Calcutta News

ভাগাড়ের মাংস খেলে কিন্তু ভয়ঙ্কর বিপদ, বলছেন বিশেষজ্ঞ

কোত্থাও কিছু নেই, আচমকা পেটের ব্যথায় কাতরে উঠতে হল। এর পর শুরু হল ঘন ঘন বাথরুমে দৌড়নো। এর পর স্টুলের বদলে রক্ত বেরোন শুরু হল।

Advertisement

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৮ ১৯:০৩
Share:

এই মাংস খেলে পেটের সংক্রমণ থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা, এমনকী, শরীর জুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সেপ্টিসিমিয়ার মতো গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি থাকে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আহ, এতক্ষণে প্রাণটা জুড়লো। কড়া ভাজা ডিম আর মাটনের সঙ্গে চিলি টম্যাটো স্যসের যুগলবন্দি, সঙ্গত করছে মিহি করে কুঁচোন পেঁয়াজ, শসা আর কাঁচা লঙ্কা। জিভের আরাম, প্রাণের শান্তি। কিন্তু ওই এগ-মাটন রোলের মাংসটা যদি ভাগাড় থেকে আসে? ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া মরা শুয়োর, গরু বা মোষের পচা মাংস দিয়ে তৈরি ফাস্ট ফুড মারাত্মক অসুখে কাবু করে দিতে পারে আপনাকে! সাবধান করলেন মেডিসিনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস

Advertisement

কোত্থাও কিছু নেই, আচমকা পেটের ব্যথায় কাতরে উঠতে হল। এর পর শুরু হল ঘন ঘন বাথরুমে দৌড়নো। এর পর স্টুলের বদলে রক্ত বেরোন শুরু হল। অভিযোগ উঠেছে, কলকাতা ও আশপাশের অঞ্চলে ভাগাড়ে ফেলে যাওয়া মরা পশুর মাংস অবাধে ব্যবহার করা হচ্ছে। রাস্তার কিছু রোলের দোকান থেকে শুরু করে ছোটখাট রেস্তোরাঁ— নানান জায়গায় এই মরা পশুর মাংস দিয়ে নানান উপাদেয় পদ রান্না করা হচ্ছে বলে তীব্র সন্দেহ দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবারই কলকাতার রাজাবাজারের একটি কোল্ড স্টোরেজ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০ হাজার কেজি মৃত পশুর মাংস। পুলিশের কাছে ধৃতেরা স্বীকার করেছে, মৃত পশুর মাংসের মধ্যে কুকুরের মাংসও আছে।

এই মাংস খেলে নানা শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। পেটের সংক্রমণ থেকে শুরু করে মস্তিষ্কের জটিল সমস্যা, এমনকী, শরীর জুড়ে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে সেপ্টিসিমিয়ার মতো গুরুতর সমস্যার ঝুঁকি থাকে। অথচ, আমরা নিজেদের অজান্তে অবলীলায় সেই সব বিষ চেটেপুটে সাবাড় করছি।

Advertisement

ভাগাড়ে পড়ে থাকা মরা গরু, কুকুর, বেড়াল, মোষ, শুয়োরের আধ পচা মাংস কেটে ধুয়ে-মুছে সাফ করে প্যাকেটবন্দি করে বিক্রি হচ্ছে। এই সব মাংসে থাকে সালমোনেল্লা, সিগেলা, ক্লসট্রিডিয়াম, ই-কোলাই, ব্যাসিলাস-এর মতো ভয়ঙ্কর সব জীবাণু। এ ছাড়া থাকে টিনিয়াসোলিয়াম নামে এক কৃমির ডিম। ভাবছেন, রান্না করার পর তো জীবাণুদের মরে যাওয়ার কথা, তা হলে ব্যাক্টিরিয়া, ভাইরাস বা ছত্রাকে কী ভাবে আমাদের শরীরের ক্ষতি করবে?

কিন্তু, রান্না করার সময় কিছু কিছু জীবাণু মারা গেলেও তাদের শরীর থেকে টক্সিন বেরিয়ে খাবারকে বিষাক্ত করে দেয়। এই মাংস খেলে যে সব শারীরিক সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হল:

• ভয়ঙ্কর পেটের যন্ত্রণা,

• বমি ও বমি বমি ভাব,

• জলের মতো পাতলা মলত্যাগ,

• মলের সঙ্গে রক্ত,

• চোখে ব্যথা ও মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়।

এখানেই শেষ নয়, বাড়াবাড়ি রকমের ইনফেকশন থেকে সেপ্টিসিমিয়ার মতো জীবনহানিকর সমস্যাও দেখা দিতে পারে। অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করে সুচিকিৎসা না করালে রোগীর মৃত্যুর আশঙ্কা বাড়ে।

এই সব উপসর্গ তাৎক্ষণিক ভাবে দেখা যায়। এ ছাড়াও কিছু দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাগাড়ের মাংস থেকে ফিতাকৃমির ডিম শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কে পৌঁছে গিয়ে নিউরোসিস্টিসারকোসিস নামে জটিল সমস্যার সূত্রপাত হয়। এর ফলে রোগী মাঝে মাঝেই অজ্ঞান হয়ে যায়। মৃগীর মতো খিঁচুনি ও জ্ঞান হারানোর ঝুঁকি থাকে। মাথাব্যথা ও চোখে দেখার সমস্যা হতে পারে। এমনকী, পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকে। এ ছাড়া ক্রনিক লিভারের অসুখ, হার্টের অসুখ, ফুসফুসের সমস্যা, টিবি-সহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ে। কোনও রকম শারীরিক সমস্যা হলে অবশ্যই ডাক্তার দেখান।

ফুড পয়জনিং হলে দ্রুত রোগ ধরা পড়ে চিকিৎসাও শুরু করা যায়। কিন্তু নিউরোসিস্টিসারকোসিস এমন নিঃশব্দে শুরু হয় যে রোগ ধরা মুশকিল হয়ে পড়ে। অবশ্য অনেক পচা মাংসে থাকা কিছু ব্যাক্টিরিয়া এতটাই শক্তিশালী যে অনেক সময় অ্যান্টিবায়োটিক দিয়েও বিশেষ কাজ হয় না।

এখনকার দিনে বাইরের খাবার ছাড়া চলা মুশকিল। চেনা ও বিশ্বাসযোগ্য দোকান ছাড়া খাবার খাবেন না। রাস্তার দোকানের মাংস না খাওয়াই ভাল। তবে সরকারি দফতরকে এই ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। বাইরের খাবার বর্জন করুন, টাটকা রান্না করা খাবার খান। পচা বাসি মাংস শকুন বা শেয়াল হজম করলেও করতে পারে, আমরা মানুষেরা নয়। সুতরাং খাওয়ার ব্যাপারে সতর্কতা মেনে চলুন, ভাল থাকুন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন