ভিডিয়ো কলিংয়ের ফাঁদে যাত্রী তখন পথের মাঝে। নিজস্ব চিত্র
বাঁ হাতে ধরা ট্রলি ব্যাগ। ওই বাঁ দিকের কাঁধেই আরও একটি ব্যাগ। পিঠের ব্যাগের ওজন যেন আরও একটু বেশি! সেই সব নিয়েই রাস্তা পেরোচ্ছিলেন এক যুবক।
ধর্মতলার বিধান মার্কেট সংলগ্ন রাস্তায় পৌঁছেই হঠাৎ কী মনে পড়ে গেল তাঁর। কানে হেডফোন গুঁজে অন্য হাতে মোবাইল তুলে ধরে ‘ভিডিয়ো কলিং’ শুরু করলেন। প্রবল উত্তেজিত। সে ভাবেই উদ্ভ্রান্তের মতো হাঁটা শুরু করলেন। চৌরঙ্গির রাস্তায় চার পাক খেয়ে, পরপর উঁচু বহুতলের সামনে দিয়ে মোবাইল ঘুরিয়ে এক জায়গায় দাঁড়ালেন। উত্তেজিত ভাবে হিন্দিতে বলছেন, ‘‘এটা কলকাতা। দেখেছ? উঁচু বাড়ি! মেট্রোরেল! দেখতে পাচ্ছ?’’
ফোনের ও প্রান্তের মানুষটি কী বললেন শোনার তো উপায় নেই। তবে তার উত্তেজিত ভাব কেটে গেল কিছু পরে। তীব্র হর্নে তখন হতভম্ব দশা তাঁর। হুঁশ ফিরতে দেখলেন, ব্যস্ত রাস্তার মাঝে এসে পড়েছেন তিনি। পিছনে তিনটি গাড়ি। কোনও মতে বেঁচেছেন। ট্র্যাফিক পুলিশের ধমক খেয়ে জানালেন, তাঁর নাম রোশন সাউ। ওড়িশা থেকে সে দিনই প্রথম কলকাতায় এসেছেন। বললেন, ‘‘বাড়ির লোক মেট্রো দেখাতে বলে দিয়েছিল। তাই পৌঁছেই ভিডিয়ো কল করছিলাম। কত কী দেখানোর রয়েছে এখানে। তাই লোভ সামলাতে পারিনি।’’ বিপদ ঘটলে কী হত? চাপা গলায় রোশন বললেন, ‘‘না দেখালে স্ত্রীর অভিমান হত!’’
শুধু ওই যুবক নন। যে কোনও নতুন জায়গায় পৌঁছে ছবি বা ভিডিয়ো তোলার পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে ‘ভিডিয়ো কলিং’। শহর কলকাতায় বেড়াতে বা কাজে আসা ভিন্ রাজ্য এবং ভিন্ দেশের বাসিন্দারাও এ ভাবে ভিডিয়ো কলিংয়ে মেতে উঠছেন। এটাই এখন বড় মাথাব্যথা কলকাতা পুলিশের।
লালবাজারের তরফে জানানো হচ্ছে, গাড়ি চালানো বা পথ চলার সময়ে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করার জন্য লাগাতার প্রচার চালাচ্ছেন তাঁরা। যেখানে সেখানে ছবি-ভিডিয়ো তোলা বন্ধ করতে পথ-বিধি বানানো হয়েছে। তবু সচেতনতা ফিরছে না।
চিন্তিত কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের ডিসি সুমিত কুমার বললেন, ‘‘যত্রতত্র ভিডিয়ো কলিং করায় দুর্ঘটনা বাড়ছে। সচেতনতার প্রচারেও কিছু হচ্ছে না। এ বার জরিমানা করে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’’ তিনি জানান, এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে ধর্মতলা, পার্ক স্ট্রিট, রবীন্দ্র সদন এলাকায়। এই এলাকার পথে ‘ভিডিয়ো কলিং’-এর উপদ্রব বেশি। বাড়তি নজরদারির ব্যবস্থাও করা হচ্ছে বলে জানালেন সুমিতবাবু।