অ্যাপ নির্ভর ‘কার পুল’ নিয়ে আঁধারে কর্তৃপক্ষ

কম খরচের যাত্রা নাকি নিরাপত্তা?— ওই অ্যাপ নির্ভর পরিষেবার ব্যবহার নিয়ে তৈরি হয়েছে এমনই ধন্দ।

Advertisement

সৌরভ দত্ত

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৮ ০২:৩৬
Share:

কম খরচে ‘কার পুলের’ ধাঁচে তথ্যপ্রযুক্তি তালুকে তৈরি হয়েছে নয়া অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা। কেউ কেউ তা ব্যবহারও শুরু করেছেন। অথচ এ বিষয়ে জানেই না প্রশাসন।

Advertisement

কম খরচের যাত্রা নাকি নিরাপত্তা?— ওই অ্যাপ নির্ভর পরিষেবার ব্যবহার নিয়ে তৈরি হয়েছে এমনই ধন্দ। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি তালুকের কর্মীদের কথা মাথায় রেখে ওই পরিষেবা চালু করেছে একটি সংস্থা। অফিস যাতায়াতে অনেকে নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করেন। কারও ভরসা ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি বা বাইক। নতুন অ্যাপ দু’পক্ষকেই বাড়তি ‘লাভের’ সন্ধান দিচ্ছে। অ্যাপটি ডাউনলোডের পরে নাম নথিভুক্তকরণের সময়ে গাড়ি বা বাইকে মালিক না সওয়ারি কে রয়েছেন তা এবং গন্তব্য জানাতে হচ্ছে। সেই পথে কোনও ইচ্ছুক সওয়ারি থাকলে অ্যাপে চলে আসছে নোটিফিকেশন। দু’জনের সম্মতির ভিত্তিতে গাড়িতে উঠছেন সওয়ারি। ১৪ কিলোমিটার যেতে গাড়ির মালিককে তাঁকে দিতে হচ্ছে ৫৫ টাকা। বাইক হলে ৪০ টাকা। যা ভাড়া উঠছে তার ৬ শতাংশ নিচ্ছে ওই সংস্থা।

তবে সেক্টর ফাইভে কর্মরত ঊষসী দাসের বক্তব্য, ‘‘অপরিচিত মানুষের ব্যক্তিগত গাড়িতে যাতায়াত কি নিরাপদ? যাঁর গাড়িতে চড়ছি তাঁর নাম, অফিসের ই-মেল আইডি জানতে পারছি। অফিসের ই-মেলের মাধ্যমেই পরিচয় যাচাই করা হচ্ছে। কিন্তু সেটি যে ভুয়ো নয় সে নিশ্চয়তা কোথায়?’’

Advertisement

বিধাননগর কমিশনারেটের এক কর্তা বলেন, ‘‘এ ধরনের কোনও অ্যাপ যে চালু হয়েছে তা জানা নেই। অন্য অ্যাপ নির্ভর পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থার মতো নতুন সংস্থাকেও নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে।’’ অ্যাপের কার্যকলাপ সম্পর্কে কোনও ধারণা নেই বলে জানিয়েছেন নবদিগন্তের চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনও।

এক তথ্যপ্রযুক্তি কর্মীর কথায়, ‘‘পুরোটা মোবাইল নির্ভর। কারও মোবাইল চুরি হলে, ওই অ্যাপ তো অন্য কেউও ব্যবহার করতে পারে। তখন?’’ইকোস্পেসে কর্মরত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী শর্মিলা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘ই-মেল রেজিস্ট্রেশনে বেশির ভাগই কর্পোরেট আইডি ব্যবহার করি। কাজেই বেআইনি কিছু হলে সংস্থার নাম জড়িয়ে যাবে। সে দিকটাও ভাবা দরকার।’’

তবে উল্টো মতও রয়েছে। এক কর্পোরেট সংস্থার কর্মী কসবার বাসিন্দা তমাল রায় জানান, গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি ওই অ্যাপ ব্যবহার করছেন। তাঁর কথায়, ‘‘একা গাড়ি চালিয়ে অফিস যেতাম। এখন প্রতিদিন অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হচ্ছে। সঙ্গে গল্প করতে করতে অফিস পৌঁছতে ভালই লাগছে। গাড়িতে চড়ার পরেই যাত্রী অ্যাপের ওয়ালেটের মাধ্যমে টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছেন। যাত্রা শেষে তা আমার ওয়ালেটে চলে আসছে।’’ পাশাপাশি তমালের প্রশ্ন, ‘‘গাড়ির মালিক বা সওয়ারি কোন সংস্থায় কাজ করেন, এটুকু ছাড়া আর কোনও তথ্য পাওয়ার সুযোগ নেই। কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব কী অ্যাপ নেবে?’’

অ্যাপের মার্কেটিং ম্যানেজার সৌমেন গোলদারের কথায়, ‘‘এটা ফেসবুকের মতো মুক্ত প্ল্যাটফর্ম। উভয় পক্ষের সম্মতিতে চালক সওয়ারি বেছে নিচ্ছেন। কোনও জোর নেই। একটি নির্দিষ্ট রুটে এক জনের নাম তো দেওয়া হচ্ছে না। যতজন ইচ্ছুক সওয়ারি বা চালক রয়েছেন, তাঁদের সকলের নাম দেখানো হয়। জিপিএস প্রযুক্তিতে ট্র্যাকিংয়ের সুযোগও রয়েছে।’’ সে রকম পরিস্থিতি তৈরি হলে অ্যাপের মাধ্যমে নিকট আত্মীয়কে জানানো যেতে পারে বলে দাবি সৌমেনবাবুর।

রাজ্য পরিবহণ দফতরের এক আধিকারিক জানান, অ্যাপ নির্ভর পরিষেবার ক্ষেত্রে ওডিটিএ (অন ডিমান্ড ট্রান্সপোর্ট টেকনোলজি এগ্রিগেটর রুলস) লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। এই লাইসেন্স পাওয়ার অন্যতম শর্ত হল, কোন রুটে গাড়ি চলছে, কে ওই গাড়ি চালাচ্ছেন, ব্যবহারকারী কারা, গাড়ির গন্তব্য সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য রাখতে হবে। কী ভাবে এই তথ্য রাখা হচ্ছে তা-ও জানাতে হবে। পাশাপাশি, কোনও ঘটনা ঘটলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রশ্নে সংস্থার কী নীতি রয়েছে তা-ও স্পষ্ট করতে হয়।

এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সৌমেন বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন