কলকাতার কড়চা: হাতের মুঠোয় বিশ্বসাহিত্য

‘পেঙ্গুইন ক্লাসিকস সিরিজ়’-এর অন্যতম সম্পাদক হেনরি, সত্তর পেরিয়ে আজ যে সিরিজ়কে বিশ্বের ধ্রুপদী সাহিত্যের সর্ববৃহৎ গ্রন্থালয় বললে অত্যুক্তি হয় না মোটেই।

Advertisement
শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share:

মেসোপটেমিয়ার আঁকিবুঁকি থেকে শুরু করে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কবিতা— ৪০০০ বছরে কৃতি থেকে কীর্তিতে রূপ পেয়েছে মানুষের লেখালিখি। এনসাইক্লোপিডিয়া নয়, এমন কোনও ‘বই’ কি হতে পারে, দু’মলাটের মধ্যে যে পরিচয় করিয়ে দেবে এই কয়েক সহস্রাব্দের সাহিত্যসম্ভারের সঙ্গে? গ্রিক ট্রাজেডি থেকে আইসল্যান্ডের গাথা, বৌদ্ধ ধর্মশাস্ত্র থেকে আফ্রিকার মিথ, আরব্য রজনী থেকে নিৎশের দর্শন, এই সব ‘ক্লাসিক’ নিয়েই ‘দ্য পেঙ্গুইন ক্লাসিকস বুক’ লিখেছেন হেনরি এলিয়ট। ৫০০জন লেখকের ১২০০টি বইয়ের পরিচিতি, যে বইগুলি জনপ্রিয়, নিন্দিত বা নন্দিত বটেই, তারও বেশি কাল-পরীক্ষিত। ‘পেঙ্গুইন ক্লাসিকস সিরিজ়’-এর অন্যতম সম্পাদক হেনরি, সত্তর পেরিয়ে আজ যে সিরিজ়কে বিশ্বের ধ্রুপদী সাহিত্যের সর্ববৃহৎ গ্রন্থালয় বললে অত্যুক্তি হয় না মোটেই। ভারতের নানা শহরে পেঙ্গুইন র‌্যান্ডম হাউজ় ইন্ডিয়া শুরু করেছে ‘পেঙ্গুইন ক্লাসিকস ফেস্টিভ্যাল’, তারই শেষ পর্বে কলকাতায় এসেছিলেন হেনরি। বলছিলেন, তিনটি মাপকাঠিতে নির্ধারিত হয় একটি বইয়ের ‘ক্লাসিক’ হয়ে ওঠা— সাহিত্যমূল্য, ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও দীর্ঘস্থায়ী পাঠকপ্রিয়তা। পেঙ্গুইন ক্লাসিকস বুক-এ ‘ভারত’-এর জন্য কেবল একটি পাতা বরাদ্দ, শুধু রবীন্দ্রনাথের তিনটি বই, অনুযোগের উত্তরে জানালেন, এ অভিমান সঙ্গত নিশ্চয়ই, কিন্তু দেশজ ভাষায় লেখা স্মরণীয় সাহিত্যের লোকপ্রিয় ইংরেজি অনুবাদ গোড়ায় আসা চাই দেশের মানুষের মধ্যে থেকেই, সে কাজটি কি ঘটছে ভারতে? উদাহরণ দিলেন পেঙ্গুইন ক্লাসিকস সিরিজ়ের প্রবাদপ্রতিম সম্পাদক-অনুবাদক ই ভি রিউ-য়ের, চল্লিশের দশকে সুলভ ‘দি ওডিসি’-র অনুবাদগুলি মনমতো না হওয়ায় নিজেই যিনি করে ফেলেছিলেন গ্রিক মহাকাব্যের নতুন এক তরজমা। এক শিলিং দামের সেই বইই পেঙ্গুইন ক্লাসিকস সিরিজ়ের প্রথম বই, বিক্রি হয়েছিল ত্রিশ লক্ষেরও বেশি! ক্লাসিকস সিরিজ়ের বইগুলির দাম আজও মানুষের আয়ত্তের মধ্যে রাখা হয়। হেনরি ‘কিউরিয়সিটি’ নামে দুর্দান্ত আর একটি বইয়েরও লেখক, গ্রাফিক নভেল-ধাঁধা-চুটকি-মানচিত্র আঙ্গিকের ব্যবহারে যে বই লন্ডন শহরটা চিনিয়ে দিতে পারে তার অস্থিমজ্জা সমেত। সাউথ সিটির স্টারমার্ক বই-বিপণিতে ডিসেম্বর জুড়ে চলবে পেঙ্গুইন ক্লাসিকস ফেস্টিভ্যাল।

Advertisement

কথাসাহিত্যিক

Advertisement

ষাটের দশকে বাংলা সাহিত্যে একটি স্বতন্ত্র ঢেউ তুলতে সক্ষম হয়েছিল আবদুল আজিজ আল আমান সম্পাদিত ‘কাফেলা’ পত্রিকা। এই গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতায় উঠে এসেছিলেন এক ঝাঁক তরুণ প্রতিভাবান সাহিত্যিক, তাঁদের মধ্যে আবদুর রাকিব অন্যতম। শিক্ষকতা পেশাকে ‘প্রথম প্রেম’ বলে দাবি করেছেন নিজেই, তবুও তাঁর প্রতিকূলে একজন, বাদশা ও বাবুই বৃত্তান্ত গল্পগ্রন্থের হাবিব, কোহিনূর, তৈয়বজী চরিত্রদের বিস্মৃত হওয়া কঠিন। কলেজ ছাত্র যখন, সান্নিধ্যে আসেন চারণকবি গুমানী দেওয়ানের। ১৯৬৮-তে লিখলেন শ্রমসাধ্য জীবনীগ্রন্থ চারণকবি গুমানী দেওয়ান। লিখেছেন সংগ্রামী নায়ক মাওলানা আবুল কালাম আজাদ, আল-কুরানের উপমা-ব্যঞ্জনা, একত্ববাদের মশাল-দৌড় ইত্যাদি। জন্ম ১৯৩৯-এ, বীরভূমের মুরারইয়ের এদরাকপুর গ্রামে। মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। আত্মজীবনী পথ পসারীর পত্রোত্তর-এ আক্ষেপ করে লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের বাঙালিত্ব সবাই চান, কিন্তু কেউই চাননা মুসলমানত্ব।’’ ২১ নভেম্বর প্রয়াত হলেন তিনি। ৪ ডিসেম্বর বিকেলে অশোকনগরে তাঁর স্মরণসভা। আয়োজক অহর্নিশ।

পথিকৃৎ বিজ্ঞানী

এ দেশে ষাটের দশকে মলিকিউলার বায়োলজি চর্চার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি। উপাচার্যের দায়িত্ব পালন করা (১৯৭৯-৮৩) ছাড়াও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে বায়োফিজ়িক্স, মলিকিউলার বায়োলজি ও জেনেটিক্স বিভাগ সূচনা তাঁরই সহায়তায়। রমেন্দ্রকুমার পোদ্দারের জন্ম বর্তমান বাংলাদেশের পাবনায়, ৯ নভেম্বর ১৯৩০। ফিজ়িক্স নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর বিদেশে গবেষণা। ১৯৬৩ সালে যোগ দেন কলকাতার সাহা ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার ফিজ়িক্সে, ’৭৩-এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজ়িক্স বিভাগে। ১৯৮৫-তে রাজ্যসভার সদস্যও হন। ২১ নভেম্বর প্রয়াত হলেন এই বিজ্ঞানী। ৪ ডিসেম্বর দুপুর ৩টেয় সায়েন্স কলেজের রাজাবাজার শিক্ষাঙ্গনে মেঘনাদ সাহা হলে তাঁর স্মরণসভা।

মঞ্চগান

পঁয়ত্রিশ বছর ধরে নাটকের গান নিয়ে কাজ করে চলেছে আকাদেমি থিয়েটার। ইতিমধ্যে তারা গড়ে তুলেছে একটি আর্কাইভ— যেখানে আছে ত্রিশ হাজার মূল্যবান বই, কুড়ি হাজার রেকর্ড, বিলবোর্ড, দুষ্প্রাপ্য বাদ্যযন্ত্র। এ বার তাদের উদ্যোগ একটি অপেরাধর্মী প্রযোজনা: ‘নারী— অ্যান আনসাং স্টোরি’ (গল্প-গাথায় মঞ্চগান)। সমসময়ের পোশাকে মঞ্চে অভিনয়ে থাকবেন মাধবী মুখোপাধ্যায়, কৌশিক সেন, অগ্নিমিত্রা পল, দেবজিত্‌ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিরূপ সেনগুপ্ত। বাংলাদেশ থেকে আসছেন পুনম প্রিয়াম, গুলজ়ার হোসেন উজ্জ্বল। থাকছে ঋদ্ধি মিউজ়িক অ্যাকাডেমির এক ঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থী। বিনোদিনী, তিনকড়ি, প্রভা দেবী, কানন দেবী, আঙুরবালা, ইন্দুবালা, ছায়া দেবী, মলিনা দেবী, কেতকী দত্ত, কেয়া চক্রবর্তীর জীবন-গান-অভিনয় নিয়েই সাজানো হয়েছে অপেরাটি। ৮ ডিসেম্বর সন্ধে ৬টায় আইসিসিআর-এ। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়।

নতুন চোখে

ক্ষিতিমোহন সেন তাঁর ‘যুগগুরু রামমোহন’ প্রবন্ধে রামমোহন-সমকালীন এমন অনেক সাধককে চিহ্নিত করেছিলেন, যাঁরা আদর্শ ও সাধনায় তাঁর সঙ্গে একেবারে অভিন্ন ছিলেন, কিন্তু যোগাযোগের অভাবে তাঁরা পরস্পরকে জানতে পারেননি। হিন্দু সমাজে সংস্কারের এমন নানা উদ্যোগ প্রসঙ্গে টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ব্রায়ান হ্যাচার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন উনিশ শতকের গোড়ায় গুজরাতে সক্রিয় সহজানন্দ স্বামী আর তাঁর স্বামীনারায়ণ সম্প্রদায়ের প্রতি। আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ান স্টাডিজ় ও সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের উদ্যোগে ৭ ডিসেম্বর বিকেল ৫টায় যদুনাথ ভবনে তরুণ মিত্র স্মারক বক্তৃতায় হ্যাচার বলবেন ‘রামমোহন রায় ইন গুজরাত: ওল্ড কমপ্যারিজ়ন্স অ্যান্ড নিউ’ শীর্ষকে। এরই পাশাপাশি হ্যাচার বর্তমানে কাজ করছেন বাংলায় দশনামী শৈব সম্প্রদায়ের কেন্দ্রগুলি নিয়ে।

জীবন থেকে নাটক

চিনে ভারতীয় মেডিক্যাল মিশনের কার্যক্রম ও ডাক্তার দ্বারকানাথ কোটনিসের জীবনের উপর ভিত্তি করে অমল রায়ের লেখা নাটক ‘ইন্টারন্যাশনালিস্ট’ আবার মঞ্চস্থ হচ্ছে। ডা. কোটনিসের ৭৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ৯ ডিসেম্বর রামমোহন লাইব্রেরি হলে ডা. দ্বারকানাথ কোটনিস স্মৃতি রক্ষা কমিটির সদস্য ও সহযোগীদের এই উপস্থাপনাটির পরিচালনায় বেদান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। কোটনিসের শতবর্ষের অনুষ্ঠানে এটি একবারই মঞ্চস্থ হয়েছিল। এ দিনের অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে আছে আলোচনা, বিষয়— ‘ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সাম্রাজ্যবাদী ও বহুজাতিক পুঁজির আগ্রাসন’, বলবেন ডা. সিদ্ধার্থ গুপ্ত।

দাস্তানগোই

ক্যালকাটা কারবাঁ দাস্তানগোই (দাস্তান অর্থে গল্প এবং গোই মানে বলা) এই প্রায়লুপ্ত হেরিটেজ ধারাটি নিয়ে আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। ঐতিহ্য ইতিহাস সাহিত্য সংস্কৃতি দাস্তানগোই-এর উপজীব্য। ওদের পঞ্চম হেরিটেজ বৈঠকের বিষয়, ভালবাসার গল্প, ‘দাস্তান এ মোহব্বত’। ‘স্তব্ধ প্রহরে দুজনে বিজনে একা’। শাহজাদা দারাশুকোর প্রেম নিয়ে দাস্তানগোই ‘রানাদিল’। অংশগ্রহণে অভ্র ঘোষ, সুপর্ণা দেব। সেনিয়া মাইহার ঘরানার সরোদ বাদক অনুপম জোশী প্রেম বিরহ ও সন্ধের রাগ দিয়ে আবহ সঙ্গত করবেন। দ্বিতীয়ার্ধে দিল্লির কথক আসিফ খান দেহলভি শোনাবেন প্রেমের গল্প। ইতিহাস ও ঐতিহ্য নির্ভর। সঞ্চালনায় উর্দু সাহিত্যের বিশিষ্ট অনুবাদক সঞ্চারী সেন। ৯ ডিসেম্বর বিকেল পাঁচটায়, আইসিসিআর-এর অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর গ্যালারিতে।

ডোকরার ডাক

হরপ্পার গয়নাই হোক বা মহেঞ্জোদড়োর নর্তকী, ভারতীয় সভ্যতায় সুপ্রাচীন ধাতুশিল্পের ধারার উত্তরসূরি ডোকরা শিল্প। মেলায় ডোকরার কাজ দেখে আমরা দরাদরি করি, এ না জেনেই যে এক-একটি শিল্পবস্তুর আড়ালে শিল্পীর কী পরিমাণ শ্রম, সময় ও ধৈর্য থাকে। ডোকরার ‘কী ও কেন’ তুলে ধরতে কলকাতার শিল্পসংস্থা চালচিত্র অ্যাকাডেমি সম্প্রতি আয়োজন করেছিল কর্মশালা ‘ডোকরার ডাক’। উদ্দেশ্য, ডোকরা-গড়িয়ে লোকশিল্পীদের সঙ্গে মূলধারার শিল্পী ও সাধারণ মানুষকে মেলানো। বর্ধমানের দরিয়াপুর থেকে এসেছিলেন ডোকরা শিল্পী শুভ কর্মকার, দেখালেন ডোকরা গড়ার প্রতিটি ধাপ। চিত্রশিল্পী যোগেন চৌধুরী (ছবিতে), তাপস কোনার, পার্থ দাশগুপ্তও সাগ্রহে যোগ দিয়েছেন। চালচিত্রের বন্ধুরা এর আগে কর্মশালা করেছেন ব্রতকথা আলপনা, শোলা, পটচিত্র, টেরাকোটা, বাবু পুতুল নিয়ে, ডোকরা-যোগে বৃত্তটি পূর্ণ হল।

পট-উৎসব

আশির দশক থেকেই বাংলার পটচিত্রীরা ক্রাফ্টস কাউন্সিল অব ওয়েস্ট বেঙ্গলের কাজকর্মে সমধিক গুরুত্ব পেয়েছেন। পটশিল্পীদের গ্রামে গ্রামে সমীক্ষা থেকে শুরু করে তাঁদের নিয়ে কর্মশালা, সংগ্রহশালায় নিয়ে গিয়ে পুরনো পট দেখানো, পট আঁকায় প্রাকৃতিক রঙের ব্যবহার ফিরিয়ে আনতে উৎসাহ দান এমনই সব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আস্তে আস্তে এই বাংলার লোকঐতিহ্যের অন্যতম উজ্জ্বল ধারা এই পটশিল্পের কিছুটা পুনরুজ্জীবন ঘটেছে। শিল্পীরা রামায়ণ-মহাভারত-লোককথার বাইরে নতুন নতুন কাহিনিও পটে রূপায়ণ করেছেন। এ বার সংস্থার সুবর্ণ জয়ন্তীতে পটুয়াদের নিয়েই আয়োজিত হয়েছে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘বেঙ্গলস পট অব গোল্ড’ (কলকাতা সেন্টার ফর ক্রিয়েটিভিটি, আনন্দপুর, ইএম বাইপাস), চলবে ২৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত, ১০-৬টা। নতুন-পুরনো পটের প্রদর্শনী ছাড়াও আছে পটুয়াদের গল্প বলা, ছোটদের জন্য কর্মশালা, পটের দুর্গা ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা।

রবিবাসর ৯০

‘‘আজ শরৎচন্দ্রের অভিনন্দনে বিশেষ গর্ব্ব অনুভব করতে পারতুম যদি তাঁকে বলতে পারতুম তিনি একান্ত আমারি আবিষ্কার। কিন্তু তিনি কারো স্বাক্ষরিত অভিজ্ঞানপত্রের জন্যে অপেক্ষা করেন নি। আজ তাঁর অভিনন্দন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে স্বত উচ্ছ্বসিত।...’’ ২৫ আশ্বিন ১৩৪৩ বঙ্গাব্দে শরৎচন্দ্রের ষাট বছর পূর্তিতে রবিবাসরের সংবর্ধনা সভায় রবীন্দ্রনাথ এই আশীর্বাণী পাঠ করেন। দেখতে দেখতে সেই রবিবাসর ৯০ বছরে পা রাখল। ১৯২৯-এর ২৪ নভেম্বর কয়েক জন সাহিত্যমনস্ক যুবক ভবানীপুরের একটি বাড়িতে নিছক আড্ডা দিতে দিতেই গড়ে তোলেন সংস্থাটি। প্রথম সম্পাদক সুবোধচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। বছরের ৫২ সপ্তাহ ধরে সদস্য সংখ্যা সীমিত ৫২-তেই। সদস্যদের অনুরোধে রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু ছিলেন রবিবাসরের ‘অধিনায়ক’। আসরে পড়া লেখাপত্র ইতিমধ্যে ৫০টি সঙ্কলন গ্রন্থে স্থান পেয়েছে। দীর্ঘ দিন সংস্থার সম্পাদক ছিলেন সন্তোষকুমার দে, তাঁর ‘রবিবাসরের আসরে’, ‘রবিবাসরের কাল’ বইতে ধরা আছে নানা ইতিবৃত্ত। ভবতোষ দত্ত সম্পাদিত ‘রবিবাসরে রবীন্দ্রচর্চা’ গ্রন্থে আছে রবীন্দ্রনাথ বিষয়ক রচনাগুলি। ৯০ বছর উপলক্ষে ২ ডিসেম্বর ইতিহাসবিদ রমেশচন্দ্র মজুমদারের ১৩১তম জন্মদিনে তাঁর বালিগঞ্জের বাড়িতে নিবেদিত হল শ্রদ্ধার্ঘ্য, পুনঃপ্রকাশিত হল রমেশচন্দ্রের আত্মজীবনী ‘জীবনের স্মৃতিদীপে’ (পারুল)।

মূকাভিনয়

জীবনে সাফল্যের জন্য স্ট্রাগলের কোনও বিকল্প হয় না’’— নির্বাক কৌতুক অভিনেতার এটাই জীবনবোধের নির্যাস। তাঁর গুরুর নাম ‘আয়না’। আয়নার সামনেই সারা জীবন রেওয়াজ করেছেন। পূর্ববঙ্গের ফরিদপুর জেলার মাদারিপুর মহকুমায় ১৯৩৫-এ জন্ম ভোলা ওরফে যোগেশ দত্তর। কৈশোর-শেষের এক অবসরে রবীন্দ্র সরোবরের ধারে বসে দেখছেন দূরে বসা মানুষজন নিজেদের মধ্যে কত কথা বলছেন। কারও আওয়াজ দেখে তিনি আন্দাজ করার চেষ্টা করলেন তাঁরা কী বলছেন। এটা দেখে তিনি ভাবলেন, এ ভাবে কথা না বলে কেবল অঙ্গভঙ্গি দিয়ে, নির্বাক কৌতুক শুরু করলে কেমন হয়। হাওড়ার এক অনুষ্ঠানে তিনি সেটাই প্রথম দেখালেন— একটি মেয়ে আয়নার সামনে বসে কী ভাবে চুল আঁচড়ায়, সাজগোজ করে। প্রথম প্রচেষ্টাতেই বাজিমাত। আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রতি বছরের মতো এ বারও তিন দিনের ৪০তম মূকাভিনয় উৎসব ও তাঁর হাতে গড়া পদাবলীর ৪৮তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উৎসবের আয়োজন হয়েছে। সূচনা ৭ ডিসেম্বর, সন্ধে ৬টায় যোগেশ মাইম অ্যাকাডেমি মঞ্চে (চলবে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত)। উদ্বোধন করবেন অনুপ মতিলাল। উৎসবে থাকবে কর্মশালা ভিত্তিক প্রশিক্ষণ, মূকাভিনয় প্রদর্শন ও যোগেশ দত্তের উপর নির্মিত ‘মূক-কলা’ ও কানহাইয়ালালের উপর নির্মিত ‘থিয়েটার অব দি আর্থ’ শীর্ষক তথ্যচিত্র প্রদর্শন। থাকছে বাংলাদেশের মুক্তমঞ্চ নির্বাক দল-এর মূকাভিনয় উপস্থাপনা। সংস্কৃতির বিভিন্ন শাখার চর্চায় এ বছর থেকে শুরু হওয়া পদাবলীর নিবেদন ‘শুচিতা দত্ত স্মারক বক্তৃতা’য় ‘থিয়েটারের দিগন্ত অতিক্রম’ বিষয়ে বলবেন শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘পদাবলী সম্মান’-এ ভূষিত হবেন সৌমিত্র বসু। পরিবেশিত হবে পিয়াল ভট্টাচার্যের উপনাটিকা ‘বেদন’।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন