দখলের পক্ষে কি আইনের পড়ুয়ারা, প্রশ্ন

সরোবরের সৌন্দর্যায়নের জন্যই ওই উচ্ছেদ বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিচারপতি বাগের নির্দেশ ছিল, সরোবরের সৌন্দর্যায়ন করা যেতেই পারে। কিন্তু ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা যাবে না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০২:১৪
Share:

সুভাষ সরোবর এলাকা থেকে উচ্ছেদের পরে। ফাইল চিত্র

কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সুভাষ সরোবর এলাকা থেকে উচ্ছেদ হওয়া ২২টি পরিবারকে সোমবার সাময়িক আশ্রয় দিতে বাধ্য হল রাজ্য। সরোবর লাগোয়া ‘কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট’ (কেআইটি)-এর জমিতে ওই পরিবারগুলিকে আশ্রয় দেওয়া হবে বলে এ দিন হাইকোর্টের বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের আদালতে জানান রাজ্যের অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল অভ্রতোষ মজুমদার। হাইকোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও রবিবার ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করায় এ দিন আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। সেই মামলার শুনানিতে ওই কথা জানান অভ্রতোষ।

Advertisement

সরোবরের সৌন্দর্যায়নের জন্যই ওই উচ্ছেদ বলে জানিয়েছে পুলিশ। বিচারপতি বাগের নির্দেশ ছিল, সরোবরের সৌন্দর্যায়ন করা যেতেই পারে। কিন্তু ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা যাবে না। ওই উচ্ছেদে বাধা দিতে গিয়ে রবিবার সল্টলেকের ‘ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুরিডিক্যাল সায়েন্সেস’ (এনইউজেএস)-এর পাঁচ জন পড়ুয়া উচ্ছেদকারীদের হাতে মার খান। তাঁদের হাসপাতালে পাঠাতে হয়।

উচ্ছেদ নিয়ে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হলেও প্রশ্ন উঠেছে, দখল করা জমিতে ওই পরিবারগুলি কেন ছিল? আইনজীবীদের একাংশের প্রশ্ন, এনইউজেএস-এর পড়ুয়ারা দখলদার পরিবারগুলির পক্ষ নিতে গেলেন কেন? পড়ুয়াদের বক্তব্য, কোনও জায়গায় কেউ দীর্ঘদিন বসবাস করলে তাঁর আইনি অধিকার জন্মায়। তা না হলে হাইকোর্টই বা উচ্ছেদে স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কেন? হাইকোর্টই বলেছিল, সৌন্দর্যায়ন করার জন্য উচ্ছেদ চলবে না। উচ্ছেদ করার আগে হাইকোর্টের অনুমতি নেওয়া উচিত ছিল। পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করেই ওই সব পরিবারকে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

Advertisement

উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলির আইনজীবী অনিরুদ্ধ চট্টোপাধ্যায় এ দিন জানান, গত জুলাই মাসে ‘কলকাতা মেট্রোপলিটান ডেভেলপমেন্ট অথরিটি’ (কেএমডিএ) ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদের নোটিস পাঠিয়েছিল। তখন উচ্ছেদকে বেআইনি জানিয়ে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করে চারটি পরিবার।

বিচারপতি বাগ উচ্ছেদের উপরে স্থগিতাদেশ জারি করে গত ১১ অগস্ট নির্দেশ দেন, ওই সমস্ত পরিবারের সদস্যদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ আর যে সব পরিচয়পত্র রয়েছে, তা আদালতে পেশ করতে হবে। সেই সব নথি খতিয়ে দেখে গত ২৪ অগস্ট বিচারপতি বাগ কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন, সরোবরের সৌন্দর্যায়ন করা যাবে। কিন্তু তার জন্য ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা যাবে না। আইনজীবী জানান, তা সত্ত্বেও কলকাতা পুরসভার স্থানীয় কাউন্সিলর ফুলবাগান থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ওই পরিবারগুলিকে তুলে দেন। যদিও তেমন কোনও ঘটনার কথা অস্বীকার করেন স্থানীয় কাউন্সিলর পবিত্র বিশ্বাস।
তাঁর বক্তব্য, ‘‘ওটা তো কেআইটি-র জায়গা। আমি যাব কেন?’’

এ দিন সকালে এজলাসে বিচারপতি বাগের আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আইনজীবী অনিরুদ্ধবাবু উচ্ছেদের উল্লেখ করেন। তাঁর দাবি, এতে আদালতের অবমাননা হয়েছে। পরিবারগুলি খোলা আকাশের তলায় রয়েছে। তা শুনে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আদালত অবমাননার নোটিস দিতে নির্দেশ দেন বিচারপতি বাগ। তিনি জানান, বেলা দুটোয় মামলার শুনানি হবে। আদালত অবমাননার নোটিস পাঠানো হয় স্থানীয় কাউন্সিলর, কেএমডিএ, পুলিশ কমিশনার ও ফুলবাগান থানার ওসি-কে।

আদালতে হাজির হয়ে কেএমডিএ-র তরফে আইনজীবী সত্যজিৎ তালুকদার জানান, রবিবার কেএমডিএ-র সব বিভাগ বন্ধ ছিল। তারা ওই উচ্ছেদ করেনি। বিচারপতি বাগ জানিয়ে দেন, উচ্ছেদে অংশ না নিলেও ওই পরিবারগুলিকে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে কেএমডিএ-কেই।

অতিরিক্ত অ্যাডভোকেট জেনারেল আদালতে জানান, এটা ঠিকই যে, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও ওই পরিবারগুলিকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। তবে আদালত অবমাননার মামলায় তিনি স্থানীয় কাউন্সিলরের দায় নেবেন না। একই সঙ্গে অভ্রতোষ জানান, উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলিকে বেলেঘাটার একটি জায়গায় সাময়িক ভাবে রাখা হয়েছে। সরোবর লাগোয়া কেআইটি-র জমিতে পরিবারগুলিকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরিয়ে নিয়ে গিয়ে আশ্রয় দেওয়া হবে। বিচারপতি তা জেনে স্থানীয় কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করতে বলেন। রাজ্যকে বলেন, আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও কেন উচ্ছেদ করা হল, তা হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন