বন্দি পোষ্যকে মুক্ত করতে কোর্টে মনিব

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি আবাসনের পাঁচতলায় ভাড়া থাকেন তেজাস বোলে নামে এক ব্যক্তি। বছর দুয়েক ধরে গোটা পাঁচেক বিড়াল পুষছেন তিনি।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৮ ০২:০৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

এক চিলতে ফ্ল্যাটে বন্দিদশায় পোষ্যেরা। তাই তাদের স্বাধীনতা চেয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে দ্বারস্থ হলেন পোষ্যের মনিব।

Advertisement

চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের একটি আবাসনের পাঁচতলায় ভাড়া থাকেন তেজাস বোলে নামে এক ব্যক্তি। বছর দুয়েক ধরে গোটা পাঁচেক বিড়াল পুষছেন তিনি। পোষ্যগুলি দীর্ঘদিন ধরে ফ্ল্যাটের ছাদে গিয়ে মলমূত্র ত্যাগ করে নোংরা করছে বলে অভিযোগ করছেন ফ্ল্যাটের অন্য বাসিন্দারা। আরও অভিযোগ, অন্য ভাড়াটিয়াদের বাড়িতে ঢুকে তাঁদের বিরক্ত করছে বিড়ালগুলি। তেজাসবাবুর অভিযোগ, বিড়ালগুলির ছাদে ওঠা বন্ধ করতে বাড়ির মালিক তিন মাস ধরে দরজায় তালা মেরে রেখেছেন। ফলে এক চিলতে ফ্ল্যাটে বিড়ালগুলি কার্যত বন্দি জীবন কাটাচ্ছে।

পোষ্যদের খোলামেলা ভাবে চলাফেরা করার দাবিতে ছাদের কোল্যাপসিবল দরজা খোলার আর্জি জানিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তেজাসবাবু। গত ৪ এপ্রিল কলকাতা জেলা ক্রেতা সুরক্ষা আদালতে (ইউনিট-১) বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেন তিনি। বিষয়টি ক্রেতা সুরক্ষা আইনের আওতাভুক্ত না হওয়ায় বিচারক শম্ভুনাথ চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার মামলাটি খারিজ করে দেন। তবে এক জন পশুপ্রেমিক হিসেবে তেজসবাবুর প্রশংসা করেন তিনি। এজলাসে উপস্থিত আইনজীবীরাও এমন ব্যতিক্রমী মামলায় বিস্মিত হন।

Advertisement

নিম্ন আদালত তাঁর দায়ের করা মামলা খারিজ করলেও বিষয়টির হেস্তনেস্ত চান তেজাস। তাঁর কথায়, ‘‘আদালতের রায়ের কপি এখনও হাতে পাইনি। তবে আমার পোষা বিড়ালগুলির জন্য যত দূর যেতে হয় যাব।’’ আবাসনের মালিক সাইফাভাই ফইজুল্লাভাইয়ের কথায়, ‘‘ওঁর মাথার ঠিক নেই। তাই বিড়ালের জন্য আদালতে গিয়েছেন।’’

চিত্তরঞ্জন অ্যাভনিউয়ের ওই আবাসনে গিয়ে জানা গেল, প্রায় দশ বছর ধরে এখানে ভাড়াটিয়া হিসাবে রয়েছেন তেজাসবাবু। একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মরত তিনি। বাড়িতে পোষা বিড়াল ছাড়া রয়েছেন তাঁর বৃদ্ধা মা। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, রাস্তার কুকুরদের নিয়মিত খাওয়ানো এবং পরিচর্যাও করেন তেজাসবাবু।

পোষ্যের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনাকে বিরল মনে করছেন মনোবিদ জয়রঞ্জন রাম। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘মানুষ এখন বড্ড একা। কুকুর, বিড়ালকে নিজের পরিবারের সদস্য হিসাবে তাই দেখেন অনেকেই। সে কারণেই ওই ভাড়াটিয়া তাঁর বিড়ালের জন্য আদালত পর্যন্ত দৌড়েছেন।’’ রাজ্য প্রাণী ও মৎস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শৈবাল চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘অসুস্থ কুকুর, বিড়ালের চিকিৎসা করাতে বেলগাছিয়ার পশু হাসপাতালে রোগীর ভিড় বেড়ে চলেছে। মাস কয়েক আগে পুলিশের নির্দেশে পাটুলি থানা এলাকার এক বিড়ালের মৃত্যুর পনেরো দিন পরে কবর থেকে দেহ তুলে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয় এখানে। এর থেকেই বোঝা যাচ্ছে, পোষ্যের প্রতি মানুষের ভালবাসা কতটা বাড়ছে। সেই দিক থেকে দেখলে তেজাসবাবুর আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ঘটনা স্বাভাবিক।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন