নিয়মের তোয়াক্কা না করেই চলছে পারাপার। ফাইল চিত্র।
ফুটপাথ থাকলেও অধিকাংশই হকারদের দখলে। তাই গড়িয়াহাট, ধর্মতলা, বড়বাজার, হাতিবাগান-সহ বহু এলাকায় রাস্তা দিয়েই পথচারীদের যাওয়া-আসাটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে দুর্ঘটনাও ঘটছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর প্রবণতা। সোমবার এমনই একটি ঘটনায় রেষারেষি করতে গিয়ে রেলিং ভেঙে ফুটপাথে উঠে পড়ে বাস। অন্য ঘটনায় একটি এসি বাস আর এক এসি বাসকে ধাক্কা মেরে পালায়।
দুর্ঘটনায় রাশ টানতে এ বার শহর জুড়ে ‘পথ নিরাপত্তা অডিট’ শুরু করেছে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশ। এর মাধ্যমে এক দিকে শহরের রাস্তায় কী কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে, তা যেমন জানা যাবে, তেমনই বোঝা যাবে চালকদের গাড়ি চালাতে কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না। এর জন্য পুলিশকর্তাদের নিয়ে দু’টি দলও তৈরি করা হয়েছে।
গত বছরের মাঝামাঝি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে পথ দুর্ঘটনা কমাতে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ প্রচার শুরু করেছিল কলকাতা পুলিশ। লালবাজারের দাবি, ওই প্রচারের ফলে দুর্ঘটনার হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু এখনও তা যথেষ্টই বেশি। তাই লালবাজারের কর্তারা চালু করেছেন ‘পথ নিরাপত্তা অডিট’। তাঁদের দাবি, এর ফলে দুর্ঘটনার কারণ নির্দিষ্ট করার পাশাপাশি পথ নিরাপত্তাও বৃদ্ধি পাবে।
পুলিশ জানায়, ওই অডিটের জন্য কলকাতা পুলিশের ২৫টি ট্র্যাফিক গার্ডকে দু’টি দলে ভাগ করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন লালবাজারের ট্র্যাফিক পুলিশ বিভাগের এক জন করে আধিকারিক। ওই দলের সদস্যদের মধ্যে রয়েছেন ট্র্যাফিক গার্ডের স্থানীয় ওসি-সহ ট্র্যাফিক বিভাগের কর্তারা। ইতিমধ্যেই প্রতিটি ট্র্যাফিক গার্ডের কাছে তাদের এলাকার সব বিটের (বিভিন্ন রাস্তার সংযোগস্থল। যেখান থেকে পুলিশকর্মীরা যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করেন) বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে এক নির্দিষ্ট ফর্ম পূরণ করতে বলা হয়েছে। যা পাওয়ার পরেই ওই দলের সদস্যেরা শহরের সমস্ত সিগন্যাল পয়েন্ট কিংবা রাস্তাগুলি ঘুরে দেখবেন। এবং কোথাও খামতি থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লালবাজারের শীর্ষ কর্তাদের কাছে সুপারিশ করবেন। ট্র্যাফিক পুলিশকর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, এত দিন স্থানীয় ভাবে কোনও কোনও ট্র্যাফিক গার্ড ওই পথ নিরাপত্তা নিয়ে অডিট করলেও লালবাজারের তরফে কেন্দ্রীয় ভাবে দীর্ঘদিন পরে তা করা হচ্ছে।
কী ভাবে হবে ওই অডিট?
পুলিশ সূত্রের খবর, পথ নিরাপত্তার জন্য ১৩টি বিষয়ের ৬৬টি পয়েন্টকে বেছে নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে, ফুটপাথ যথেষ্ট চওড়া কি না, দূর থেকে ট্র্যাফিক সিগন্যাল পরিষ্কার ভাবে দেখা যায় কি না কিংবা সিগন্যাল লাল-সবুজ হওয়ার মাঝে নির্দিষ্ট সময় রয়েছে কি না। এ ছাড়া, রাস্তার মাঝখানে থাকা ডিভাইডার কিংবা গাছ যান চলাচলের ক্ষেত্রে কোনও বাধা তৈরি করছে কি না অথবা পুলিশের কিয়স্ক রাস্তা পারাপারে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে কি না, তা-ও জানতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে পার্কিংয়ের জায়গা গাড়ি চলাচলে বাধা তৈরি করছে কি না বা স্টপেই বাস দাঁড়ায় কি না, তা-ও দেখা হবে।
পুলিশকর্তারা জানান, শহরে গত বছরের তুলনায় এ বছর দুর্ঘটনায় মৃত্যু কমেছে। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা কমেনি। তাই নিরাপত্তা অডিটের মাধ্যমে দুর্ঘটনা কমানোর চেষ্টা হবে।