পরমা উড়ালপুলের নয়া র্যাম্প। শনিবার। — নিজস্ব চিত্র
পরমা উড়ালপুলের অতীত থেকে শিক্ষা নিতে চাইছে লালবাজার। তাই এ বার হয়তো বদলে যেতে পারে পার্ক স্ট্রিট, শেক্সপিয়র সরণি-সহ শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচলের ধরন। এ ব্যাপারে ইতিমধ্যেই চিন্তাভাবনা শুরু করেছে কলকাতা পুলিশ। তৈরি হয়েছে একটি কমিটিও। লালবাজারের খবর, সেই পরিকল্পনার অঙ্গ হিসেবে ইতিমধ্যেই কিছু রাস্তায় পরীক্ষামূলক ভাবে যান চলাচলের ধরনও বদলানো হয়েছে। শুক্রবার থেকে দ্বিমুখী করে দেওয়া হয়েছে ময়দানের কুইন্স ওয়ে এবং নিউ পার্ক স্ট্রিটের মতো দু’টি রাস্তা।
গত বছর পুজোর আগে তড়িঘড়ি পরমা উড়ালপুল উদ্বোধন করায় ফাঁপরে পড়েছিল কলকাতা পুলিশ। যানজটে তালগোল পাকিয়ে গিয়েছিল শহরের বিরাট এলাকা। পুজোর প্রাক্কালে পথঘাটের ওই ঝঞ্ঝাট এড়াতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেতে হয়েছিল লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের। শেষে পরমা উড়ালপুল দিনের বেলায় একমুখী করে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়।
প্রশাসন সূত্রের খবর, আগামী মাসের গোড়ায় উদ্বোধন হতে চলেছে পরমা উড়ালপুলের নতুন তৈরি হওয়া ‘র্যাম্প’। এই র্যাম্প চালু হলে এসএসকেএমের সামনে থেকে গাড়ি এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল ধরে গিয়ে পরমা উড়ালপুলে পড়বে এবং সোজা চলে যাবে ই এম বাইপাসে। কিন্তু সমস্যার সূত্রপাত কংগ্রেস এগজিবিশন রোডের র্যাম্প তৈরি না হওয়ায়। যার ফলে ই এম বাইপাস থেকে আসা গাড়ি সরাসরি চলে আসবে পার্ক সার্কাস সাত মাথার মোড়ে। এখানেই ভাঁজ পড়েছে পুলিশের কপালে। যা গত বারও ভোগান্তির কারণ হয়েছিল। লালবাজারের একাংশ বলছেন, পার্ক সার্কাস মোড় এমনিতেই যানজটে আটকে থাকে। তার উপরে গাড়ি উড়ালপুল দিয়ে সরাসরি এসে ওই মোড়ে নামলে যানজট আরও বাড়তে পারে। যার প্রভাব পড়বে দক্ষিণ ও মধ্য কলকাতার বিভিন্ন রাস্তাতেও।
তা হলে এই পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় কী? লালবাজারের খবর, সেই উপায় খুঁজতেই শুক্রবার অতিরিক্ত কমিশনার (১) বিনীত গোয়েলের নেতৃত্বে বৈঠকে বসেছিলেন ট্রাফিক পুলিশের পদস্থ অফিসারেরা (ওই বৈঠকে ২১ জুলাই তৃণমূলের শহিদ দিবসের যান চলাচল নিয়েও আলোচনা হয়)। সেই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, পরমা উড়ালপুলকে কেন্দ্র করে যানজট এড়াতে হলে পার্ক স্ট্রিট ও শেক্সপিয়র সরণির গাড়ি চলাচলের ধরন বদলাতে হবে। এখন দিনের প্রথম ভাগে পার্ক স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি ময়দানের দিকে আসে। শেক্সপিয়র সরণি দিয়ে গাড়ি পার্ক সার্কাসের দিকে যায়। দ্বিতীয় ভাগে তা উল্টে যায়। এই দুই রাস্তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যায় মির্জা গালিব স্ট্রিট, ক্যামাক স্ট্রিট, মিডলটন স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, রিপন স্ট্রিটের যান চলাচলও।
পুলিশ সূত্রের খবর, যানজট সামাল দিতে হলে সারা দিনই পার্ক স্ট্রিট দিয়ে গাড়ি পার্ক সার্কাস থেকে ময়দানের দিকে আসতে পারবে। ময়দানের দিক থেকে গাড়ি শেক্সপিয়র সরণি দিয়ে পার্ক সার্কাসের দিকে যাবে। এই রাস্তাগুলির যান চলাচলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আরও কয়েকটি রাস্তাতেও গাড়ি চলাচলের ধরন বদলে যাবে। এ ব্যাপারে ডিসি ট্রাফিকের (২) নেতৃত্বে সাত জনের একটি কমিটিও তৈরি করা হয়েছে। উড়ালপুল তৈরি হওয়ার পরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেবেন তাঁরা। তার ভিত্তিতেই গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচলের নতুন ব্যবস্থা চালু করা হবে কি না, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন লালবাজারের শীর্ষ কর্তারা।
লালবাজারের কর্তারা জানিয়েছেন, নতুন র্যাম্প চালু হওয়ার পরে পরমা উড়ালপুলে কোনও বাস বা ট্রাক উঠতে দেওয়া হবে না। এমনকী, এত দিন যে পার্ক সার্কাস থেকে যানবাহন পরমা উড়ালপুলে উঠত, বন্ধ হয়ে যাবে তা-ও। পার্ক সার্কাস থেকে আর কোনও গাড়ি এ বার পরমা উড়ালপুলে উঠতে পারবে না। পরমা উড়ালপুল ধরে ই এম বাইপাসে যেতে হলে এসএসকেএম হাসপাতালের সামনে থেকে এ জে সি বসু রোড উড়ালপুল ধরতে হবে।