ডাক দিচ্ছে ‘চাঁদের পাহাড়’

মাসাইমারার মহিলাদের মতো লাল-নীল ডোরাকাটা চাদর এবং গলায়, কপালে সেখানকার গয়না পরে অপরাজিতাও এ দিন সকাল থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের শোনাচ্ছিলেন মাসাইমারা, অ্যাম্বোশেলি, কিলিমাঞ্জারো পাহাড়, উগান্ডার গল্প।

Advertisement

শান্তনু ঘোষ

শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০১৮ ০২:৪৬
Share:

কাছে টানতে: পর্যটন মেলায় অপরাজিতা। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে

রহস্য আর রোমাঞ্চের টানে স্বদেশে চটকলের কাজ ছেড়ে সুদূর আফ্রিকায় কেরানির চাকরি নিয়ে পাড়ি দিয়েছিলেন অজগাঁয়ের তরুণ শঙ্কর। কিন্তু বেশি দিন মন টেকেনি। শেষমেশ এক পর্তুগিজ অভিযাত্রীর সঙ্গ নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন হিরের খনির সন্ধানে।

Advertisement

সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘চাঁদের পাহাড়’-এর সেই শঙ্কর এক সময় কালাহারি মরুভূমিতে তাঁর পথ হারালেও, কলকাতার মেয়ে অপরাজিতা এখন বাঙালি পর্যটকদের আরও বেশি করে চেনাতে চান আফ্রিকার পথ। কারণ শেষ কুড়ি বছর ধরে পূর্ব আফ্রিকাতেই বাসা বেঁধেছেন অপরাজিতা ও তাঁর স্বামী প্রীতপাল সিংহ লায়ল। শুক্রবার থেকে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তিন দিনের জন্য পর্যটন মেলার আয়োজন করেছে কলকাতার একটি পর্যটন সংস্থা। সেখানেই এসে হাজির হয়েছেন অপরাজিতা।

মাসাইমারার মহিলাদের মতো লাল-নীল ডোরাকাটা চাদর এবং গলায়, কপালে সেখানকার গয়না পরে অপরাজিতাও এ দিন সকাল থেকে ভ্রমণ পিপাসুদের শোনাচ্ছিলেন মাসাইমারা, অ্যাম্বোশেলি, কিলিমাঞ্জারো পাহাড়, উগান্ডার গল্প। জানাচ্ছিলেন ঘন জঙ্গলের ভিতরে রাতে লন্ঠন জ্বালিয়ে থাকার রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা। আর বাঙালি পর্যটকদের পেলে চোখে মুখে যেন বাড়তি উৎসাহ ফুটে উঠছিল তাঁর। বললেন, ‘‘পাহাড়, সমুদ্র আর সঙ্গে রোমাঞ্চে ভরা গভীর অরণ্য ঘেরা পূর্ব আফ্রিকাকে আরও বেশি মাত্রায় বাঙালি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরাটাই আমার মূল লক্ষ্য।’’ যাদবপুর সেন্ট্রাল রোডের মেয়ে অপরাজিতা জানালেন, ছোট থেকেই তিনি ভালবাসেন জঙ্গল, জীবজন্তু। বিয়ের পরে স্বামীরও পছন্দ মিলে গেল তাঁর সঙ্গে। কয়েক বছর বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে থাকার পরে স্বামীর চাকরির জায়গা পরিবর্তন হওয়ায় দিল্লিবাসী হতে হয়েছিল অপরাজিতাকে। এর কয়েক বছর পরে ১৯৯৮ নাগাদ স্বামীর কর্মসূত্রে তিনিও পাড়ি দিলেন আফ্রিকা মহাদেশে।

Advertisement

মাঝেমধ্যে কলকাতায় যাদবপুরে বাবার কাছে আসা ছাড়া আর স্বদেশে ফিরতে চান না নাইরোবির বাসিন্দা অপরাজিতা। তাঁর কথায়, ‘‘পূর্ব আফ্রিকার গভীর অরণ্যের জীবজন্তুগুলিকে বড় ভালবেসে ফেলেছি। ছোট থেকেই ওদের প্রতি ভালবাসাটা যেন এখন আরও বেড়ে গিয়েছে। তাই বাঙালিদের আরও ভাল করে জায়গাটা চেনাতে কয়েকজন মিলে একটা ভ্রমণ সংস্থা খুলেছি।’’ তিনি জানান, প্রতি বছর ২০ শতাংশ ভারতীয় পূর্ব আফ্রিকায় ঘুরতে যান, তাঁদের মধ্যে এক চতুর্থাংশ বাঙালি পর্যটক। যদিও বিদেশি পর্যটকদের সংখ্যাটা সে তুলনায় অনেক বেশি। সারা বছরই ঘোরা যায় পূর্ব আফ্রিকার কেনিয়া, তাঞ্জানিয়া, উগান্ডার আনাচে-কানাচে। আর দুর্গাপুজোয় গেলে নাইরোবিতে পাত পেতে ভোগ খাওয়ারও ব্যবস্থা থাকে বলেই জানাচ্ছেন গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারের মেয়ে অপরাজিতা।

‘চাঁদের পাহাড়’ এর অভিযানের শেষে শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেছিলেন, তিনি আবার বড় দল নিয়ে এসে হিরের খনির সন্ধান করবেন। আর কলকাতার অপরাজিতার বাসনা, আরও বড় দলের বাঙালি পর্যটক আসুক তাঁদের চাঁদের পাহাড়ে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন