নাবালিকা পাচার চলছেই যৌনপল্লিতে

অভিযোগ, থানার টনক নড়েনি। ফলে টানা দু’বছর ধরে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসায় কাজ করতে হয়েছে ওই নাবালিকাকে।

Advertisement

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০১৮ ০২:৫০
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাংলাদেশ থেকে বছর চোদ্দোর কিশোরী রূপাকে (নাম পরিবর্তিত) অপহরণ করে এনে সোনাগাছির যৌনপল্লিতে তোলা হয়েছে— বছর দুই আগে বড়তলা থানার কাছে এমনই একটি অভিযোগ জমা পড়েছিল খাস সোনাগাছি থেকেই।

Advertisement

অভিযোগ, থানার টনক নড়েনি। ফলে টানা দু’বছর ধরে ইচ্ছের বিরুদ্ধে যৌন ব্যবসায় কাজ করতে হয়েছে ওই নাবালিকাকে। পরে খোদ রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরের ডিরেক্টরেটের অফিস থেকে লালবাজারের যুগ্ম কমিশনার (গোয়েন্দা)-কে বিষয়টি জানানো হলে লালবাজারের ‘অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট’ (এএইচটিইউ)-এর তৎপরতায় উদ্ধার করা হয় বাংলাদেশের ওই কিশোরীকে। শুধু এক জন নয়। ৪ মে এবং ৯ মে— দু’দিনের অভিযানে মোট চার জন নাবালিকাকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে পুলিশের একটি সূত্রের খবর। গ্রেফতার করা হয় দু’জন দালালকেও। তবে সূত্রের খবর, সোনাগাছিতে এখনও অনেক নাবালিকা রয়ে গিয়েছে। তাদের পাচারকারী এবং কয়েক জন দালালও এখনও অধরা। সোনাগাছির যৌনকর্মীদেরই একাংশের অভিযোগ, ওই পাচারকারী এবং দালালেরা এলাকায় ঘোরাফেরা করলেও পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একটি ই-মেল পাঠায় এ রাজ্যের সমাজকল্যাণ দফতরকে। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৪ জুন থেকে শেরপুরের বাসিন্দা, বছর চোদ্দোর এক কিশোরী নিখোঁজ। গত দু’বছর তার কোনও খোঁজ মেলেনি। কিন্তু সম্প্রতি মেয়েটির বাবার কাছে বিভিন্ন নম্বর থেকে বারবার খবর আসছে যে, তাঁদের মেয়ে কলকাতার সোনাগাছিতে রয়েছে!

Advertisement

এর পরে সমাজকল্যাণ দফতর যাচাই করে দেখে, বাংলাদেশের ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ই-মেলে যা লিখেছে, তা সত্যি। এর পরেই দফতর লালবাজারের গোয়েন্দা-প্রধানকে চিঠি পাঠায়। তার ভিত্তিতেই গত ৪ মে সোনাগাছিতে অভিযান চালায় লালবাজারের এএইচটিইউ। কিন্তু অভিযানের খবর আগেই পৌঁছে গিয়েছিল এলাকায়। ফলে যে ঠিকানায় রূপাকে পাওয়া যেতে পারে বলে খবর ছিল, সেখানে তার খোঁজ মেলেনি। সেখান থেকে অপর এক নাবালিকাকে উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশি অভিযানের খবর পেয়ে খোকা ওরফে আহিদ গাজি এবং নিশা নামে দুই দালাল ছ’জন যৌনকর্মীকে নিয়ে পালিয়ে যায় ভাঙড়ের দিকে। কিন্তু ধরা পড়ে যায় ভাঙড় থানার হাতে। নিশা তার বাবাকে ডেকে পরের দিনই জামিন পেয়ে যায়। সমাজকল্যাণ দফতরের এক অফিসারের কথায়, ‘‘বড়রা জামিন পেলেও নাবালিকাদের অভিভাবক ছাড়া কারও হাতে তুলে দেওয়া যায় না।’’ কিন্তু ভাঙড় থানা নাবালিকা চার জনকে কোনও পরিচয়পত্র যাচাই না করেই নিশার বাবার হাতে তুলে দেয়। ফলে থানা থেকে ছাড়া পেয়েই ছ’জনকে নিয়ে খোকা ও নিশা ফের পালিয়ে যায়। পরে এক ব্যক্তির সাহায্যে ৯ মে বাসন্তী থেকে লালবাজারের গোয়েন্দারা গিয়ে ওই ছ’জনকে উদ্ধার করে। এদের মধ্যেই ছিল বাংলাদেশি রূপা-সহ তিন নাবালিকা। বাকি তিন জন অবশ্য সাবালক। ফের গ্রেফতার করা হয় খোকা ও নিশাকে।

রূপার পাচারকারী জরিনা এবং ইসমাইলকে অবশ্য এখনও ধরা যায়নি। সোনাগাছি সূত্রের খবর, জরিনা, ইসমাইল ও খোকার মছলন্দপুরের তেঁতুলিয়াতেও ডেরা রয়েছে। এরা যখন খুশি বাংলাদেশে যায় এবং এ পারে ফিরে আসে। এরাই নাবালিকা পাচার করে সোনাগাছি এলাকায়। অভিযোগ, বড়তলা থানার কাছে এ সব তথ্যই রয়েছে। কিন্তু থানা কোনও কাজ করে না!

ব়ড়তলা থানার দাবি, এই মেয়েটি সম্পর্কে তাদের কাছে খবর ছিল না। বরং সোনাগাছিতে নজরদারি চালাতে দু’জন অফিসার এবং চার জন করে সেপাই ২৪ ঘণ্টার জন্য নিযুক্ত রয়েছেন। নাবালিকা আনা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত দেখা হয়। এ বিষয়ে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) প্রবীণ ত্রিপাঠীকে যোগাযোগের চেষ্টা হলে তিনি ফোন ধরেননি। টেক্সট বার্তারও উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন