অচেতন: ঘটা করে সদ্য শেষ হয়েছে পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ। তবু শহরের চৈতন্য ফিরছে কি? আর দেখবেই বা কে? ধর্মতলায়। ছবি: সুমন বল্লভ
যানবাহনের চালক ও পথচারীরা যাতে ট্র্যাফিক আইন মেনে চলেন, সেই জন্য তৈরি হল তিন মিনিটের ভিডিও। কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ সম্প্রতি ভিডিওটি তৈরি করেছে। মেট্রো স্টেশন ও সিনেমা হলে তার প্রদর্শন শুরু হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দুর্ঘটনা এড়াতে ভিডিও অন্য বিপদ তৈরি করছে না তো? বিশেষ করে শিশুমনে?
সোমবার রাতের ঘটনা। ট্রেন ধরতে বাড়ির লোকজনের সঙ্গে চাঁদনি চক মেট্রো স্টেশনে অপেক্ষা করছিল বছর সাতেকের একটি মেয়ে। টিভি-তে হিন্দি সিনেমার নাচ-গান দেখছিল সে। হঠাৎ পর্দায় ভেসে উঠল ট্র্যাফিক আইন মেনে চলতে পুলিশের আবেদন। তার পরেই ওই ভিডিও। যা দেখে ভয়ে সিঁটিয়ে শিশুটি মায়ের আড়ালে লুকোল।
কী আছে ওই ভিডিওয়? কলকাতার রাজপথে ঘটা ১৫টি দুর্ঘটনার ক্লিপিং সঙ্কলিত হয়েছে তাতে। শহর জুড়ে বসানো বিভিন্ন সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়েছিল ওই সব ঘটনা। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কোথাও রাস্তা পেরোনোর সময়ে গাড়ির ধাক্কায় কয়েক ফুট উঠে ছিটকে পড়ছেন এক যুবক। কোথাও এক তরুণীকে বাস ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। এর পরে তাঁর উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে বাস। আবার দু’টি গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে একটির চালক সামনের কাচ ভেঙে বাইরে ঝুলে পড়েছেন। এই সব ছবি ছাড়াও রয়েছে ব্রেক কষা ও গাড়িতে গাড়িতে ধাক্কার পিলে চমকানো শব্দ।
মনোচিকিৎসক রিমা মুখোপাধ্যায় জানান, এমন ভিডিও দেখার পরে অনেকে বেরোতে ভয় পান। তাঁর বক্তব্য, শুধু শিশু নয়, বড়দের মধ্যেও এর প্রভাব পড়ে। এ রকম বেশ কয়েক জন প্রাপ্তবয়স্ক চিকিৎসার জন্য তাঁর কাছে এসেছেন বলে জানান রিমাদেবী। তাঁর কথায়, ‘‘অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দুর্ঘটনা দেখালে ভাল হতো। সেখানে ভয়াবহতা কম।’’ মনোবিদ প্রশান্ত রায় বলেন, ‘‘আমি যখন প্রথম দেখি, আমারও অস্বস্তি হয়েছিল। বাচ্চাদের মধ্যে তো প্রভাব পড়বেই। এর চেয়ে ট্র্যাফিক আইন ভাঙলে পুলিশ জরিমানা করছে, এমন ভিডিও দেখানো হলে ভাল হবে।’’
তবে ডিসি (ট্র্যাফিক) ভি সলোমন নেসাকুমারের দাবি, ‘‘ভিডিও দেখে অনেকে বিরোধিতা করছেন বটে, তবে অধিকাংশ মানুষই সমর্থন করেছেন।’’ লালবাজারের কর্তারা মনে করেন, পথ দুর্ঘটনা কমাতে ভিডিও কার্যকর হবে। লালবাজারের আর এক শীর্ষকর্তার কথায়, ‘‘পথ নিরাপত্তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের যে কমিটি রয়েছে, তাঁরা ভিডিও দেখানোর উপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেননি।’’