জুনিয়রের লেখায় সিনিয়রকে স্মরণ

সেই ছেলেটি অনেক দিন পর্যন্ত ভেবেছিল, তার আসলে দু’জন বাবা। এক জন, যিনি শুধুই বকুনি দেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মে ২০১৮ ০৩:১৫
Share:

দর্শকাসন থেকে একটি ছোট্ট ছেলেকে ডেকে নিয়েছিলেন বাবা। তার পরে সেই ছেলেটির সঙ্গে কত খুনসুটি, হাসি, হাত মেলানো। তা দেখে অভিমানী ছেলেটি নিজের মাকে জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কই বাবা তো আমার সঙ্গে এত হেসে কথা বলে না!’

Advertisement

সেই ছেলেটি অনেক দিন পর্যন্ত ভেবেছিল, তার আসলে দু’জন বাবা। এক জন, যিনি শুধুই বকুনি দেন। আর এক জন বাবা হলেন পি সি সরকার (সিনিয়র), যিনি স্টেজে উঠে জাদু দেখিয়ে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন! শিশুটি এই পি সি সরকারকেই (সিনিয়র) ভালবাসত, তাঁর সমস্ত কিছুই অনুসরণ করার চেষ্টা করত। সে সবের ফাঁকে মনে মনে বাবার এই দুই সত্তাকে মিলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত। কালক্রমে সেই ছেলেটিই হয়ে উঠলেন পি সি সরকার (জুনিয়র)। তাজমহল, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ‘ভ্যানিশ’ করে সকলকে ঐন্দ্রজালিক মন্ত্রমুগ্ধতায় আচ্ছন্ন করার পরেও যিনি মনে করেন, তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় ম্যাজিক হল, ‘‘ঘরোয়া বাবা এবং পি সি সরকারকে (সিনিয়র) আমি এক করতে পেরেছি!’’

বাবাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ, দুষ্প্রাপ্য ছবি, ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকা পরিবারের অজস্র নথি, জাতীয়-আন্তর্জাতিক পুরস্কারের শংসাপত্রের প্রতিলিপির সংযোজন— এ সব নিয়েই পি সি সরকার (জুনিয়র) লিখেছেন, ‘পি সি সরকার: দ্য মহারাজা অব ম্যাজিক’। যা ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণের বৃত্ত ডিঙিয়ে ম্যাজিকের অন্দরমহলের চর্চায় ঢুকে গিয়েছে। শুক্রবার দক্ষিণ কলকাতার এক শপিং মলের এক বই বিপণিতে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশে সপরিবার উপস্থিত ছিলেন পি সি সরকার (জুনিয়র)।

Advertisement

আলাপচারিতা পর্বে লেখক জানাচ্ছিলেন, কী ভাবে বাবা ঘর বন্ধ করে অনুশীলন করতেন। সে ঘরে প্রবেশ নিষেধ ছিল বলে তিনি পাশের ঘরের আলমারিতে উঠে ঘুলঘুলির মধ্যে দিয়ে বাবার অনুশীলন দেখতেন লুকিয়ে লুকিয়ে। পরে ছেলেকেও সে ভাবেই তৈরি করেছিলেন। জাপানে গিয়ে বাবার হঠাৎ মৃত্যু হলে তাঁর ছেলে সেখানে ছুটে গিয়ে ম্যাজিকও দেখান। এর পরে বাকিটা ইতিহাস!

কথায় কথায় এল তাঁর সিংহ পোষার বহুল চর্চিত গল্প, রাজনীতির প্রসঙ্গও। তিনি জানালেন, ক্ষমতা থাকলে প্রথমেই খারাপ রাজনীতিকদের ‘ভ্যানিশ’ করে দিতেন! অনুষ্ঠান শেষে স্বভাবসিদ্ধ রসিকতায় পি সি সরকার এও জানালেন, মেয়েদের তাঁর কড়া নির্দেশ, ম্যাজিকের উত্তরাধিকার যেন প্রবহমান থাকে। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়েদের বলেছি, শিক্ষিত লোককে বিয়ে করো। ঘরে ঘরে ম্যাজিশিয়ান জন্মাক। আজ যেটা ম্যাজিক, সেটাই তো আগামী দিনের বিজ্ঞান!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন