বিভিন্ন বিনোদন পার্কে বা মেলায় জয় রাইডের মজা নিতে গিয়ে শিশুরা দুর্ঘটনার কবলে পড়লে প্রায় সব ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। কিন্তু ওই সব সংস্থা অনুমোদন পেল কী করে, তার কোনও উত্তর নেই পুরসভাগুলির কর্তৃপক্ষের কাছে।
গত রবিবার নিউ টাউনের ইকো পার্কে ঝোড়ো হাওয়ায় ‘ট্রাম্পোলিন মিকি মাউস’ রাইড উল্টে জখম হয় অন্তত ১৩ জন শিশু। তাদের মধ্যে বাইপাস সংলগ্ন একটি হাসপাতালে এখনও সঙ্কটজনক অবস্থায় চিকিৎসা চলছে তিন বছরের রিয়ান নায়েকের। এর আগে ফেব্রুয়ারিতে খিদিরপুরে ভূকৈলাস মেলার মাঠে ‘ময়ূরপঙ্খী’ রাইড থেকে পড়ে গুরুতর জখম হয়েছিল পাঁচ বছরের সমৃদ্ধি মিশ্র। ইকো পার্কের দুর্ঘটনার পরে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘পার্কের রাইডগুলির নিরাপত্তার দিকটি ইঞ্জিনিয়ারেরা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেবেন। তার পরে রাজ্য সরকার ঠিক করবে রাইড চলবে কি না।’’ আর খিদিরপুরের ঘটনার প্রেক্ষিতে ভূকৈলাস দেবোত্তর এস্টেটের ম্যানেজিং সেবায়েত সত্যবিভাষ ঘোষালের বক্তব্য ছিল, ‘‘জয় রাইড সংস্থার তরফে যে ফিটনেস শংসাপত্র দেওয়া হয়েছিল, তা যাচাই করা হয়নি। ভবিষ্যতে এমন রাইড ব্যবহারের ক্ষেত্রে নামী বিশেষজ্ঞ কমিটির অনুমতি নেওয়া হবে!’’
কিন্তু পরপর দুর্ঘটনার পরেও কি হুঁশ ফিরেছে পুরসভাগুলির? পুর কর্তৃপক্ষের বক্তব্যে অন্তত তেমন ইঙ্গিত মেলেনি। কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানান, পুরসভার জায়গায় মেলা হলে সেখানে এ ধরনের রাইডের নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখেন পুর ইঞ্জিনিয়ারেরা। কিন্তু মাঠের মালিক অন্য কেউ হলে মেলার রাইডের স্বাস্থ্য যাচাইয়ের ক্ষেত্রে তা করা হয় না। ওই আধিকারিকের বক্তব্য, পুর আইনে সেই সংস্থান নেই। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় বর্তায় মেলা কমিটির উপরেই।
কলকাতা, বিধাননগর, দক্ষিণ দমদম— সর্বত্র এই ধারা অব্যাহত। দক্ষিণ দমদমের পুরপ্রধান বলেন, ‘‘সাধারণত এ কাজ দমকল এবং পুলিশের। আগামী দিনে এ ধরনের মেলা হলে ইঞ্জিনিয়ার পাঠিয়ে নিরীক্ষণের বিষয়টি মাথায় থাকবে।’’ বিধাননগর পুরসভার এক কর্তা জানান, পুর এলাকায় মেলা করার জন্য উদ্যোক্তাদের অনুমতি নিতে হয়। কিন্তু সেই মেলার রাইডগুলি নিরাপদ কি না, তা খতিয়ে দেখার পরিকাঠামো পুর প্রশাসনের নেই। প্রতি বছর বিধাননগর পুর কর্তৃপক্ষ করুণাময়ীতে যে মেলার আয়োজন করেন, সেখানেও সেই সুযোগ নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে তাঁদেরও ‘রক্ষাকবচ’ বেসরকারি সংস্থার দেখানো সেই ফিটনেস শংসাপত্র! পুর নিগমের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘রাইডের বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার থেকে ফিটনেস শংসাপত্র চাওয়া হয়।’’
এই শংসাপত্র কী ভাবে পাওয়া যায়? দমদম, সিঁথি-সহ উত্তর কলকাতার একাধিক জায়গায় মেলার আয়োজক এক সংস্থার কর্তার দাবি, প্রশাসনিক স্তরে স্বীকৃত সংস্থার থেকে ফিটনেস শংসাপত্র নেওয়া হয়। সিঁথি অঞ্চলে এই মূহূর্তে মেলা করছে ওই সংস্থাটি। সংস্থার কর্তা বলেন, ‘‘ইকো পার্কে যা ঘটেছে তা আমাদের কাছেও অবিশ্বাস্য! রাইড চলাকালীন সংস্থার প্রতিনিধিদের সতর্ক থাকতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগের আভাস পেলে রাইড বন্ধ করে দেওয়া হয়।’’ তবে তাঁর মত, অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু পুলিশ-প্রশাসনই বা সক্রিয় হবে না কেন? ইকো পার্কের ঘটনার পরে বিধাননগর পুলিশের ডিসি (জোন ২) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এ ধরনের মেলায় যে সব সংস্থা রাইড দেয়, তাদের সতর্ক করার জন্য থানাগুলিকে বলা হয়েছে।’’