আদালতের পথে তিন অভিযুক্ত। বুধবার, বারাসতে। নিজস্ব চিত্র
হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের সূত্রে বাগুইআটির দেশবন্ধু নগরে ডাকাতির কিনারা করল পুলিশ।
দেশবন্ধু নগরের বাসিন্দা কার্তিক কুণ্ডুর স্ত্রী স্বপ্না পুলিশের কাছে দাবি করেছিলেন, রবিবার বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে তিন দুষ্কৃতী ঢুকে সোনা লুঠ করে চম্পট দেয়। প্রথম থেকেই তদন্তকারীরা আন্দাজ করেছিলেন, পরিবারের পরিচিত কেউ ছক কষে এ কাজ করেছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বুধবার রাতে যে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দমদমের বাসিন্দা আকাশ ওরফে সঞ্জীব বিশ্বাসের আগে থেকেই ওই বাড়িতে যাতায়াত ছিল। পুলিশ জানিয়েছে, আকাশই মূল পরিকল্পনা করেছিল। তার সঙ্গী ছিল ধৃত পাপাই ওরফে শুভাশিস কর্মকার এবং প্রভাকর নাইয়া।
পুলিশের বক্তব্য, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ ঘটনাটি ঘটে। সে সময়ে স্বপ্নার স্বামী, ভাইঝি বা পরিবারের অন্য কেউ বাড়িতে ছিলেন না। সাধারণত যে ভাবে ডাকাতি হয়, ঘটনাস্থলের ছবিও তেমন ছিল না। সেটাই অস্বাভাবিক ঠেকেছিল তদন্তকারীদের। পাশাপাশি স্বপ্নার বয়ান থেকেও যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছিল না। ঘটনার পরে তিনি বিপর্যস্ত ছিলেন। এই পরিস্থিতিতে সূত্র পেতে মহিলার মোবাইলের কল-লিস্ট ঘেঁটে দেখেন তদন্তকারীরা। খতিয়ে দেখা হয় হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের কথোপকথন। তাতেই মেলে সাফল্য। সেখানে এক জনের সঙ্গে কথোপকথন সন্দেহজনক মনে হয় তদন্তকারীদের। দেখা যায়, সেই এক জনই হল আকাশ। ওই দিন যে বাড়িতে কেউ থাকবে না, তা কৌশলে জেনে ফেলেছিল সে।
প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, দশ বছর আগে স্বপ্নার একমাত্র ছেলে মারা যায়। স্বপ্না বলেন, ‘‘আকাশ আমাকে ছোটমা বলে ডাকত। আমার বাড়ির নাড়িনক্ষত্র আকাশের চেনা। ধরা পড়ার পরে জানলাম, ও-ই মূল চক্রী!’’
আকাশের ঘনিষ্ঠেরা জানিয়েছেন, নাগেরবাজারে একটি চশমার দোকানে কাজ করত ওই যুবক। তাঁদের দাবি, সাত বছর আগে ওই দোকানে চশমা সারাতে এসেছিলেন স্বপ্না। তখন থেকেই আকাশের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ। উপহার দেওয়া, রেস্তরাঁ বা বাড়িতে ডেকে খাওয়ানো— সবই হত। কিন্তু ২০১৪ সালে সেই সম্পর্কে তিক্ততা তৈরি হয়। প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা করে আকাশকে বাড়িতে আসতে বারণ করে দেন কার্তিকবাবু। পুলিশের দাবি, সেই থেকেই ওই পরিবারের উপরে ধৃতের রাগ ছিল। তদন্তকারীরা জেনেছেন, সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপে অন্য এক জনের ছবি এবং নাম ভাঁড়িয়ে ফের স্বপ্নার সঙ্গে যোগাযোগ করে আকাশ। ওই মহিলার দুর্বল অনুভূতি সম্পর্কে অবহিত হওয়ায় সহজে প্রয়োজনীয় তথ্যও জোগাড় করে ফেলে।
এ দিন স্বপ্না বলেন, ‘‘আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করায় ২০১৪ সালের পরে আকাশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল না। সময় কাটানোর জন্য অনেকেই তো হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে। কী করে বুঝব এত বড় ক্ষতি হবে!’’
পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার সন্ধ্যায় দক্ষিণপাড়া মোড়ে জড়ো হয় আকাশ, পাপাই এবং প্রভাকর। লাল বাইকে চেপে তারা দেশবন্ধু নগর ডাকঘরের উল্টো দিকে গলির মুখে পৌঁছয়। তিন জনের মাথায় হেলমেট ছিল। কাজ সেরে ওই বাইকে চেপেই চম্পট দেয়। পুলিশ সূত্রের খবর, পাপাইয়ের সোনার দোকান রয়েছে। লুঠের গয়না পাচার করতে যাতে সুবিধা হয় সে জন্য তাকে বেছেছিল আকাশ। আর প্রভাকরের টাকার দরকার থাকায় সে ডাকাতির পরিকল্পনার শরিক হয়।
বুধবার ধৃতদের বারাসত আদালতে তোলা হয়। তাদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। বিধাননগর সিটি পুলিশের ডিসি (সদর) অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘আকাশকে জেরা করে বাকি দু’জনের নাম পাওয়া গিয়েছে। লুঠ হওয়া গয়না উদ্ধার করতে তদন্ত চলছে।’’