ময়না-তদন্তে কেন ধরা পড়েনি খুন, বিভ্রান্তি

গত ১৭ এপ্রিল রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাঁশদ্রোণীতে একটি আবাসনের দোতলার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মমতা আগরওয়াল নামে এক মহিলার দেহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২৭
Share:

(বাঁ দিকে) এ ভাবেই উদ্ধার হয়েছিল মমতা আগরওয়ালের দেহ। (ডান দিকে) তাঁর ছেলে আয়ুষের গালে আঁচড় দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের। নিজস্ব চিত্র

ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট বলেছিল, খুন নয়। পড়ে গিয়ে চোট লাগে আর তাতেই মৃত্যু হয় বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা মমতা আগরওয়ালের। এই রিপোর্টের ‘ভুলেই’ খুনের ঘটনা স্বাভাবিক মৃত্যু হিসেবে থেকে যাচ্ছিল খাতায়। যদিও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি বলেই কলকাতা পুলিশ কিনারা করতে পেরেছে মমতাদেবীর খুনের। মাকে খুনের অভিযোগে ধরা পড়েছে তাঁর একমাত্র পুত্রও।

Advertisement

পুলিশ সূত্রের খবর, গত ১৭ এপ্রিল রিজেন্ট পার্ক থানা এলাকার বাঁশদ্রোণীতে একটি আবাসনের দোতলার বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হয় মমতা আগরওয়াল নামে এক মহিলার দেহ। উদ্ধারের পরে মহিলাকে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ প্রাথমিক ভাবে জানতে পারে, মমতাদেবী দীর্ঘদিন ধরে অস্টিও-আর্থারাইটিসে আক্রান্ত ছিলেন। তাঁর হাঁটুতে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল এবং তিনি থাইরয়েডের সমস্যাতেও ভুগছিলেন। নিয়মিত প্রচুর ওষুধ খেতেন। মমতাদেবীর স্বামী সুরেশ আগরওয়াল এবং ছেলে আয়ুষের কাছ থেকে এ সব তথ্য পাওয়ার পরে পুলিশ একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে ওই মহিলার দেহ পাঠায় কাঁটাপুকুর মর্গে ময়না-তদন্তের জন্য। অভিযোগ, সেই চিকিৎসকই দেহের ময়না-তদন্ত করে পুলিশকে প্রাথমিক ভাবে জানান, অস্বাভাবিক কিছু তাঁর চোখে পড়েনি। এটি কোনও খুনের ঘটনা নয়। অসুস্থ হয়ে পড়ে গিয়েই মত্যু হয়েছে মমতাদেবীর। সেইমতো পুলিশও জানায়, এটি খুনের ঘটনা নয়।

পুলিশ জানায়, মমতাদেবীর স্বামী কিংবা তাঁর বাপের বাড়ি থেকেও কোনও অভিযোগ জমা পড়েনি। তার সঙ্গে ময়না-তদন্তে প্রাথমিক রিপোর্টও বলেছিল, এই মৃত্যু অস্বাভাবিক নয়। তাই তদন্তকারীরা প্রায় ধরেই নিয়েছিলেন, এটি খুন নয়। কিন্তু ছোট্ট একটা জিনিস কিছুতেই পুলিশকে নিশ্চিন্ত হতে দেয়নি।

Advertisement

আর তা ধরে এগিয়েই জানা যায়, ছেলের হাতে খুন হয়েছেন মমতাদেবী। পুলিশ জানিয়েছে, মমতাদেবীর ছেলে আয়ুষের গালে আর হাতের তালুতে আঁচড়ের চিহ্ন দেখেন তাঁরা। তা দেখে, এক প্রকার অন্ধকারে ঢিল ছোড়ার মতো করে মমতাদেবীর ছেলের উপরে নজর রাখতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। আর সেই হিসেবেই ফের ২০ এপ্রিল মমতাদেবীর ছেলে আর স্বামীকে থানায় ডেকে পাঠানো হয়। সেখানেই মমতাদেবীর ছেলে আয়ুষকে লাগাতার জেরা করতে শুরু করেন তদন্তকারীরা। দু’দিন পরে প্রায় টানা চার-পাঁচ ঘণ্টা জেরা করে মমতাদেবীর ছেলে বাবার সামনেই স্বীকার করে, মাকে গলা টিপে খুন করেছে সে। এই স্বীকোরোক্তির পরেই আয়ুষ বলতে থাকে, কী করে এবং কেন মাকে খুন করেছে সে। সেই স্বীকারোক্তির ভিত্তিতেই মাকে খুনের অভিযোগে সেই রাতে গ্রেফতার করা হয় আয়ুষকে। কিন্তু গলা টিপে খুন করার পরেও তা অটোপ্সি-সার্জনের চোখ এড়াল কী করে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই রিপোর্ট ধরে এগোলে তো ধরাই পড়ত না খুনের বিষয়টি। তা হলে কি ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলবে পুলিশ? পুলিশের তরফে এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। তবে কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘প্রাথমিক রিপোর্টে না পেলেও চূড়ান্ত রিপোর্টে বিষয়টি ঠিকই ধরা পড়ত।’’

কিন্তু কাকে বলে প্রাথমিক রিপোর্ট? কাকে বলে চূড়ান্ত রিপোর্ট? এসএসকেএমের ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান বিশ্বনাথ কাহালি অবশ্য জানিয়েছেন, প্রাথমিক রিপোর্ট কিংবা চূড়ান্ত রিপোর্ট বলে কিছু হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কাগজপত্র-সহ দেহ পাওয়ার পরে তা দেখে কাটাছেঁড়া করি। তাতে যা যা ফলাফল বেরোয়, তা ফর্মের আকারে থাকা কাগজে লিখে দিই। সেটাই চূড়ান্ত রিপোর্টের জন্য চলে যায়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন