সুইস সংস্থাকে ‘ঠকিয়ে’ ধৃত শহরের যুবক

বৃহস্পতিবার রাতে দীপক বর্মা নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তবে অধরা অনেকেই। লোপাট হওয়া জিনিসপত্রেরও হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ২৬ মে ২০১৮ ০৩:৩৩
Share:

প্রতীকী ছবি।

কলকাতার প্রতারণার জাল এ বার দেশ, মহাদেশের গণ্ডি ছা়ড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে সুইৎজারল্যান্ডে!

Advertisement

শুধু তা-ই নয়, প্রতারণার পরিমাণ দেখেও তাজ্জব গোয়েন্দারা। পুলিশ সূত্রের খবর, ভুয়ো সংস্থা খুলে এই সুইস সংস্থার প্রায় ৮৯ কোটি টাকার জিনিস লোপাট করেছে এই শহরের এক দল প্রতারক। অভিযোগ পেয়ে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল গড়েছে লালবাজার। তারা বৃহস্পতিবার রাতে দীপক বর্মা নামে এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। তবে অধরা অনেকেই। লোপাট হওয়া জিনিসপত্রেরও হদিস মেলেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, সম্প্রতি কলকাতা পুলিশের কাছে সুইৎজারল্যান্ডের জুরিখের ক্রেডিট সুইস লিমিটেডের সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট পিটার কেরিলি অভিযোগ জানান, বন্দর এলাকার একটি সংস্থা ব্যবসায়িক চুক্তি করে ৮৮ কোটি ৭১ লক্ষ ৭৪ হাজার টাকার মালপত্র গায়েব করে দিয়েছে।
প্রথমে গার্ডেনরিচ থানাকে দিয়ে প্রাথমিক ভাবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হয়। অভিযুক্ত সংস্থার গুদাম রয়েছে বন্দর এলাকার হাইড রোড এবং তারাতলা রোডে। অভিযোগের সারবত্তা মেলার পরে ১৬ মে পশ্চিম বন্দর থানায় সাতটি ধারায় মামলা রুজু হয়। লালবাজারের কর্তাদের নির্দেশে কলকাতা পুলিশের বন্দর ডিভিশনের বাছাই করা অফিসারদের নিয়ে একটি বিশেষ দল তৈরি করা হয় পশ্চিম বন্দর থানার ওসি-র নেতৃত্বে।

Advertisement

লালবাজারের এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘কলকাতার কোন কোন সংস্থা ওই প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত, তা প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে। এক জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজ চলছে।’’ ওই সুইস সংস্থার আইনজীবী সঞ্জয় বন্দোপাধ্যায় জানান, ওই ভুয়ো সংস্থার দুই প্রতারক শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছে।

পুলিশে দায়ের করা অভিযোগে পিটার জানিয়েছেন, কলকাতার ‘ভৌমিক এজেন্সি’ নামে একটি সংস্থা তাঁদের ক্লিয়ারিং এজেন্ট ছিল। ২০১৭ সালের মার্চ থেকে দফায় দফায় কলকাতার ওই সংস্থাকে ওই টাকার প্লাস্টিক দানা এবং জিঙ্ক পাঠানো হয়েছে। যা গ্রহণও করেছে ওই এজেন্সি এবং তাদের সহকারী তিনটি সংস্থা। সুইৎজারল্যান্ডের সংস্থার অভিযোগ, বকেয়া টাকা চেয়ে তাগিদা দেওয়া হলেও তা মেলেনি। পরে তাঁরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ওই সংস্থাটি ভুয়ো। ধৃত দীপক একদা সেখানে চাকরি করত। ২০১০ সালে শুভাশিসবাবু মারা যাওয়ার পরে তাঁর নাম ব্যবহার করে দীপকের নামে ওই সংস্থা খুলেছিল প্রতারকেরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের দাবি, ওই প্রতারণা চক্রে প্রায় ছ’জন সদস্য রয়েছে। তারাই দীপকের নাম ব্যবহার করে। ভুয়ো নথি দিয়ে সংস্থা খোলার পাশাপাশি বিদেশি অভিযোগকারী সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করে। অভিযোগকারীদের তরফে বারবার তাগাদা দেওয়া হলেও তাতে কর্ণপাত করেনি অভিযুক্তেরা।

পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, সুইস সংস্থার সঙ্গে ব্রিটিশ একটি সংস্থার চুক্তি হয় কলকাতায় মাল পাঠানোর ক্ষেত্রে। কলকাতার এজেন্ট হয় ভৌমিক এজেন্সি। প্রতারণার উদ্দেশ্য নিয়েই ভুয়ো নথি ব্যবহার করে এই সংস্থা খোলা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দীপকের নাগাল পেয়েছেন তদন্তকারী অফিসারেরা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে জেরা করে জানার চেষ্টা চলছে ওই ভুয়ো সংস্থা সুইস সংস্থা ছাড়াও অন্য কোনও সংস্থার সঙ্গে প্রতারণা করেছে কি না। তদন্তকারীদের অনুমান, জামিনের আবেদন করা হলেও অভিযোগ দায়ের হয়েছে এই খবর পেয়ে গা ঢাকা দিয়েছিল অভিযুক্তেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন