে একটি অতিরিক্ত প্ল্যাটফর্ম তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার মুখে। তবে, নতুন ট্রেন চালানোর বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। রেল কর্তাদের একাংশের দাবি, ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো পুরোদস্তুর চালু হলে যাত্রী পরিবহণের বিন্যাসের বদল হতে পারে। তাই সব দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “চিঠির কথা বলতে পারছি না, তবে সমস্যা নিরসনের জন্য আধিকারিক পর্যায়ে আলোচনা প্রয়োজন। মেট্রো কর্তৃপক্ষ চাইলে ওই আলোচনা হতে পারে।”