ইস্তাহার

গরিবদের আশ্বাস, বাম নিশানায় লেক মল দুর্নীতিও

এক হাতে তৃণমূল জমানার দুর্নীতির প্রতিবাদ। অন্য হাতে নিজেরা ক্ষমতায় এলে শহরবাসী গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পুর-উন্নয়নের টাকা খরচের প্রতিশ্রুতি। এই জোড়া কৌশল নিয়েই পুরভোটের ময়দানে লড়াই করতে নামল বামফ্রন্ট। কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার নির্বাচনের জন্য বামফ্রন্টের যে ইস্তাহার হয়েছে, সেখানে পুরবোর্ড চালানোয় দুর্নীতি, অসাধু প্রোমোটারদের জমি দেওয়া, গৃহ নির্মাণ আইনকে তোয়াক্কা না করা এ সব বেনিয়মের বিরুদ্ধে প্রচারের কথাই বলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৫ ০২:৫৩
Share:

এক হাতে তৃণমূল জমানার দুর্নীতির প্রতিবাদ। অন্য হাতে নিজেরা ক্ষমতায় এলে শহরবাসী গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য পুর-উন্নয়নের টাকা খরচের প্রতিশ্রুতি। এই জোড়া কৌশল নিয়েই পুরভোটের ময়দানে লড়াই করতে নামল বামফ্রন্ট।

Advertisement

কলকাতা-সহ রাজ্যের ৯২টি পুরসভার নির্বাচনের জন্য বামফ্রন্টের যে ইস্তাহার হয়েছে, সেখানে পুরবোর্ড চালানোয় দুর্নীতি, অসাধু প্রোমোটারদের জমি দেওয়া, গৃহ নির্মাণ আইনকে তোয়াক্কা না করা এ সব বেনিয়মের বিরুদ্ধে প্রচারের কথাই বলা হয়েছে। পাশাপাশিই বলা হয়েছে, বামেরা ক্ষমতা পেলে প্রতিটি পুরসভায় অন্তত ২৫% অর্থ খরচ করতে চাইবে বস্তি ও গরিব শহরবাসীর জন্য। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূল এবং বিজেপি দু’পক্ষের বিরুদ্ধেই তাঁদের লড়াই। ওই দু’দলই শহরের একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চায় এবং দুর্নীতির পথ প্রশস্ত হয় বলে বামেদের অভিযোগ। তাই পুরভোটের লড়াইয়ে বিমানবাবুরা অগ্রাধিকার দিতে চাইছেন শহরের মধ্যে জনতার তুলনায় পিছিয়ে পড়া অংশকে।

আলিমুদ্দিনে সোমবার বামফ্রন্টের নির্বাচনী ইস্তাহার প্রকাশ করে বিমানবাবু জানিয়েছেন, প্রতিটি পুর-এলাকায় নিজস্ব সমস্যা থাকে। তা তুলে ধরে এলাকা ভিত্তিতে আলাদা ‘আবেদন’ প্রকাশ করা হবে। কোনও পুরসভা তো বটেই, প্রয়োজনে কোথাও একটি ওয়ার্ডের জন্যও পৃথক পুস্তিকা হতে পারে। রাজ্য স্তরে বামফ্রন্টই প্রথম পুরভোটের ইস্তাহার প্রকাশ করল। অন্যদের আগে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে দিলেও শাসক দল তৃণমূল অবশ্য এখনও ইস্তাহার প্রকাশ করেনি। তবে তৃণমূল সূত্রের খবর, তাদের ইস্তাহারও প্রকাশের অপেক্ষায়। সেখানে কলকাতা তথা রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়নের কথাই তুলে ধরা হয়েছে বলে শাসক দল সূত্রের খবর। কলকাতার রাস্তাঘাট, পানীয় জলের সরবরাহ, গঙ্গার পাড়ের সৌন্দর্যায়ন, নিকাশি এবং জঞ্জালমুক্ত শহর প্রভৃতি বিষয়কে ইস্তাহারে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

যে ৯২টি পুরসভায় ভোট হচ্ছে, তার অধিকাংশই আছে তৃণমূলের হাতে। এই পুরভোটে বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসার জন্য জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। এমতাবস্থায় বামেদের লক্ষ্য, তৃণমূলের প্রধান বিরোধী হিসাবে নিজেদের তুলে ধরা। সে কথা মাথায় রেখেই ইস্তাহারে তৃণমূলের পাশাপাশি দিল্লির মোদী সরকারের কড়া সমালোচনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিজেপি সরকার পুর পরিষেবা ও পরিকাঠামোর কাজ বেসরকারি হাতে তুলে দিতে চায়। সমস্ত পুর পরিষেবার উপরে চার্জ বসানোই তাদের লক্ষ্য। আর তৃণমূলের বিরুদ্ধে বলা হয়েছে, কলকাতা পুরসভায় জনগণের অর্থ লুঠ করে মেয়র, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরেরা কোটি টাকার সম্পত্তি করছেন!

ইস্তাহারে বলা হয়েছে, শহরের মূল্যবান জমি বা বস্তির জমি অসাধু প্রোমোটারদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য তরুণ প্রজন্মকে অর্থের লোভ দেখানো হচ্ছে। তৃণমূলের নেতারা তাঁদের দিয়েই নানা বেআইনি ও অসাধু কাজ করাচ্ছেন। তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডে বহু ক্ষেত্রে টেন্ডার না ডেকেই লক্ষ লক্ষ টাকার কাজের বরাত দেওয়া হচ্ছে বলেও ইস্তাহারে অভিযোগ করা হয়েছে। ইস্তাহার অনুযায়ী, কলকাতার ক্ষেত্রে ত্রিফলা আলো, লেক মল, টেন্ডার কেলেঙ্কারিকে তুলে ধরা হবে। আবার সিউড়ি পুরসভার ক্ষেত্রে তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষের তুলে ধরা পানীয় জল নিয়ে দুর্নীতির কথাও ইস্তাহারে বলা হয়েছে।

পুরভোটের দিকে তাকিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই হকারদের পক্ষ নিয়েছেন। কলকাতা ও বিধাননগরের বাসিন্দাদের দাবি মেনে তাঁদের বাসস্থানের পাট্টা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন। পক্ষান্তরে বাম ইস্তাহারে বলা হয়েছে, যে সব গরিব পরিবার দু’দশকের বেশি সরকারি খাস বা ‘অপ্রয়োজনীয়’ জমিতে বাস করছেন, তাঁদের ১ টাকার বিনিময়ে ৯৯ বছরের লিজ বা পাট্টার ব্যবস্থা করা হবে। এমনকী, রেল বা কেন্দ্রের জমিতে যে সব গরিব মানুষ ২০ বছরের বেশি বসবাস করছেন, তাঁদেরও ৯৯ বছরের জন্য বাস্তু জমির পাট্টা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানো হবে। হকারদের জন্যও লাইসেন্স প্রদান, পৃথক বাজার নির্মাণ, হকার কেন্দ্রে পানীয় জল, বিদ্যুৎ, শৌচালয় স্থাপন ইত্যাদির জন্য রাজ্যকে অর্থ সাহায্য করতে হবে বলে দাবি করা হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন