অপেক্ষা আড়াই ঘণ্টা

শববাহী গাড়ি পাঠালই না লালবাজার

আড়াই ঘণ্টা ধরে পথে পড়ে রইল মৃতদেহ। কিন্তু ১৫ মিনিট দূরের পথ থেকে এসে পৌঁছলো না শববাহী গাড়ি। লালবাজার থেকে যে শববাহী গাড়ি আসতে ১০-১৫ মিনিট লাগার কথা, পুলিশের দাবি, যানজটে আটকে থাকায় সেটি পৌঁছতে পারেনি।

Advertisement
নিজস্ব সংবাদদাতা শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:২৩
Share:

আড়াই ঘণ্টা ধরে পথে পড়ে রইল মৃতদেহ। কিন্তু ১৫ মিনিট দূরের পথ থেকে এসে পৌঁছলো না শববাহী গাড়ি। লালবাজার থেকে যে শববাহী গাড়ি আসতে ১০-১৫ মিনিট লাগার কথা, পুলিশের দাবি, যানজটে আটকে থাকায় সেটি পৌঁছতে পারেনি।

Advertisement

বোন পূর্ণিমা ঠক্করের মৃতদেহ শনাক্ত করার পরে সেই মৃতদেহ আগলে ঠায় আড়াই ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন দাদা কিরীট ঠক্কর। খোলা আকাশের নীচে, গঙ্গার পাড়ে। সঙ্গে কয়েকজন আত্মীয়-বন্ধু। পুলিশ পাশেই ছিল। বার বার করে লালবাজারে ফোন করে শবদেহবাহী গাড়ি ডেকে পাঠানো হচ্ছিল। সেই গাড়ি এলে মৃতদেহ নিয়ে মেডিক্যাল কলেজ যাওয়ার কথা। চিকিৎসকেরা দেখে ‘নিয়মরক্ষার’ মৃত ঘোষণা করবেন। তার পরে শুরু হবে ময়নাতদন্ত, সুরতহাল।

সোমবার সকালে বাবুঘাট বাসস্ট্যান্ডের কাছে বাজে কদমতলা ঘাটে এ ভাবে এক মহিলার মৃতদেহ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কয়েক জনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ভিড়ও জমে যায় সেখানে।

Advertisement

শেষ পর্যন্ত পুলিশের সেই শববাহী গাড়ি আসেনি। শোকস্তব্ধ পরিবারের সাহায্যে এগিয়ে আসেন স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। তাঁরাই ফোন করে বেসরকারি শববাহী গাড়ি ডেকে আনেন। সেই গাড়িতে করেই ৪২ বছরের পূর্ণিমা ঠক্করের দেহ পৌঁছয় হাসপাতালে।
আর তাঁর দাদা কিরীট ঠক্কর পুলিশ মর্গে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘শেষ মুহুর্তে স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যবস্থা না করলে আজ ময়না তদন্তই হত না। কেন ওই গা়ড়ি লালবাজার পাঠাল না বুঝতে পারছি না।’’

পুলিশের দাবি, চারু মার্কেটে যানজটে আটকে থাকার কারণে সেই গাড়ি আসতে দেরি হয়েছে। কেন চারু মার্কেট? পুলিশের এই গাড়ি তো থাকার কথা লালবাজারেই। আর লালবাজার থেকে বাজে কদমতলা ঘাট পৌঁছতে বড়জোর ১০-১৫ মিনিটই লাগার কথা। তবে কি লালবাজারে থাকা শববাহী গাড়ি সব খারাপ হয়ে পড়ে রয়েছে? একটিমাত্র গাড়িই রয়েছে যেটি এ দিন সকালে কোনও কাজে চারু মার্কেট গিয়েছিল? নাকি, এই গাড়ির চালকের অভাব রয়েছে? চারু মার্কেট থেকে বাজে কদমতলা ঘাট কেন আড়াই ঘণ্টাতেও পৌঁছন গেল না?

পুলিশের যুক্তি, এই ধরনের শববাহী গাড়ি মোট চারটি থাকলেও প্রতি দিন সকাল-দুপুর-রাতে একটি করে গাড়িই ডিউটিতে থাকে। এ দিনও তাই ছিল। তা হলে একই সময়ে শহরে একাধিক মৃতদেহ তুলে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হলে কী হবে? যতক্ষণ না একটি মৃতদেহ তুলে হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে, ততক্ষণে রাস্তায় পড়ে থাকবে অন্য মৃতদেহ?

এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তরই এ দিন পাওয়া যায়নি। কলকাতার অতিরিক্ত কমিশনার (৩) সুপ্রতিম সরকারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইলে পাঠানো বার্তার কোনও জবাব দেননি।

কী হয়েছিল এ দিন?

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সকাল ৮টা নাগাদ উত্তর বন্দর থানা এলাকার নিমতলা ঘাটের কাছে গঙ্গায় এক মহিলার দেহ ভাসতে দেখা যায়। পরে সেই মহিলার দেহ বাজে কদমতলা ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়। ওই মহিলার কনুই থেকে ডান হাতের অংশটি ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। স্থানীয় মানুষজনের কাছ থেকে খবর পেয়ে ন’টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান ওই মহিলার দাদা। তিনিই বোনের দেহ শনাক্ত করেন।

কিরীট জানিয়েছেন, বছর দশেক আগে তাঁর বোনের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তার পর থেকে বড়বাজারে দাদাদের কাছেই থাকছিলেন তিনি। প্রতি রবিবার বড়বাজারের ওই বা়ড়ি থেকে জোকায় একটি মন্দিরে একাই যেতেন পূর্ণিমা। দুপুরবেলা বেরোলে সেখান থেকে ফিরতে রাত হয়ে যেত। তাই এই রবিবার রাত পর্যন্ত বোন বাড়ি না ফেরায় কোনও সন্দেহ হয়নি। কিন্তু সারারাত বাড়ি না ফেরায় সোমবার সকালে তাঁরা খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। এর মধ্যেই ভূতনাথ মন্দিরের কাছে থাকা পরিচিত কয়েক জন তাঁকে গঙ্গায় মৃতদেহ ভেসে ওঠার খবর দেন। এরপরই তিনি গিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন