ঝোপ বুঝে কোপ উব্‌র, ওলার

শাসক দলের শহিদ দিবস উদ্‌যাপন ঘিরে এ ভাবেই শুক্রবার সারা দিন অ্যাপ-ক্যাবের আকাশছোঁয়া ভাড়া আর খামখেয়ালিপনায় নাকাল হতে হল শহরের যাত্রীদের। কোথাও গাড়ি পাওয়াই গেল না। কোথাও যা-ও বা পাওয়া গেল, ‘সার্জ প্রাইসিং’-এর জেরে ভাড়া বেড়ে গেল চার-পাঁচ গুণেরও বেশি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ জুলাই ২০১৭ ০১:৫৮
Share:

—ফাইল চিত্র।

ঋতচেতা সেন বৌবাজার মোড়ে দাঁড়িয়েছিলেন অশীতিপর মাকে নিয়ে। ডাক্তার দেখিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। যাবেন গড়িয়াহাট। কিন্তু কী করে? ট্যাক্সির দেখা নেই। অতঃপর ওলা-উব্‌র পাওয়ার চেষ্টায় হাত রাখলেন মোবাইলের টাচ-স্ক্রিনে। কিন্তু, সে গুড়ে বালি। ওলা হাঁকল ৫০০ টাকারও বেশি। আর উব্‌র ৫০০ ছুঁইছুঁই। ঋতচেতা বললেন, ‘‘শেষমেশ কপাল ঠুকে ৪৯০ টাকায় উব্‌র বুক করলাম। তাতেও লাভ হল না। প্রথমে ‘এক্সপেক্টেড অ্যারাইভাল টাইম’ (ইটিএ) দিল ১৫ মিনিট। চালককে পাঁচ মিনিট পরে ফোন করে জানলাম, তিনি এখনও আগের যাত্রীকেই নামাননি। তাঁকে নামাতেই নাকি আরও ১০ মিনিট লাগবে। অগত্যা ‘ট্রিপ’ বাতিল করতে হল।’’

Advertisement

শাসক দলের শহিদ দিবস উদ্‌যাপন ঘিরে এ ভাবেই শুক্রবার সারা দিন অ্যাপ-ক্যাবের আকাশছোঁয়া ভাড়া আর খামখেয়ালিপনায় নাকাল হতে হল শহরের যাত্রীদের। কোথাও গাড়ি পাওয়াই গেল না। কোথাও যা-ও বা পাওয়া গেল, ‘সার্জ প্রাইসিং’-এর জেরে ভাড়া বেড়ে গেল চার-পাঁচ গুণেরও বেশি। ওই দুই অ্যাপ-ক্যাব সংস্থার কর্তাদের বক্তব্য, ২১ জুলাই বলে এ দিন গাড়ি রাস্তায় নেমেছিল কম। তার উপরে যাঁরা বেরিয়েছিলেন, তাঁরাও যানজটে শহরের বিভিন্ন জায়গায় আটকে গিয়েছেন। ফলে চাহিদা ও জোগানের নিয়ম মেনেই চড়চড় করে বেড়েছে ভাড়া।

অ্যাপ-ক্যাব বাড়তি ভাড়া হেঁকেছে মোবাইলের টাচ স্ক্রিনে। আর ট্যাক্সিচালকেরা কয়েক গুণ ভাড়া হেঁকেছেন মুখেই। তা সে শ্যামবাজার হোক, উল্টোডাঙা কিংবা গড়িয়াহাট। এমনকী, সকাল ১০টার পর থেকে শিয়ালদহ, হাওড়া স্টেশন থেকেও উধাও অধিকাংশ ট্যাক্সি। ২১ জুলাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক থাক বা না থাক। ট্যাক্সিচালকদের ব্যবহারে ক্ষুব্ধ খোদ ট্যাক্সিমালিকরাও। ট্যাক্সিমালিকদের সংগঠন ‘বেঙ্গল ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতা বিমল গুহর কথায়, ‘‘ট্যাক্সিচালকেরা অভব্য আচরণ করেছেন, ইচ্ছেমতো ভাড়া হেঁকেছেন। এঁদের ব্যবহারে নিজেকে ট্যাক্সি ইউনিয়নের নেতা বলতে লজ্জা করে। প্রশাসন এ ব্যাপারে যত দিন না কড়া হবে, তত দিন পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে না।’’

Advertisement

ট্যাক্সি আর অ্যাপ-ক্যাবের ফাঁস থেকে বাঁচতে যাঁরা ভেবেছেন অটোয় চড়ে গন্তব্যে পৌঁছবেন, তাঁদেরও বিস্তর নাকাল হতে হয়েছে। কারণ, অধিকাংশ অটোচালককেই শাসক দলের নেতারা সামিল করেছেন মিছিলে। ফলে শহরের অধিকাংশ অটোর লাইনেই যাত্রী ছিল বেশি। অটোর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। একই ছবি ছিল কলকাতা উত্তর ও দক্ষিণ শহরতলি এবং বিধাননগরেও।

প্রশাসন সতর্ক থাকায় তেমন সমস্যা হয়নি বলেই দাবি করেছেন শাসক দলের ট্যাক্সি সংগঠন ‘প্রোগ্রেসিভ ট্যাক্সিমেন্স ইউনিয়ন’-এর নেতা শম্ভুনাথ দে। তিনি বলেন, ‘‘গুটিকয় ট্যাক্সিচালক পরিস্থিতির সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। যাত্রীরা অভিযোগ জানালে প্রশাসনের তরফে কিংবা আমাদের পক্ষ থেকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে অভিযুক্ত ট্যাক্সিচালকের বিরুদ্ধে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন