পাভলভেও ‘নির্বিকার’ শুভব্রত

শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পাভলভ হাসপাতালে আসেন শুভব্রত। হাসপাতালে ঢোকার সময়ে তিনি পুলিশকর্মীদের কোনও প্রশ্ন না করেই ভিতরে ঢুকে যান। রাতে চুপচাপ খাওয়াদাওয়া সেরে পুরুষ ওয়ার্ডের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:৫৪
Share:

শুভব্রত মজুমদার। —ফাইল চিত্র।

মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন জেনেও তাঁর মধ্যে কোনও তাপ-উত্তাপ নেই। বরং চিকিৎসকদের সঙ্গে সব রকম সহযোগিতা করছেন বেহালার শুভব্রত মজুমদার। তবে তাঁর বায়না একটাই, তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চান। কারণ, বাড়িতে রয়েছেন নব্বই ছুঁইছুঁই বৃদ্ধ বাবা।

Advertisement

শুক্রবার রাত সাড়ে আটটা নাগাদ পাভলভ হাসপাতালে আসেন শুভব্রত। হাসপাতালে ঢোকার সময়ে তিনি পুলিশকর্মীদের কোনও প্রশ্ন না করেই ভিতরে ঢুকে যান। রাতে চুপচাপ খাওয়াদাওয়া সেরে পুরুষ ওয়ার্ডের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়েন। শুভব্রতের আচরণ এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে, তাঁকে ঘরে বন্ধ করে না রেখে ঘুরে বেড়ানোর অনুমতি দিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে হাসপাতাল চত্বরেই নিজের মতো করে হেঁটে বেড়িয়েছেন বেহালার ওই যুবক। জলখাবারে পাউরুটি, ডিম আর দুপুরে মাছের ঝোল দিয়ে ভাত খেয়েছেন তৃপ্তি করেই। মাঝে ঘণ্টা দুয়েক চিকিৎসকদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি।

ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলে প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসকদের অনুমান, শুভব্রত স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত। এমন অনেক কথাই তিনি জানিয়েছেন যার সঙ্গে বাস্তবের কোনও মিল থাকা সম্ভব নয়। তবে তাঁর কথার মধ্যে কতটা কল্পনা আর কতটা সত্যি, তা যাচাইয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা। পাভলভ হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদ বলেন, ‘‘শুভব্রতের কথা যাচাই করার জন্য ওঁর সঙ্গে আরও গল্প করতে হবে। সমস্যা বুঝতে সময় লাগবে। সেই প্রক্রিয়া চলছে।’’

Advertisement

‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে মৃতদেহ সংরক্ষণের বিষয়ে দীর্ঘদিন পড়াশোনা করে শুভব্রত ওই বিষয়ের প্রতি এতটাই বিশ্বাসী হয়ে পড়েছিলেন যে, তিনি সেটিকে কেন্দ্র করে নিজস্ব একটি জগৎ তৈরি করে সেখানেই বিচরণ করতেন। শুভব্রতের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে এমনটাই মনে করছেন এসএসকেএমের ‘ইনস্টিটিউট অব সাইকিয়াট্রি’র অধিকর্তা প্রদীপ সাহা। তাঁকে ওই যুবক জানিয়েছেন, ব্রিটেনকে পুরোপুরি অন্ধকারে রেখে ‘ক্রায়োনিক্স’ পদ্ধতিতে দেহ সংরক্ষণের সত্ত্ব নেওয়ার জন্য জার্মানি ও রাশিয়া আলোচনা চালাচ্ছে। যার জেরে যে কোনও সময়ে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে। কেন ওই দুই দেশ এমন আচরণ করছে, তা জানতেই তিনি বিদেশে পাড়ি দিয়েছিলেন বলে দাবি শুভব্রতের।

নিজের তৈরি করা জগতে বিচরণ করলেও শুভব্রতের মাথা কিন্তু খুব ঠান্ডা। পাভলভ হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, রবিনসন স্ট্রিট-কাণ্ডের পার্থ দে হাসপাতালে ভর্তি কিংবা চিকিৎসকের কথা শোনার পরেই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন। শুভব্রত কিন্তু তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখাননি। বরং তিনি যথেষ্ট শান্ত ভাবে কথা বলেছেন। সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। যদিও তাঁর মায়ের মৃত্যু কিংবা দেহ সংরক্ষণ প্রসঙ্গে এ দিন কোনও কথা জিজ্ঞাসা করা হয়নি শুভব্রতকে। বেহালায় তাঁর প্রতিবেশীরা দাবি করেছিলেন, কয়েক বছর আগে এক তুতো বোনকে বিয়ে করে বাড়ি ছেড়েছিলেন শুভব্রত। এ দিন চিকিৎসকেরা স্ত্রী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে শুভব্রত অবশ্য দাবি করেন, তিনি অবিবাহিত। তবে শীঘ্রই বিয়ে করবেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন