বেপরোয়া গাড়ি চালালে তিন মাসের জন্য খারিজ লাইসেন্স

মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে শুধুমাত্র জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যেতেন গাড়ির চালক। বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা চালকের আসনে বসে সিট বেল্ট না বাঁধার মতো অপরাধেও শুধুমাত্র জরিমানা দিলেই চলত।

Advertisement

শিবাজী দে সরকার

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৬ ০০:১২
Share:

মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে শুধুমাত্র জরিমানা দিয়েই পার পেয়ে যেতেন গাড়ির চালক। বেপরোয়া গাড়ি চালানো বা চালকের আসনে বসে সিট বেল্ট না বাঁধার মতো অপরাধেও শুধুমাত্র জরিমানা দিলেই চলত। কিন্তু এ বার থেকে এ ধরনের অপরাধে সুপ্রিম কোর্টের হাই পাওয়ার কমিটির সুপারিশ মতো তিন মাসের জন্য চালকের লাইসেন্স খারিজ করা হবে বলে লালবাজার সূত্রে খবর। শুধু তাই নয়, ওই সময়সীমার মধ্যে স্টিয়ারিংয়ে বসতে পারবেন না অভিযুক্ত ওই চালক। দিন নির্দিষ্ট না হলেও চলতি মাস থেকেই বেপরোয়া চালকদের জন্য এই নতুন নিয়ম চালু হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন পুলিশকর্তারা। রাজ্য সরকার ওই সংক্রান্ত নোটিফিকেশন জারি করলেই নতুন আইন কার্যকর করা হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

Advertisement

লালবাজার জানিয়েছে, পথ নিরাপত্তার জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কে এস রাধাকৃষ্ণণের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটি পথ দুর্ঘটনা ঠেকাতে চারটি নির্দেশ জারি করে, যা কলকাতা পুলিশ-সহ সব রাজ্যের পুলিশের কাছে পাঠানো হয়। তাতে বলা হয়েছে, মদ্যপান করে এবং দ্রুত ও বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানো, ট্র্যাফিক সিগন্যাল না মানা, অতিরিক্ত যাত্রী বা মাল বহন করা ও গাড়ি চালানোর সময়ে মোবাইল ব্যবহারের মতো অপরাধের ক্ষেত্রের চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করে তা তিন মাসের জন্য খারিজ করা হবে।

পুলিশ সূত্রে খবর, সুপ্রিম কোর্টের হাই পাওয়ার কমিটির এই নির্দেশ কী ভাবে কার্যকর করা যায়, তা নিয়ে শনিবার বৈঠক করেন কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। লালবাজারের ওই বৈঠকে ট্র্যাফিক গার্ডের ওসিরা ছা়ড়াও ছিলেন ট্র্যাফিক পুলিশের কর্তারা। সেখানে কলকাতা পুলিশের কর্তারা জানান, এ বার থেকে ট্র্যাফিক আইন অমান্য করলে রাস্তায় থাকা পুলিশ অফিসার প্রথমে চালকের লাইসেন্স বাজেয়াপ্ত করবেন এবং তা পাঠিয়ে দেবেন ট্র্যাফিক গার্ডে। সেখানে কলকাতা ট্র্যাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার পদ মর্যাদার (এসি) অফিসার আত্মপক্ষ সর্মথনের জন্য ওই চালককে ডেকে পাঠাবেন। চালকের বক্তব্যে সন্তুষ্ট না হলে তার লাইসেন্স তিন মাসের জন্য খারিজ করা হবে। ওই সময়সীমার মধ্যে ওই চালক কোন গাড়ি চালালে তা বেআইনি হবে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।

Advertisement

এ দিনের বৈঠকে আরও বলা হয়েছে, কোনও গাড়ি বা মোটরবাইক চালকের আইন ভাঙার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখবেন ট্র্যাফিকের আধিকারিকেরা। এতে রাস্তায় থাকা পুলিশ অফিসারদের কোনও ভুলভ্রান্তি হলে তা-ও ধরা পড়বে বলে লালবাজারের কর্তাদের দাবি।

ট্র্যাফিক পুলিশ সূত্রে খবর, এতদিন এ ধরনের অপরাধের ক্ষেত্রে চালকদের শুধুমাত্র জরিমানা করেই ছেড়ে দেওয়া হত। পুলিশের একাংশের দাবি, খাতায় কলমে আইন থাকলেও ভিভিআইপিদের গাড়িতে সিট বেল্ট না বাঁধা আইন অমান্যকারী চালকদের বিরুদ্ধে কার্যত কোনও ব্যবস্থা নিতেন না ট্র্যাফিকের অফিসারেরা। এমনকী জীবনহানির মতো কোনও ঘটনায় চালকের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলেও তা ছিল হাতে গোনা। আর এই সুযোগেই চালকেরা মত্ত অবস্থায় বেপরোয়া গাড়ি বা মোটরবাইক চালিয়ে পার পেয়ে যেতেন। তবে তিন বার একই অপরাধ করলে চালকের লাইসেন্স পাঞ্চ করে তা বাতিলের জন্য সুপারিশ করা হত। কিন্তু এ বার নতুন নিয়মে বেপরোয়া কিংবা মত্ত অবস্থায় গাড়ির স্টিয়ারিং ধরলে সরাসরি লাইসেন্স খারিজ হয়ে যাবে তিন মাসের জন্য।

রাস্তায় দুর্ঘটনা কমাতে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত ছ’মাস ধরে সামলে চালান-জীবন বাঁচান (সেফ ড্রাইভ-সেভ লাইফ) প্রচার শুরু হয়েছে রাজ্য জুড়ে। তাতে দুর্ঘটনা কিছুটা কমেছিল বলে দাবিও করেছিলেন রাজ্য পুলিশের ডিজি। কিন্তু তার কিছুদিনের মধ্যেই সিঙ্গুরের কাছে গুরুতর দুর্ঘটনার কবলে পড়েন তৃণমূল সাংসদ তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে শহরের রাস্তায় মত্ত চালকদের বেপরোয়া গাড়ি বা মোটরবাইকের শিকার হতে হয়েছে পথচলতি মানুষকে। তাই পথ নিরাপত্তায় এ বার আরও কড়া দাওয়াই খোঁজ করছিলেন লালবাজারের কর্তারা। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা জানান, ‘‘বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে সুপ্রিম কোর্টের হাই পাওয়ার কমিটির ওই নির্দেশ মেনে চলা ছাড়া আমাদের আর কোনও পথ নেই। তাই এ দিনের বৈঠকে সেটি কার্যকর করার কথা বলা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন