উনিশ শতকের দুর্লভ চিত্রমালা
১৮৬৩ সালের ২৩ জানুয়ারি কলকাতায় নামলেন স্যামুয়েল বোর্ন। বয়স মাত্র ২৯, ইতিমধ্যেই শখের ফটোগ্রাফিতে হাত পাকিয়েছেন, এ বার লক্ষ পেশাদার হওয়া। তবে কলকাতায় নয়, ব্রিটিশ ভারতের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী সিমলায় তৈরি হল ‘হাওয়ার্ড অ্যান্ড বোর্ন’ কোম্পানির স্টুডিয়ো। বছর তিনেকের মধ্যেই অংশীদার বদল, শেষে নাম হল ‘বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড’। ইতিমধ্যে হিমালয় সহ উত্তর ভারত ঘুরে বহু ছবি তুলেছেন বোর্ন, বিলেতের কাগজে ছাপাও হয়েছে সেই সব রোমাঞ্চকর অভিযানের বর্ণনা। নিসর্গদৃশ্যের সঙ্গে স্থাপত্যের ছবিতে তাঁর সমান কৃতিত্ব, ব্যবসাও জমে উঠেছে ভালই। ১৮৬৭-র মাঝামাঝি লন্ডন থেকে বিয়ে করে স্ত্রীকে নিয়ে কলকাতায় এসে খুললেন দ্বিতীয় স্টুডিয়ো, মূলত পোর্ট্রেট তোলার জন্য। অনেক হাত বদলের পর আজও চালু আছে কলকাতার বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড, পা দিচ্ছে দেড়শো বছরে।
বোর্ন কিন্তু এ দেশে কাজ করেছেন মাত্র সাত বছর। ১৮৬৯-এর শেষে তিনি লন্ডন ফিরে যান। আর আসেননি। কয়েক বছর পর সংস্থার স্বত্বও ছেড়ে দেন। সাত বছরে ভারতে দু’হাজারেরও বেশি ছবি তুলেছিলেন তিনি, যা থেকে যায় সংস্থারই সংগ্রহে। এ সব ছবির অ্যালবাম খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল। কলকাতা শহরেও গোটা পঞ্চাশ ছবি তোলেন তিনি। দুর্ভাগ্য, ১৯৯১ সালে এক বিধ্বংসী আগুনে কলকাতায় বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ডের মহাফেজখানা পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাচের নেগেটিভ নষ্ট হলেও পৃথিবীর নানা সংগ্রহে রক্ষিত আছে বোর্নের তোলা ছবির মূল প্রিন্ট। ভারতে আদি পর্বের আলোকচিত্র চর্চার সে এক আশ্চর্য দলিল।
কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারের আশুতোষ সংগ্রহ বা ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল সংগ্রহে নানা দুর্লভ আলোকচিত্র থাকলেও তা বিশেষ প্রদর্শিত হয়নি। এত দিনে সেই সুযোগ এনে দিল তসবির। তাদের দশ বছর উপলক্ষে বেঙ্গালুরুর মিউজিয়াম অব আর্ট অ্যান্ড ফোটোগ্রাফির সহায়তায় ‘বোর্ন অ্যান্ড শেফার্ড: ফিগার্স ইন টাইম’ শীর্ষক এক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে দ্য হ্যারিংটন স্ট্রিট আর্ট সেন্টারে, চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত (রবি বাদে, ১২-৭টা)। প্রকাশিত হয়েছে চমৎকার একটি ক্যাটালগ। সঙ্গে বাঁ দিকে বোর্নের তোলা সেন্ট পলস গির্জার ছবি (১৮৬৭, মূল চূড়া তখনও অটুট), মাঝে বোর্নের প্রতিকৃতি।
বিশেষ সন্দেশ
সত্যজিতের মত মেনেই জটায়ুহীন কাহিনি বেছে দূরদর্শনে ‘ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা’ করেন বিভাস চক্রবর্তী। সত্যজিৎ ‘সৌমিত্রদার বয়সের ওজর উড়িয়ে দিয়ে ফেলুদার ভূমিকায় তাঁকেই নিতে বলেছিলেন।’ লিখেছেন বিভাস, সন্দেশ-এর (সম্পা: সন্দীপ রায়) ‘ফেলুদা ৫০’ সংখ্যাটিতে। এমনই আকর্ষণীয় আবীর চট্টোপাধ্যায়ের ‘আমার ফেলুদা হবার গপ্পো’। প্রসাদরঞ্জন রায়ের ‘ফেলুদার সালতামামি’র সঙ্গে আছে সুগত রায়ের ‘ফেলুদা কুইজ’। বড় আকর্ষণ ক্রোড়পত্রে ‘ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি’র প্রথম খসড়া: সত্যজিতের পাণ্ডুলিপির প্রতিলিপি। ‘‘ফেলুদা নিয়ে এই প্রথম গল্পটি সন্দেশ-এ বেরনোর সময় এত ফোন আর চিঠি পেতে থাকেন বাবা... বলেছিলেন ‘এতটা তো ছবি করেও পাইনি!’ এমন চাহিদা থেকেই ফেলুদা চরিত্রটা ডেভেলপ করেন বাবা, লিখতে শুরু করেন প্রথম উপন্যাস ‘বাদশাহী আংটি’।’’ জানালেন সন্দীপ।
রেলভক্ত
কাশবনের মধ্যে দিয়ে হাত ধরাধরি করে অপু-দুর্গা দৌড়েছিল রেলগাড়ি দেখতে। সেই কু ঝিকঝিক স্টিম ইঞ্জিন থেকে আজকের ডিজেল লোকোমোটিভ, ভারতীয় রেলের বিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাঙালির রেলপ্রেমকে যুগোপযোগী চেহারা দিতে তৈরি হয়েছে ‘কলকাতা রেলফ্যান্স ক্লাব’। স্টেশনে স্টেশনে গিয়ে ট্রেনের ইঞ্জিন ও কামরা দেখা এবং সে সবের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা ও তথ্য সংগ্রহ করা তাঁদের শখ। সম্প্রতি কালকা মেল-এর দেড়শো বছর উপলক্ষে ট্রেনটির ইঞ্জিন ও সব ক’টি বগিকে ক্লাবের সদস্যেরা সাজালেন কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে। আবার ১৪৭ বছর চলার পর লালকিল্লা এক্সপ্রেস চিরতরে থেমে গেল। শেষ যাত্রার সময়ে কলকাতা স্টেশনে জড়ো হন তাঁরা। ২০০৯-এ তৈরি ক্লাবের সদস্যসংখ্যা এখন তিনশো ছুঁই ছুঁই। সদস্যদের বয়ঃসীমা ১৫-৭৫। একটাই আফসোস তাঁদের, অস্ট্রেলিয়া কিংবা মার্কিন মুলুকে রেলপ্রেমীদের নানা সহায়তা ও উৎসাহ দেয় সরকার, এখানে কিছুই নেই!
সে এক দিন
এখনকার গোর্কি টেরেসই আগে ছিল ভিক্টোরিয়া টেরেস। তার চার নম্বর বাড়িতে ১৯৩৮ সালে যখন শুরু হয় পার্ক নার্সিং হোম, তখনও বেল ভিউ, উডল্যান্ডস কালের গর্ভে। তখনও সাহেব ডাক্তারদের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছেন বাঙালিরা। সদ্য নব্বই-ছোঁয়া ডা. সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতিকথার কেন্দ্রে তাঁর বাবা সুশীলচন্দ্রের প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাকেন্দ্র (এখন পার্ক ক্লিনিক), কিন্তু চল্লিশের দশক থেকে সহস্রাব্দ পর্যন্ত শহরের মেডিক্যাল জগতে তার বিস্তার। দেশভাগের সময় মেডিক্যাল কলেজ, বাঙালি ডাক্তারদের বিদেশে প্রশিক্ষণ, শিশুমঙ্গল হাসপাতাল তৈরি, যেন জলছবির মতো ছাপ ফেলে যায়। সুবীরবাবু এ রাজ্যে, তথা ভারতে শিশু শল্যচিকিৎসার অন্যতম পথিকৃৎ। পেটের কাছে জোড়া যমজ গঙ্গা-যমুনাকে আলাদা করার মতো জটিল অপারেশন সে যুগে সকলের তাক লাগিয়েছিল। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থা যখন জল-অচল ছিল না, যখন উৎকর্ষের অনেকটাই নির্ভর করত পরস্পর সুসম্পর্কের উপর, সেই সময় যেন ধরা রইল ৪ ভিক্টোরিয়া টেরেস (বৃষ্টি) বইতে।
শতবর্ষে
দর্শন, বিজ্ঞান, বেদান্ত, সাহিত্য, নন্দনতত্ত্ব ও রসতত্ত্বে তাঁর ছিল অগাধ ব্যুৎপত্তি। স্বচ্ছন্দ ছিলেন ইংরেজি ও বাংলার মতো হিন্দি ও উর্দুতেও। অধ্যাপক প্রবাসজীবন চৌধুরীকে (১৯১৬-’৬১) কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আশুতোষ ও মোয়াট স্বর্ণপদক, গ্রিফিথ পুরস্কারে সম্মানিত করে। ১৯৫৩ সালে তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগ দেন অধ্যক্ষ হিসেবে। একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েও ভারতীয় দর্শন ও নন্দনতত্ত্বের অধ্যাপনার দায়িত্ব নেন। তাঁর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে রামকৃষ্ণ মিশন ইনস্টিটিউট অব কালচার, ১৬ মার্চ ৪টেয়। উদ্বোধন করবেন স্বামী সুপর্ণানন্দজি, সভাপতিত্ব করবেন শান্তিনাথ চট্টোপাধ্যায়। ওই দিনেই সূত্রধর প্রকাশ করবে তাঁর ঈশ্বর-সন্ধানে বইটির নতুন সংস্করণ।
সনাতন বাউল
বাউল সংসারে তিনি পেয়েছিলেন নক্ষত্রের আসন। সাধক গায়ক পদকর্তা সনাতন দাস ঠাকুর পরম্পরাগত ভাবেই জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ছিলেন বাউল সাধনা ও জীবনযাপনে। খুলনা জেলার লকপুর গ্রামে জন্ম। পরে আখড়া তৈরি করেন বাঁকুড়ার সোনামুখির খয়েরবুনি গ্রামে। ঘুরে বেড়িয়েছেন দেশবিদেশ, ছেদ পড়েনি সাধনায়। ১৯৯৯-এ পান ‘লালন পুরস্কার’। রেডিয়ো এবং দূরদর্শনের জন্য নিয়মিত অনুষ্ঠান করেছেন তিনি। ঋতবান ঘটক ওঁকে নিয়ে একটি তথ্যচিত্র তৈরি করেন। পার্বতী দাস বাউলের মতো বিশিষ্ট শিল্পী ওঁরই শিষ্য। প্রচারের আলোয় থাকলেও অভাব ছিল নিত্য সঙ্গী। সম্প্রতি ৯২ বছর বয়সে চলে গেলেন সাধনধামে। শেষ হল বাংলার বাউলের একটি যুগ।
অদম্য
আমৃত্যু অদম্য ছিলেন নির্মল দাশ (১৯৪০-২০১৬)। জন্ম রাজশাহিতে, ছটফটে ছিলেন বলে শিশুবেলায় গরুর গাড়ির চাকার তলায় পড়ে যান, বেঁচে গেলেও শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি রুদ্ধ হয়। কিন্তু মেধা? বাংলায় স্নাতকোত্তর অবধি বরাবর প্রথম, পরে পিএইচ ডি। নানা সরকারি কলেজে শিক্ষকতার পর রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা, সেখান থেকেই অবসর। বিশেষত মধ্যযুগের সাহিত্যে তাঁর ব্যুৎপত্তি ছিল, প্রথম গ্রন্থ চর্যাগীতি পরিক্রমা প্রকাশের পর সাড়া পড়ে যায়। একাধিক রচিত গ্রন্থের পাশাপাশি আছে বেশ কিছু সম্পাদিত গ্রন্থও। আজীবন যুক্ত ছিলেন নানা সারস্বত প্রতিষ্ঠানে। সম্প্রতি প্রয়াত হলেন তিনি।
মনে পড়ে
রামানন্দ সেনগুপ্তর জন্মও পঁচিশে বৈশাখ, এ বছরই শতবর্ষ পূর্ণ করবেন, সপ্রাণ এখনও। ঢাকার উয়াড়ি-তে জন্ম ১৯১৬-য়। মামা ক্ষিতিমোহন সেনের হাত ধরে ন’বছর বয়সে শান্তিনিকেতনে পৌঁছনোর পর নতুন দিগন্ত খুলে যায় এই আলোকচিত্রশিল্পীর। তাঁর জীবনে আজও স্মরণীয় কলকাতায় ১৯৪৮-এ ফরাসি চলচ্চিত্রকার জঁ রেনোয়া-র সঙ্গে কাজ। ১৯৩৮-এ চলচ্চিত্র জগতে আসার তিন বছর পরই স্বাধীন ভাবে ক্যামেরার পিছনে দাঁড়ান মার্কিন তথ্যচিত্রকার এলিসের ছবিতে। ঋত্বিক-মৃণাল দু’জনেরই প্রথম ছবির ক্যামেরা তাঁর। আশির দশকের শেষ অবধি বহু ছবিতে ক্যামেরা চালানোর সঙ্গে নানা পত্রপত্রিকায় লিখেছেন, দিয়েছেন সাক্ষাৎকারও। তাই নিয়ে বেরল আজও মনে পড়ে (সংকলন ও সম্পা: চন্দন গোস্বামী ও জ্যোতিপ্রকাশ মিত্র। নর্থ ক্যালকাটা ফিল্ম সোসাইটি)। চলচ্চিত্রপঞ্জির সঙ্গে দুর্লভ সব ছবি বইটিতে। সঙ্গে প্রচ্ছদের ছবি, সুকুমার রায়ের তোলা।
হারানো হাসি
‘মহারানি ভিক্টোরিয়া, এ ভাজা খায় রোজ কিনিয়া/ ভাজা খেয়ে বোঝে না সে কেই বা রানি কেই বা প্রজা।’ এমন গানের লাইন তরুণ মজুমদারের ছবিতেই মিলত, তা সে তেতাল্লিশ বছর আগের কথা, ‘শ্রীমান পৃথ্বীরাজ’ ছবিতে গানটি গেয়ে ‘হরিদাসের বুলবুল ভাজা’ ফিরি করছিলেন রবি ঘোষ। সে সব সরস স্বাদু ছবি আজ শুধুই স্মৃতি বাঙালির জীবনে। ‘বাংলা ছবি থেকে হাসি হারিয়ে যাচ্ছে কেন’, এ নিয়েই এ বারের ‘পরিমল গোস্বামী স্মারক বক্তৃতা’ দেবেন তরুণ মজুমদার। ১৮ মার্চ সন্ধে ৬টায় বাংলা আকাদেমি সভাঘরে। প্রকাশ পাবে শতদল গোস্বামীর সাত পুরুষের রম্য জগৎ ও হিমানীশ গোস্বামীর সব রচনাই রম্য (দীপ)। হিমানীশ গোস্বামীর রসসাহিত্য নিয়ে বলবেন সুদীপা বসু। আর তাঁর নামাঙ্কিত রসচর্চা পুরস্কারটি পাবেন পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। থাকবেন শঙ্খ ঘোষ। আয়োজনে হিমানীশ গোস্বামী স্মরণ সংসদ।
আকস্মিক
সংস্কৃত কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে বি এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত ও বাংলা সাহিত্যে এম এ পাশ করার পরই গোবরডাঙা কলেজে অধ্যাপনা শুরু করেন। এর পর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগ থেকে অবসর নেন। খুলনা জেলার নকিপুর গ্রামে ১৯৩৯ সালে মানবেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্ম। সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে প্রায় তিরিশটি গ্রন্থ রচনা/সম্পাদনা করেছেন। সংস্কৃত চর্চার উন্নতির জন্য রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুরস্কৃত হন, ‘শাস্ত্রী’ উপাধিও পেয়েছিলেন। দক্ষতার সঙ্গে এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। সোসাইটিতেই অসুস্থ হয়ে পড়ে হঠাৎই চলে গেলেন।
নাট্যমগ্ন
অশোক মুখোপাধ্যায় এখনও অক্লান্ত। পঞ্চান্ন পেরিয়েছে থিয়েটারজীবনের। প্রেসিডেন্সিতে ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে পড়া শেষ করে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ শুরুর সন্ধিক্ষণে নান্দীকার-এ আসা। ‘অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি মুগ্ধতা থেকেই থিয়েটারে, তাঁর কাছেই শিক্ষানবিশি। ক’বছর পর পাকাপাকি ভাবে থিয়েটার ওয়ার্কশপ-এ,’ অশোকবাবুর স্বীকারোক্তি। তাঁর তত্ত্বাবধানে সে নাট্যগোষ্ঠীরও পঞ্চাশ হল এ বছর। অল্প দিন আগেই তাদের প্রযোজনা ‘কুশীলব’-এ তাঁর একক অভিনয়, আর নির্দেশনায় ‘বিয়ে-গাউনি কাঁদনচাপা’ পুরোদমে চলছে এখনও। বেলাঅবেলার গল্প, বেড়া, অন্ধযুগের মানুষ-এ তাঁর নির্দেশনা আর অভিনয় আজও অমলিন। রাজরক্ত, চাকভাঙা মধু, গালিলেওর জীবন-সহ অনেক নাটকেই স্মৃতিধার্য তাঁর অভিনয়। অভিনয় করেছেন সত্যজিৎ রায় মৃণাল সেন সহ বহু বিশিষ্ট পরিচালকের ছবিতে। থিয়েটার ও অভিনয় শিখিয়ে চলেছেন নিরন্তর, দেশের বাইরেও। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি নিয়ে শিক্ষকতার পর রবীন্দ্রভারতীতে নাটক-এর একদা প্রধান ও মাস কমিউনিকেশন-এর প্রতিষ্ঠাতা। বিদেশি নাটক রূপান্তর করেছেন, বেরিয়েছে নাটক সমগ্র ২ (সপ্তর্ষি)। সদ্য বেরল প্রসঙ্গ নির্দেশনা (প্রয়াগ প্রকাশনী)। তাঁর নির্দেশনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘বাইশ গজের জীবন’, এই প্রথম বাঙালির ক্রিকেট-জীবন নিয়ে নাটক। পরের অভিনয় অ্যাকাডেমিতে ১৭ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায় এবং ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে ২০ মার্চ সন্ধে সাড়ে ৬টায়— ওই দিনই পঁচাত্তর পূর্ণ করবেন অশোকবাবু।
পথিকৃৎ
ছাত্র কেমিস্ট্রির। প্রিয় বিষয় ফিজিক্স। ম্যাথমেটিক্স নিয়ে গবেষণা। পরে আমেরিকায় কম্পিউটার সায়েন্সে কাজ। ইনিই প্রাচ্যে প্রথম কম্পিউটার-নির্মাতা সমরেন্দ্রকুমার মিত্র। বাবা স্যর রূপেন্দ্রকুমার মিটার, চিফ জাস্টিস, কলকাতা হাইকোর্ট। সমরেন্দ্র প্রফুল্লচন্দ্রের ছাত্র। ‘মিটার’ কেটে পদবি লিখলেন ‘মিত্র’। বাড়ির গাড়ি করে বোমা সাপ্লাই দেন বিপ্লবীদের। খবর পেয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপ বাপের বুক দুরুদুরু। এই বুঝি পুলিশ ধরল। কেমিস্ট্রিতে এম এসসি। এম এসসি করার ইচ্ছে ফলিত গণিতেও। পরীক্ষার আগে অসুস্থ হওয়ায় ডিগ্রিটা হল না। মেঘনাদ সাহার কাছে গবেষণা, অথচ সমর সত্যেন্দ্রনাথ বসুর কাছে পান পুত্রস্নেহ। মেঘনাদ বিরক্ত। সমর ব্যথিত। ১৯৪৯-এ ইউনেস্কো বৃত্তি পেয়ে আমেরিকা। জন ফন নরম্যান-এর অধীনে কম্পিউটার নিয়ে গবেষণা। সমর বুঝলেন, এ মেশিন দুনিয়া পালটাবে। গবেষণাকেন্দ্র প্রিন্সটনের সেই বিখ্যাত ইনস্টিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডি। সেখানে আইনস্টাইন, নিলস বোর-এর সঙ্গ পেয়ে সমর ধন্য। চাকরির প্রস্তাব উপেক্ষা করে স্বদেশি কম্পিউটার বানাতে এলেন ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে। ১৯৫০-’৬০-এর দশকে বানালেন অ্যানালগ ও ডিজিটাল কম্পিউটার। যন্ত্রাংশ? কেন, ধর্মতলায় মেশিন পার্টসের দোকান। সে সব কম্পিউটার দেখতে এসেছিলেন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। এশিয়ায় কম্পিউটারের জনক সমর প্রয়াত হন ১৯৯৮-এর ২৬ সেপ্টেম্বর। আজ ১৪ মার্চ তাঁর জন্মশতবর্ষ। পেরিয়ে যাচ্ছে নিঃশব্দে।