ডায়ালিসিস করতে গিয়ে তরতাজা এক যুবকের ধমনী ফুটো করে দেওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে গার্ডেনরিচ রেল হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। ধমনী ফুটো হয়ে রক্তপাতেই গত ২২ মার্চ গভীর রাতে অর্জুন সেনগুপ্ত নামে ২৫ বছরের ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ।
তাঁর কাকা দক্ষিণ-পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুকে টুইটও করেছেন তিনি। সেই টুইটের কোনও জবাব এখনও আসেনি। দক্ষিণ-পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্তে ইতিমধ্যে তিন জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে জেনারেল ম্যানেজারের নির্দেশে। রিপোর্টে গাফিলতির প্রমান পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কল্যাণীর বাসিন্দা, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান অর্জুন পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার। গত ২৬ ডিসেম্বর রেলে চাকরি পান তিনি। প্রশিক্ষণে ছিলেন খ়ড়্গপুরে। অর্জুনের কাকা সারথি সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, ২০ মার্চ আচমকাই অর্জুনের হাত-পায়ের জোর কমে যেতে শুরু করে। খড়্গপুর রেল হাসপাতাল থেকে সে দিনই অর্জুনকে গার্ডেনরিচে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
পরের দিন একটি পরীক্ষায় জানা যায়, অর্জুনের স্নায়ু ক্রমশ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ, ২১ মার্চ দুপুরে সেই রিপোর্ট এসে গেলেও পরদিন সকাল পর্যন্ত চিকিৎসা শুরু করা হয়নি। হাসপাতালের এক সিনিয়র চিকিৎসক অর্জুনকে দেখেন ২২ তারিখ সকালে। সারথিবাবুর অভিযোগ, ‘‘ডাক্তারবাবু এসে অর্জুনকে ডায়ালিসিস রুমে নিয়ে যান। আমাদের বলা হয়, অর্জুনের শরীরের প্লাজমাতে যে অ্যান্টিবডি রয়েছে, সেখান থেকেই স্নায়ু অকেজো হয়ে যাচ্ছে। তাই পুরনো প্লাজমা বদলে নতুন প্লাজমা ঢোকাতে হবে ওর শরীরে। ডায়ালিসিস রুমে অর্জুনের বুকে ফুটো করে তিনি একটি শিরার সঙ্গে ক্যাথিটার লাগাতে যান। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি, ওই সময়েই অর্জুনের হৃদ্পিণ্ডের একটি ধমনী ফুটো হয়ে যায়।’’
সারথিবাবুর দাবি অনুযায়ী, সে দিন অর্জুনকে সাত বোতল প্লাজমা দিতে হয়। চিকিৎসক এক সময়ে তাঁদের ডেকে জানান, অর্জুনের
শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ওই অবস্থায় অর্জুনকে খাওয়ানোর জন্য তাঁদের ফলের রসও নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। সারথিবাবুর অভিযোগ, ‘‘ধমনী ফুটো হয়ে ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং তা বন্ধ করতে না পেরে ওই রাতেই অর্জুনকে আর
এন টেগোর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।’’
সারথিবাবুর অভিযোগ, দেরি না করে অর্জুনকে অন্য হাসপাতালে পাঠানো হলে অন্তত তিন ঘণ্টা সময় বেঁচে যেত। ২২ মার্চ রাত একটায় মারা যান অর্জুন। প্রসঙ্গত, অর্জুনের ধমনী থেকে যে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল, তা তাঁকে ছাড়ার সময়ে রেল হাসপাতাল লিখিত রিপোর্টে যেমন রয়েছে, তেমনই আর এন টেগোর হাসপাতালের রিপোর্টেও সেই কথা বলা আছে।