ঘর ফিরে পেলেন পঁচাত্তর বছরের মূক ও বধির ‘নিখোঁজ’ বৃদ্ধা

এই ‘রহস্যে’র খোঁজ করতে গিয়ে যখন প্রায় ঘাম ছুটে গিয়েছে, তখনই বালি থানায় ফোন আসে বৃদ্ধার পরিজনেদের। পুলিশও জানতে পারে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধা। রবিবার রাতে বৈদ্যবাটীর চ্যাটার্জিপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা সাহাকে তাঁর দুই ছেলে তরুণ ও সঞ্জয়ের হাতে তুলে দেন আইসি বিকাশ দত্ত।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৮ ০৩:২৩
Share:

সন্ধ্যা সাহা

পঁচাত্তর বছরের মূক ও বধির বৃদ্ধা ইশারায় যে বর্ণনা দিচ্ছিলেন, তা দেখে পুলিশকর্মীদের মনে হয়েছিল কেউ তাঁকে গাড়ি থেকে নামিয়ে চলে গিয়েছেন। এমনকী, ওই বৃদ্ধার ব্যাগে মুর্শিদাবাদের দোকানের ঠিকানা দেখে সেখানেও যোগাযোগ করে পুলিশ।

Advertisement

এই ‘রহস্যে’র খোঁজ করতে গিয়ে যখন প্রায় ঘাম ছুটে গিয়েছে, তখনই বালি থানায় ফোন আসে বৃদ্ধার পরিজনেদের। পুলিশও জানতে পারে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে হারিয়ে গিয়েছেন বৃদ্ধা। রবিবার রাতে বৈদ্যবাটীর চ্যাটার্জিপাড়ার বাসিন্দা সন্ধ্যা সাহাকে তাঁর দুই ছেলে তরুণ ও সঞ্জয়ের হাতে তুলে দেন আইসি বিকাশ দত্ত।

পুলিশ জেনেছে, সন্ধ্যাদেবীর তিন ছেলে ও এক মেয়ে। তিন ছেলের কাছে ভাগাভাগি করে থাকতেন তিনি। এই সময়ে ছিলেন মেজ ছেলে সঞ্জয়ের কাছে। সঞ্জয় জানান, বেশ কিছু দিন ধরেই শ্রীরামপুরে মেয়ের বাড়িতে যেতে চাইছিলেন সন্ধ্যাদেবী। গত শনিবার দুপুরে ছেলে-বউমা একটি অনুষ্ঠান বাড়িতে যেতেই তিনি ব্যাগে জামাকাপড় ভরে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন। নিমন্ত্রণ থেকে ফিরে মাকে দেখতে না পেয়ে সর্বত্র খোঁজেন ছেলেরা। আর ওই দিনই রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ বালির জো‌ড়াঅশ্বত্থতলা এলাকায় সন্ধ্যাদেবীকে ঘুরতে দেখে আটকান স্থানীয়েরা। অভিজিৎ মাইতি বলেন, ‘‘সন্ধ্যায় এক মহিলার সঙ্গে ওঁকে এলাকায় ঘুরতে দেখা গিয়েছিল। রাতে দেখলাম একা ঘুরছেন। কথাও বলতে পারেন না। পুলিশকে জানাই।’’

Advertisement

শনিবার থেকে থানার মহিলা পুলিশকর্মীদের বিশ্রাম ঘরেই ঠাঁই হয়েছিল সন্ধ্যাদেবীর। জলখাবার থেকে দিনে-রাতের খাবার, সবই বরাদ্দ হয়েছিল মেস থেকে। রাতে তদন্তকারীরা চেষ্টা করেও তাঁর নাম-পরিচয় জানতে পারেননি। তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগে সালারের একটি দোকানের নাম লেখা ব্যাগ সেই সন্দেহ আরও বাড়িয়ে দেয়। সালার থানার মাধ্যমে দোকানটির সঙ্গে যোগাযোগ করেন বিকাশবাবু। তবে ব্যাগের ছবি দেখে দোকান মালিক জানান, ১০ বছর আগে তাঁরা ওই ব্যাগ ব্যবহার করতেন। এর পরে পুলিশ জেলার বিভিন্ন থানায় বৃদ্ধার ছবি পাঠায়। অন্য দিকে, মাকে না পেয়ে রবিবার শ্রীরামপুর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন সঞ্জয়বাবুরা। ওই রাতেই
টিভিতে এক ঝলক দেখে ফের ওই থানায় যোগাযোগ করে তাঁরা জানতে
পারেন বালি থানার কথা। জানা যায়, বৈদ্যবাটী থেকে বাসে চেপে বালিহল্টে চলে আসেন সন্ধ্যাদেবী।

শেষে রবিবার রাত ১১টা নাগাদ থানায় পৌঁছে মাকে ফিরে পান দুই ছেলে। বাড়ি যাওয়ার সময়ে থানা থেকে দেওয়া মিষ্টির প্যাকেট খুলে সন্দেশ বিকাশবাবুকে খাইয়ে দিয়ে কেঁদে ফেলেন সন্ধ্যাদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
আরও পড়ুন