চিড়িয়াখানায় মৃত্যু শেষ লাল ক্যাঙারুর

জন্ম দিয়েই মারা গিয়েছিল মা। বছর চারেকের মাথায় মারা গেল সেই ছোট্ট জয়ীও। মৃত্যুর খবর অবশ্য পাওয়া গেল আরও মাস খানেক পর। কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার ক্যাঙারু জয়ীর মৃত্যু হয়েছে গত মাসে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৫ ১৫:৪৯
Share:

জন্ম দিয়েই মারা গিয়েছিল মা। বছর চারেকের মাথায় মারা গেল সেই ছোট্ট জয়ীও। মৃত্যুর খবর অবশ্য পাওয়া গেল আরও মাস খানেক পর। কলকাতার আলিপুর চিড়িয়াখানার ক্যাঙারু জয়ীর মৃত্যু হয়েছে গত মাসে। তাঁর মৃত্যুর সঙ্গেই ভারতে শেষ হয়ে গেল লাল ক্যাঙারুর প্রজাতিও।

Advertisement

২০১১ সালে চেক প্রজাতন্ত্র থেকে ভারতে আনা হয় ৪টি লাল ক্যঙ্গারুকে। গত চার বছরে মৃত্যু হয়েছে তাঁদের চার জনেরই। জয়ীই ছিল সেই বংশের শেষ সন্তান। জন্মের পর থেকেই নানাভাবে ভুগত জয়ী। জয়ীর মৃত্যুর রিপোর্টে লেখা হয়েছে ফুসফুসের গোলযোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ফলেই মৃত্যু হয়েছে তাঁর। চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর, এছাড়াও মায়োপ্যাথিতে ভুগছিল জয়ী। কী এই মায়োপ্যাথি?

মায়োপ্যাথিতে মূলত ক্ষতিগ্রস্ত হয় পশুর শরীরের পেশী। ফুসফুস এবং হৃদপিন্ডের পেশীও তাতে আক্রান্ত হয়। জন্মের পর থেকেই নানান চিকিত্সায় সুস্থ থাকতে শুরু করেছিল জয়ী। কিন্তু মৃত্যুর বেশ কিছু দিন আগে থেকেই দেখা যাচ্ছিল উচ্ছ্বাস ক্রমেই কমে আসছিল জয়ীর। তার থাকায় জায়গার মাটিতে সে চুপ করে শুয়ে থাকত। খাওয়াদাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছিল সে। পশু চিকিত্সকদের পরামর্শে বিভিন্ন ওষুধ এবং ইঞ্জেকশনেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতিই দেখা যায়নি জয়ীর।

Advertisement

পশু বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের আবহাওয়ায় ক্যঙারুদের বেঁচে থাকার কথাই নয়। সাধারণত লাল ক্যাঙারুর দেখা মেলে অস্ট্রেলিয়ার প্রায়-মরু অঞ্চলগুলোতে। কলকাতায় সারা বছর ধরে তো সেরকম আবহাওয়ার দেখাই মেলে না। ফলত এখানে মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় এই জীবদের। এছাড়া ক্যাঙারুরা ভিড়, চিত্কার, শব্দদূষণ একেবারেই সহ্য করতে পারে না। এখানে এসে তাদের অবস্থা হয় তথৈবচ। চিড়িয়াখানায় এতো লোকের ভিড়, ক্রমাগত নানান রকমের শব্দ—এসবের ফলে ক্যাঙারুদের মানসিক এবং শারীরিক একটা চাপ তৈরি হয়। ভিন দেশের পশু বা পাখিদের অন্য আবহাওয়ায় মানিয়ে নিতে স্বাভাবিকভাবেই কষ্ট হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মারা যায় তারা। তা সত্ত্বেও চিড়িয়াখানায় তাদের নিয়ে আসা হয় কেন? চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানান, দেশে বসে বিদেশের পশুদের দেখার যে আকর্ষণ সেটা চিরকালই মানুষের মধ্যে রয়েছে। এখানে পশুদের পছন্দের আবহাওয়া তৈরি করতে পারলেই সমস্যার অনেকটা সমাধান হয়। কৃত্রিমভাবে সেই পরিবেশ তৈরি করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায় পরিকাঠামো। জয়ীর জন্য তার মতো পরিবেশ তৈরি করার ব্যবস্থা নিতে বারবার পরিকল্পনা হলেও ব্যর্থ হয়েছে চিড়িয়াখানা।

সেসবের প্রসঙ্গ এড়িয়ে চিড়িয়াখানার নতুন অধিকর্তা আশিষ সামন্ত জানিয়েছেন, জয়ীর ফাঁকা ঘরে আপাতত কিছু হরিণের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ফের ক্যঙারুর দেখা পাবে কিনা কলকাতাবাসী সেই উত্তর অবশ্য এখনও মেলেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন