কেন্দ্রকে ডেঙ্গির তথ্য জানাতে অনীহা রাজ্যের

কলকাতা, বিধাননগরের মতো শহুরে এলাকায় ডেঙ্গির নির্ভুল এবং সময়োপযোগী তথ্য সংগ্রহের জন্য এ বার সফটওয়্যার ব্যবহার করছে স্বাস্থ্য দফতর। জানুয়ারি থেকেই তাতে তথ্য ঢোকানো শুরু হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

তথ্য গোপনের রোগ পিছু ছাড়ছে না বাংলার!

Advertisement

ডেঙ্গিতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কত, তা নিয়ে ঠিক তথ্য গোপন করায় কেন্দ্রের কোপে পড়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। তথ্য কেন গোপন করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল আদালতও। তাতে যে রাজ্যের টনক বিন্দুমাত্র নড়েছে তা কিন্তু নয়। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে তথ্য এ বারও আপলোড করা হবে না। শুধু তাই নয়, নিজেদের তথ্যভাণ্ডার সময়োপযোগী করে তুলতে নতুন যে সফটওয়্যার স্বাস্থ্য ভবন তৈরি করেছে তা কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিভাগও দেখতে পাবে না।

কলকাতা, বিধাননগরের মতো শহুরে এলাকায় ডেঙ্গির নির্ভুল এবং সময়োপযোগী তথ্য সংগ্রহের জন্য এ বার সফটওয়্যার ব্যবহার করছে স্বাস্থ্য দফতর। জানুয়ারি থেকেই তাতে তথ্য ঢোকানো শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি ১৫ দিন অন্তর কোন এলাকায় কত জ্বর হয়েছে, সেই তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে কোথায় বাড়তি নজরদারি জরুরি, সেই হিসেবও কষে দেবে সফটওয়্যার। নির্দিষ্ট পাসওয়ার্ডের সাহায্যে সেই তথ্য দেখতে পাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট পুরসভার চেয়ারম্যান, জেলাশাসক এবং স্বাস্থ্য দফতরের কয়েক জন কর্তা।

Advertisement

কিন্তু এই তথ্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অন্তর্গত সংশ্লিষ্ট দফতরকে কেন দেখার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না? স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা জানান, বিভিন্ন পুরসভার ডেঙ্গি নিয়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে যা পাওয়া যাচ্ছে সেটা শুধুই রাজ্যের জন্য।

স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে ডেঙ্গি-তথ্য গোপন রাখার পাশাপাশি প্রশ্ন উঠেছে পনেরো দিন অন্তর জ্বরের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি নিয়েও। এক চিকিৎসকের মন্তব্য, ডেঙ্গ ২ এবং ৪ ভাইরাস কোনও এলাকায় সংক্রমিত হলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। তাই তথ্য সংগ্রহে ১৫ দিনের ব্যবধান পরিস্থিতি প্রতিকূল করে তুলতে পারে। স্বাস্থ্য ভবনের এক জনস্বাস্থ্য অধিকর্তা বলেন, ‘‘প্রয়োজন মতো আমরা তথ্য সংগ্রহের হার বাড়াতেও পারি। সবই নির্ভর করবে পরিস্থিতির উপরে।’’

কোথায় কোথায় কোন ধরনের মশার বংশবৃদ্ধি হচ্ছে, কোথায় মশা মারার অভিযানে গতি আনা দরকার, কোথায় সচেতনতার প্রয়োজন আছে— সেটাও বলে দেবে ওই সফটওয়্যার। তার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট জেলা স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা সমন্বয়ের ভিত্তিতে কাজ করবে। রাজ্যের বিভিন্ন পুরসভায় নজরদারি এ ভাবে হলেও কলকাতা পুরসভার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য দফতরের প্রশ্ন থাকলে, সেটা দেখবে খোদ পুরসভাই। এর ফলে সামগ্রিক সমন্বয়ের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে কি না, তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ।

ডেঙ্গি মোকাবিলা নিয়ে একাধিক বিভাগকে নবান্ন থেকে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তার পরেও তথ্য আদান-প্রদান বা সমন্বয়ে প্রশ্ন থাকছেই, মনে করছেন প্রশাসনের একাংশ। পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ বিষয় হওয়া সত্ত্বেও কেন তথ্য ভাগে কেন্দ্রের সঙ্গে অনীহা রাজ্যের, তা নিয়েও ধোঁয়াশা কাটছে না বলে মনে করছেন একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন