ডিজেলের ধোঁয়ার দূষণ কমাতে সিএনজি চালিত সরকারি বাস কেন চালু করা হচ্ছে না? সোমবার শহরে গাড়ির দূষণ সংক্রান্ত মামলায় এমনই প্রশ্ন তুলল জাতীয় পরিবেশ আদালত। শহরে জ্বালানির দূষণ নিয়ে রাজ্য সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনাও করেছে পরিবেশ আদালত। বিচারপতি এস পি ওয়াংদি এবং বিশেষজ্ঞ-সদস্য পি সি মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, সরকারি অফিসারেরা বৈঠকের নামে জনগণের টাকার অপচয় করছেন। এই কাজে সক্রিয় না হলে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে আদালত।
সরকারপক্ষ আদালতকে জানিয়েছে, সিএনজি এ রাজ্যে মেলে না। ফলে বাস চালু করা হলে তার জ্বালানি নিয়ে সমস্যা হবে। যদিও এই মামলার আবেদনকারী পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত জানান, আসানসোল ও দুর্গাপুরে দু’টি বেসরকারি সংস্থা ‘কোলবেড মিথেন’ গ্যাস উত্তোলন করে জ্বালানি হিসেবে বিক্রি করছে। সেই গ্যাস ট্যাঙ্কারে করে আনা হবে না কেন? সুভাষবাবু অবশ্য এ-ও জানান, ওই দু’টি সংস্থা গ্যাস দিতে পারবে না বলে জানিয়েছে। কারণ, নিজেদের ব্যবসার বাইরে কলকাতাকে সরবরাহ করার মতো গ্যাস তারা তোলে না।
আদালত কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রককে নির্দেশ দিয়েছে, বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়ে ওই দুই সংস্থার কাজকর্ম যাচাই করতে। যে শর্তে তারা ব্যবসা শুরু করেছিল তা পূরণ না করলে লাইসেন্স বাতিল করে দিতেও বলেছে। এ ব্যাপারে মন্ত্রককে ১১ মে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
বায়দূষণের নিরিখে কলকাতা ও হাওড়া দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে। সেই দূষণের পিছনে ডিজেলচালিত গাড়ির ধোঁয়াকে অন্যতম প্রধান কারণ বলে দাবি করেন পরিবেশবিদেরা। তাই ডিজেলচালিত গাড়ির বদলে শহরে সিএনজি চালু করা হচ্ছে না কেন, সেই প্রশ্ন তুলে পরিবেশ আদালতে মামলা দায়ের করেছিলেন সুভাষবাবু। কী ভাবে কলকাতা ও হাওড়ায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি সরবরাহ করা যায়, তা নিয়ে ৭ ডিসেম্বর আদালতে সব পক্ষকে নিয়ে একটি বৈঠকও হয়েছিল। সেখানে আসানসোল, দুর্গাপুর থেকে গ্যাস ট্যাঙ্কারে পুরে এনে এই দুই শহরে সরবরাহের কথা হয়েছিল বলে জানান সুভাষবাবু।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কলকাতায় পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নিয়ে সরকারি পরিকল্পনা নতুন নয়। কিন্তু পরিকল্পনাটুকুই সার। তার বেশি কাজ এগোয়নি। এ ব্যাপারে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘গ্যাস অথরিটি অব ইন্ডিয়া’র (গেল) সঙ্গে যৌথ সংস্থা গড়ার কথা থাকলেও বাস্তবায়িত হয়নি। এ নিয়ে রাজ্যের বক্তব্য জানতে চেয়েছিল কোর্ট। রাজ্যের শিল্প-বাণিজ্য সচিব রাজীব কুমারের একটি জবাব এ দিন কোর্টে পেশ করা হয়। কিন্তু সেটিকে অস্পষ্ট বলে জানায় আদালত। ডিভিশন বেঞ্চ বলেছে, কোন কোন এলাকায় কতটা কাজ হয়েছে তা রাজ্যকে জানাতে হবে। গেলের সঙ্গে যৌথ সংস্থা গড়ার কাজ ফেলে রাখা যাবে না। হলফনামাও তলব করেছে আদালত।